নিজস্ব প্রতিবেদক : টাঙ্গাইল পুলিশ লাইনস আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেনীর মেধাবী ছাত্রী নৈঋতা হালদার এবার স্কাউট প্রতিযোগিতার সর্বোচ্চ পদক প্রেসিডেন্ট’স স্কাউট অ্যাওয়ার্ড পেলেন।
এটা নিয়ে মাত্র ১০ বছরের শিক্ষা জীবনে নৈঋতা অর্জন করলেন ১১টি জাতীয় পুরষ্কার।
বাবা অরিন্দম হালদার ও মাতা চিনু রানী বিশ্বাসের একমাত্র মেয়ে নৈঋতার জন্ম ২০০৫ সালের ৪ মে মির্জাপুরের বহনতলী গ্রামে মামার বাড়িতে।
পেত্রিক নিবাস মাদারিপুরে। মা বঙ্গের আলীগড় খ্যাত সরকারি সা’দত বিশ^বিদ্যালয় কলেজের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষিকা।
মায়ের চাকরির সুবাদে নৈঋতার বেড়ে ওঠা টাঙ্গাইলেই।
নৈঋতার অর্জন –
নৈঋতা হালদার চতুর্থ শ্রেণীতে পড়াকালীন ২০১৪ সালে অভিনয়ে শ্রেষ্ঠ, অষ্টম শ্রেণীতে ২০১৮ সালে শ্রেষ্ঠ এবং নবম শ্রেণীতে ২০১৯ সালে ২য় স্থান অধিকার করেন।
২০১৫ সালে পঞ্চম শ্রেণীতে পড়াকালীন উপস্থিত বক্তৃতা এবং কবিতা আবৃতিতে ২য় হন।
২০১৯ সালে নবম শ্রেণীতে পড়াকালীন লোকনৃত্যে ৩য় ও দশম শ্রেণীতে ২০২০ সালে স্কাউটের প্রতিভা অণ্বেষনে উচ্চাঙ্গ নৃত্যে ১ম হয়েছেন।
স্কাউটিং এ ২০১৫ সালে পঞ্চম শ্রেণীতে পড়াকালীন শাপলা কাব , অষ্টম শ্রেণীতে ২০১৮ সালে সমাজ উন্নয়ন এবং দশম শ্রেণীতে প্রেসিডেন্ট’স অ্যাওয়ার্ড-২০১৯ পেয়েছেন।
নবম শ্রেনীতে পড়াকালীন ২০১৯ সালে দেশের শ্রেষ্ঠ শিক্ষার্থীর মুকুট অর্জন করেন।
বিষ্ময়কর বিষয় ২০১৯ সালে একবর্ষে জাতীয়ভাবে ৩টি পদে পুরষ্কার পাওয়া দেশের একমাত্র শিক্ষার্থী হলো নৈঋতা হালদার।
ফ্রান্সের প্যারিসে আন্তর্জাতিক ডিজিটাল আর্ট প্রতিযোগিতায় তার আর্ট মনোনিত হয়েছেন।
২০১৫ সালে কুর্নি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে সমাপনী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে মির্জাপুর উপজেলায় প্রথম স্থান অধিকার করে এবং ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পান।
এরপর টাঙ্গাইল পুলিশ লাইনস আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০১৮ সালে জেএসসি পরীক্ষায় গোল্ডেন জিপিএ-৫ এবং ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি প্রাপ্ত হন।
প্রথম থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত কোন ক্লাসেই ২য় হননি।
২০১৯ সালের সৃজনশীল মেধা অন্বেশন প্রতিযোগিতায় ভাষা ও সাহিত্যে টাঙ্গাইল জেলায় প্রথম স্থান অধিকার করেন।
এছাড়া জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে পেয়েছেন অসংখ্য পদক-পুরষ্কার।
নৈঋতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং শিক্ষামন্ত্রীর হাত থেকে ৪ বার করে পুরষ্কার গ্রহণ করেছেন।
সরকারি শিক্ষা সফরে গিয়েছেন বিদেশ।
ধরাবাঁধা কোন নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন একবারেই অপছন্দ নৈঋতার।
কিন্তু সময়ের মূল্য অক্ষরে অক্ষরে দিতে অভ্যস্ত।
