টাঙ্গাইলে সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট সংসদ (এসডিএস) এর জমিতে অবৈধভাবে মাটি কাটার অভিযোগে জেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোজাম্মেল হকের ভেকু পুড়িয়ে দিয়েছে কে বা কারা। মঙ্গলবার রাতে টাঙ্গাইল সদর উপজেলার চারাবাড়ি এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। অভিযোগ রয়েছে জাপা নেতা মোজাম্মেল হক দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে মাটি কেটে বিক্রি করে আসছিলেন। প্রতিবেদন প্রকাশ করা পর্যন্ত এই ঘটনায় টাঙ্গাইল থানায় কোন অভিযোগ দেয়া হয় নি। এতো দামী একটি যন্ত্র পুড়িয়ে দেয়া হলেও কেন থানায় অভিযোগ হয়নি তা নিয়ে তৈরি হয়েছে এক ধুম্রজাল।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ভেকু মোজাম্মেল হকের দখলীকৃত (এসডিএসের দাবি) জমিতে রাখা ক্যাট কোম্পানির ৭ পয়েন্ট ভেকু মেশিন (মাটি কাটার যন্ত্র) আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। তার ঠিক দক্ষিণ পাশেই প্রায় ২০ ফুট গভীর করে দুই শতাধিক শতাংশ জমি থেকে মাটি কাটা হয়েছে গত দুই একদিনের মধ্যে। কিন্তু মোজাম্মেল হক ও ভেকুর মালিক বিষয়টি অস্বীকার করেন।
স্থানীয়রা জানায়, প্রতিদিন সন্ধ্যা থেকে ভোর রাত পর্যন্ত মাটি কেটে বিক্রি করা হয়। তবে দিনে মাটি কাটা হয় না। এখানে অনুমতি ছাড়া কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হতো না।
ভেকুর মালিক বাহার উদ্দিন বলেন, আমি ভেকুটি এখানে এনে রেখেছি। মাটি কাটার উদ্দেশ্যে এখানে আনা হয়নি। কয়দিন আগে আনা হয়েছে, জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান। ভেকুটি পুড়িয়ে দেয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, কে বা কারা ভেকুতে আগুন দিয়েছে, তা জানি না। থানায় অভিযোগ করেছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখনো পুলিশকে অবহিত করেন নাই।
কে বা কারা ভেকুতে আগুন দিয়েছে জানতে চাইলে মোজাম্মেল হক এই বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি। আগুনে পুড়িয়ে দেয়া হলেও তারা থানায় কেন অভিযোগ করেন নি, জানতে চাইলে তিনি কোন উত্তর দেননি।
টাঙ্গাইল সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তানভীর আহম্মেদ বলেন, এবিষয়ে কোন অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
ঘটনাক্রম –
উল্লেখ্য, ২০১৫ সালে নুরুল ইসলাম ইসলামিক রিসার্স ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক দাবি করে মোজাম্মেল হকের কাছে জমি বিক্রি করেন। মোজাম্মেল সাইনবোর্ডে উল্লেখ করেছেন, তিনি ক্রয় সূত্রে ৮০০ শতাংশ জমির মালিক। তবে তিনি এই জমি ভূয়া দলিল তৈরি করে নিজের নামে করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এর আগে এসডিএস-এর জমিতে প্রশাসন একাধিকবার অভিযান চালায়।
এ নিয়ে ২০২৩ সালের ১২ মার্চ এসডিএসের চেয়ারম্যান ইসমাইল হোসেন সিরাজী বাদি হয়ে টাঙ্গাইলের যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ ১ম আদালতে মামলা দায়ের করেন। মামলায় মোজাম্মেল হক, সখীপুরের কচুয়া রোড আড়াইপাড়া গ্রামের আনছার আলী ছেলে নুরুল ইসলাম, সদর উপজেলার ইসলামপুর গ্রামের ইমান আলীর ছেলে আকবর আলী, মাগুরাটা গ্রামের মৃত আইন উদ্দিনের ছেলে হাবিবুর রহমান, স্বদেশ রোড এলাকার সুরুজ্জামানের ছেলে জাকির হোসেনকে বিবাদি করা হয়। একই দিন ইসমাইল হোসেন সিরাজী বাদি হয়ে আরেকটি একটি মামলা করেন। মামলায় মোজাম্মেল হক, সখীপুরের কচুয়া রোড আড়াইপাড়া গ্রামের আনছার আলী ছেলে নুরুল ইসলাম, শহরের পাতুলীপাড়া এলাকার মৃত কলিল উদ্দিন আহম্মেদের ছেলে ওস্তাগীর হোসেন, একই এলাকার মৃত আফতাব উদ্দিনের ছেলে মোকছেদ আলী ও স্বদেশ রোড এলাকার সুরুজ্জামানের ছেলে জাকির হোসেনকে বিবাদি করা হয়।