স্বৈরাচারের দোসর ও গাজীপুরের পলাতক আওয়ামী লীগ নেতা আ ক ম মোজাম্মেল হকের বাড়িতে মারধরে শিক্ষার্থীদের আহত হওয়ার ঘটনার প্রতিবাদে সমাবেশ করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। সমাবেশ থেকে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করে দলটির নেতাদের সম্পত্তি বাতিল করার দাবি জানান বক্তারা।
আজ শনিবার দুপুরে গাজীপুর সদর উপজেলার রাজবাড়ী মাঠে এই প্রতিবাদ সমাবেশ হয়। সেখানে বক্তব্য দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সদস্যসচিব আরিফ সোহেল, জাতীয় নাগরিক কমিটির সংগঠক আলী নাসের খানসহ স্থানীয় ছাত্রনেতারা।
সমাবেশে আরিফ সোহেল বলেন, ‘আমাদের ভাইদের ওপরে এখনো আক্রমণ চলছে। বিভিন্ন জায়গায় আওয়ামী ফ্যাসিবাদী গোষ্ঠী ঘরবাড়ি, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে আক্রমণ করে আমাদের ওপর দায় চাপানোর চেষ্টা করছে। এ ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। সুশৃঙ্খলভাবে গাজীপুরের মাটি ফ্যাসিবাদমুক্ত করতে হবে।
জাতীয় নাগরিক কমিটির সংগঠক আলী নাসের খান বলেন, ‘গত রাতে গাজীপুরে যারা শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করেছে তাদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও বিচার করতে হবে। আওয়ামী ফ্যাসিস্টদের নিবন্ধন বাতিল করতে হবে। (নেতাদের) সম্পত্তি জব্দ করতে হবে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় ব্যর্থ কর্মকর্তাদের অপসারণ করতে হবে।
’সভায় গাজীপুর মহানগর ছাত্রশিবিরের প্রশিক্ষণবিষয়ক সম্পাদক হায়দার আলী বলেন, ‘লগি-বৈঠার তাণ্ডবের মাধ্যমে আওয়ামী ফ্যাসিবাদের যে উত্থান হয়েছিল, জুলাই বিপ্লবের মাধ্যমে সেই ফ্যাসিবাদের পতন হয়েছে ভেবেছিলাম। কিন্তু ফ্যাসিবাদের দোসররা বিভিন্ন জায়গায় আমাদের ভাইদের ওপর আক্রমণ করছে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আমাদের আহ্বান, অনতিবিলম্বে ফ্যাসিবাদের দোসরদের চিহ্নিত করে তাদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। আওয়ামী লীগ মানবতাবিরোধী হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে। আওয়ামী লীগকে অবিলম্বে নিষিদ্ধ করতে হবে।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, ‘হামলাকারীদের বিচার না হলে গাজীপুরের সব প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হবে। রাজপথ, নৌপথ, শিল্পপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হবে। আমরা গাজীপুরে ফ্যাসিবাদের দোসরদের নিশ্চিহ্ন করে থেকে ঘরে ফিরব। ধানমণ্ডিতে যে অবস্থা হয়েছে, আওয়ামী লীগের সব এমপি-মন্ত্রীর বাড়ির সে রকম অবস্থা হবে। আমারা সোনার বাংলা থেকে আওয়ামী লীগের সব দোসরের শিকড় উপড়ে ফেলব।’
জানা যায়,
গতকাল রাত ৯টার দিকে গাজীপুরে ধীরাশ্রম দাক্ষিণখান এলাকায় পলাতক আওয়ামী লীগ নেতা আ ক ম মোজাম্মেল হকের পৈতৃক বাড়ি ভাঙচুর করে বিক্ষুব্ধ জনতা। এ সময় মসজিদের মাইকে ডাকাত পড়েছে বলে ঘোষণা দেওয়া হয়। মাইকিং শুনে বাড়িটি ঘিরে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা জড়ো হন। তাদের অনেকের হাতে রামদাসহ বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র
ঘটনার ব্যাপারে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের গাজীপুরের নেতা মো. আবদুল্লাহ বলেন, ‘শুক্রবার রাতে আমাদের কাছে খবর আসে, ধীরাশ্রম এলাকায় সাবেক মন্ত্রীর বাড়িতে হামলা ও লুটপাট হচ্ছে। হামলাকারীদের প্রতিহত করতে শিক্ষার্থীরা রওনা হন। দ্রুত ১৫-১৬ জন ঘটনাস্থলে চলে যান। লুটপাটে বাধা দিলে পেছন থেকে হুট করে অনেক মানুষ জড়ো হয়ে যায়। তাদের হাতে রামদাসহ বিভিন্ন অস্ত্র ছিল। অন্য শিক্ষার্থীরা আসার আগেই ওই ১৫ জনকে ছাদে নিয়ে বেধড়ক পিটিয়ে ও কুপিয়ে জখম করা হয়। পরে অন্যান্য শিক্ষার্থী ঘটনাস্থলে গেলে তাদেরও পেটানো হয়।
এই ঘটনার প্রতিবাদে আজ শনিবার সকাল সাড়ে ১১টা থেকে জেলা শহরের রাজবাড়ী মাঠে সমাবেশ করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। দুপুর ১টার দিকে সমাবেশ থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে তারা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের ফটকের সামনে গিয়ে অবস্থান নেয়। এ সময় ওই পথ দিয়ে চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। দুপুর আড়াইটায় শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত দুই শতাধিক মানুষ সেখানে অবস্থান করছিল।