বিদ্যালয়ের পড়া শেষ না করে বসে পরলো ছবি আঁকতে, আবার ছবি আকাঁ শেষ না করেই মগ্ন হয়ে যায় গান-নৃত্যে।
এই বয়সে বাংলা ইংরেজীর পাশাপাশি সে আয়ত্ব করেছে হিন্দি, উর্দু আর জাপানী ভাষা।
বই পড়ে কিছুটা কোরিয়ান ভাষাও বলতে পারে। অবসরে কবিতা গল্প লিখতে পছন্দ।
২০১৯ সালে ফেব্রুয়ারিতে নৈঋতার লেখা “ময়না আমার বাবুই সোনা” নামের একটি গল্পের বই প্রকাশিত হয়েছেন।
টাঙ্গাইলের জেলা শিল্পকলা একাডেমী, সিডিসি ক্লাব এবং জেলা শিশু নাট্য দলের তত্ত্ববধায়নে নিয়মিত গান, নাচ ও অভিনয় চর্চা করে থাকেন।
নৈঋতার সম্পর্কে শিক্ষক ও অভিভাবকদের কথা –
পুলিশ লাইনস আর্দশ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ আব্দুল কাদের বলেন, নৈঋতার মতো অল সাইডে এতা মেধাবী শিক্ষার্থী আমাদের স্কুলে কখনও আসে নি। আমার জানামতে এতোগুলো ইভেন্টে জাতীয় পুরষ্কার পাওয়া দেশের একমাত্র ছাত্রী ওই।
বাংলাদেশ স্কাউট টাঙ্গাইল জেলার কমিশনার ওয়াজেদ আলী খানশুর (লিডার ট্রেইনার) বলেন, নৈঋতা শব্দের অর্থ মহীয়সী নারী।
মেধার সাথে অক্লান্ত পরিশ্রম এবং রত্নগর্ভা মায়ের প্রচেষ্টায় সেই পথেই এগিয়ে যাচ্ছে মেয়েটি। ওর সাফল্যে স্কাউটসহ আমরা জেলাবাসী অত্যন্ত খুশি।
নৈঋতার গর্বিত মা চিনু রানী বিশ্বাস আবেগময় কন্ঠে বলেন, “নৈঋতা দেশ জাতির সেবা করবে, এটাই মায়ের চাওয়া। আর সেজন্য সবার আশির্বাদ চেয়েছেন”।
টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার ও পুলিশ লাইনস আর্দশ উচ্চ বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি সঞ্জিত কুমার রায় বলেন, নৈঋতা দেশের সম্পদ।
ওর প্রতিভা বিকাশের সুযোগ ও পরিবেশ আমাদের তৈরি করে দিতে হবে। বড় হলে দেশের জন্যে মেধাকে কাজে লাগাতে হবে।
টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক আতাউল গণি বলেন, দেশের অনেক নামিদামি প্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীদের পেছনে ফেলে টাঙ্গাইলের মেয়ের এ অর্জন অত্যন্ত গৌরবের বিষয়। পুরো টাঙ্গাইলবাসির মুখ উজ্জ্বল করেছে।
এতে অন্য ছাত্রছাত্রীরা অনুপ্রাণিত হবে। আমরা নৈঋতা হালদারকে আরো উৎসাহ দিবো।
আমার বিশ্বাস মেধা ও কর্ম দ্বারা একদিন দেশের সীমানা ছাড়িয়ে নৈঋতার সুনাম সারা বিশ্বে প্রতিষ্ঠিত হবে।
কৃতি ছাত্রী নৈঋতা হালদার বলেন, এই প্রাপ্তিতে আমি খুবই খুশি। আর সকল কৃতিত্ব আমার মায়ের। যিনি আমাকে বন্ধুর মতো সব কিছুতেই আগলে রাখেন।
নিজের স্বপ্ন নিয়ে নৈঋতা দৃঢ় কন্ঠে বলেন, আমি বড় হয়ে পররাষ্ট্র সচিব হতে চাই। কারণ আমার প্রিয় বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ।
বিশ্বের সাথে আমাদের কুটনৈতিক সম্পর্ক যত শক্তিশালী এবং পারস্পারিক বিনিময় তরান্বিত হবে, ততই দেশের উন্নতি হবে।
আমি সেই কাজে অংশ নিতে চাই। বড় হয়ে আমি অসহায় মানুষের জন্যে কাজ করবো।
অন্য ছাত্রছাত্রীদের উদেশ্যে নৈঋতা বলেন, আমি কখনও সময় অপচয় করি না।
প্রকৃতিকে ভালোবাসি, প্রকৃতিকে নিয়ে লিখি। এতে মন উদার হয়। সম্পাদনা – অলক কুমার