দেশে দ্রুত বাড়ছে প্লাস্টিকের ব্যবহার, আর এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে পরিবেশ দূষণের মাত্রাও। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্লাস্টিকের একবার ব্যবহারযোগ্য পণ্য বন্ধ করা কিংবা পুনর্ব্যবহারের অভ্যাস গড়তে হবে এখনই। এ অবস্থায় প্লাস্টিক দূষণ রোধে কঠোর নীতিমালা প্রণয়নের পথে হাঁটছে বাংলাদেশ সরকার।
খাবার প্যাকেট, পানির বোতল থেকে শুরু করে দৈনন্দিন জীবনের নানা পণ্যে একবার ব্যবহৃত প্লাস্টিকের ব্যবহার বাড়ছে উদ্বেগজনক হারে। অথচ পুনঃব্যবহার বা রিসাইক্লিং হচ্ছে মাত্র ৪০ শতাংশ, বাকিটা মিশে যাচ্ছে পরিবেশে। ফলে এর ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে শুধু পরিবেশ নয়, মানুষের স্বাস্থ্যে, খাদ্য নিরাপত্তায় এবং জলবায়ু পরিবর্তনেও।
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, দেশে বছরে প্রায় সাড়ে আট লাখ টন প্লাস্টিক বর্জ্য তৈরি হয়। বিশ্বব্যাংকের হিসাব বলছে, ২০০৫ সালে নগরাঞ্চলে মাথাপিছু প্লাস্টিক ব্যবহার ছিল ৩ কেজি, যা ২০ বছরে বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৯ কেজিতে। রাজধানী ঢাকায় এই চিত্র আরও ভয়াবহ, যেখানে একজন মানুষ বছরে গড়ে ২৪ কেজি প্লাস্টিক ব্যবহার করছে।
বিপদ বাড়াচ্ছে নিষিদ্ধ পলিথিনের ব্যবহার। যদিও পলিথিন নিষিদ্ধ, তারপরও দেশের প্রায় ৬১ শতাংশ মানুষ এখনো তা ব্যবহার করছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নিষেধাজ্ঞা কার্যকরের অভাব, সচেতনতার ঘাটতি ও সহজলভ্যতার কারণে এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।
সমাজবিজ্ঞানী ড. শাহরিয়ার হোসেন বলেন, “ঢাকার মোট বর্জ্যের ২০ শতাংশই প্লাস্টিক, যার ৮০ শতাংশই একবার ব্যবহৃত। বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় জনগণকে সম্পৃক্ত না করলে সমস্যার সমাধান হবে না।”
প্রাণিবিজ্ঞানী ড. গাউসিয়া ওয়াহিদুন্নেসা চৌধুরী মনে করেন, “শুধু আইন করলেই হবে না, সচেতনতা বাড়াতে হবে এবং প্লাস্টিকের বিকল্প পণ্যের প্রসার ঘটাতে হবে।”
এদিকে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান জানিয়েছেন, “প্লাস্টিক দূষণ রোধে কঠোর নীতিমালা আসছে। একবার ব্যবহারযোগ্য পণ্য নিরুৎসাহিত করা হবে, বর্জ্য ব্যবস্থাপনাতেও থাকবে কঠোর নির্দেশনা।” তিনি আরও জানান, দূষণ ঠেকাতে অভিযান অব্যাহত থাকবে।