ইরান ও ইসরায়েলের চলমান সংঘাতের কারণে মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা তীব্র হচ্ছে, যা ইতোমধ্যে বিশ্বব্যাপী জ্বালানি বাজারে প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে। ইরান হরমুজ প্রণালি বন্ধের হুমকি দিলেছে, যা তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) এবং জ্বালানি তেলের গুরুত্বপূর্ণ সরবরাহ রুট হিসেবে বিশ্বজুড়ে পরিচিত। এই প্রণালি বন্ধ হলে সরাসরি বিপর্যয় ঘটবে বিশ্বজ্বালানি সরবরাহ ব্যবস্থায়, এবং বাংলাদেশও এতে রেহাই পাবে না।
বাংলাদেশের এলএনজি আমদানির প্রধান উৎস কাতার ও ওমান, যাদের অধিকাংশ পণ্য হরমুজ প্রণালির মধ্য দিয়েই আসে। এই গুরুত্বপূর্ণ রুট বন্ধ হলে দেশের গ্যাস সরবরাহে বড় ধরনের বিঘ্ন ঘটার আশঙ্কা করছে বিশেষজ্ঞরা। পেট্রোবাংলার সঙ্গে কাতারের প্রতিষ্ঠানের ১৫ বছর এবং ওমানের প্রতিষ্ঠানের ১০ বছর মেয়াদি চুক্তি রয়েছে।
চলতি অর্থবছরে কাতার থেকে ৪০টি এলএনজি কার্গো আসার কথা থাকলেও, এপ্রিল পর্যন্ত ইতোমধ্যে ৩৪টি কার্গো দেশে পৌঁছেছে। তবে সম্ভাব্য সংকট ভবিষ্যতে সরবরাহ ব্যবস্থায় অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করতে পারে।
জ্বালানি বিভাগের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এখনও সরবরাহে কোনো সমস্যা হয়নি এবং কাতারের সরবরাহকারীদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ বজায় রাখা হচ্ছে। তবে পরিস্থিতি খারাপ হলে বিকল্প পরিকল্পনা গ্রহণের প্রয়োজন হবে।
বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) নির্বাহী সভাপতি ফজলে শামীম এহসান বলেন, “হরমুজ প্রণালি বন্ধ হলে কাতার থেকে এলএনজি আমদানিতে ঝুঁকি তৈরি হবে। বিপজ্জনক রুটের কারণে জাহাজ পরিচালকদের দ্বিধা হবে এবং বীমা খরচ বেড়ে এলএনজির দাম আকাশছোঁয়া হবে।”
ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের প্রভাবে আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম একদিনে প্রায় ১২ শতাংশ বেড়ে ব্যারেলপ্রতি প্রায় ৭৮.৫ ডলারে পৌঁছেছে। দীর্ঘস্থায়ী উত্তেজনা থাকলে দাম ১০০ থেকে ১৩০ ডলারের মধ্যে পৌঁছাতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন।
বাংলাদেশে গ্যাসের বড় অংশ বিদ্যুৎ উৎপাদন ও শিল্পখাতে ব্যবহৃত হয়, বিশেষত তৈরি পোশাক শিল্প এলএনজিনির্ভর। এলএনজির আন্তর্জাতিক দাম বাড়লে বাংলাদেশের উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি পাবে, যা পণ্যের দাম বৃদ্ধি এবং বিদেশি ক্রেতাদের অর্ডার কমানোর কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে, যা অর্থনীতির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।
আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর তথ্য অনুযায়ী, কাতার, সৌদি আরব, আমিরাতসহ পারস্য উপসাগরীয় দেশগুলোর জ্বালানি রপ্তানির প্রধান পথ হরমুজ প্রণালি। প্রতিদিন প্রায় ২ কোটি ব্যারেল অপরিশোধিত তেল এবং প্রচুর পরিমাণ এলএনজি এই রুটে প্রবাহিত হয়। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো—যেমন ভারত, চীন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া এবং বাংলাদেশ—এই রুটের ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল।
এই অবস্থায়, হরমুজ প্রণালির সম্ভাব্য সংকট আন্তর্জাতিক জ্বালানি বাজার এবং বাংলাদেশের অর্থনীতির ওপর গভীর প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।