টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে আবারো মাদক অভিযানের নামে নগদ টাকা লুটের অভিযোগ উঠেছে টাঙ্গাইল জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (ডিএনসি) এর কয়েকজন সদস্যদের বিরুদ্ধে। গত বুধবার দুপুরে উপজেলার বাহাদিপুর গ্রামের সাবেক কাউন্সিলর সালেহার বাড়িতে অভিযান চালায় টাঙ্গাইল জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের বিভাগীয় উপপরিদর্শক মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান, সহকারী উপপরিদর্শক মোঃ জিয়াউর রহমান, শামীম আল আজাদ, সিপাই প্রবাল চন্দ্র সরকার, সিপাহী মোঃ আল মামুন সহ অন্যান্য সদস্যরা। সরেজমিনে জানা যায়, টাঙ্গাইল জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সদস্যরা সাবেক কাউন্সিলর সালেহার বাড়িতে সকাল বেলা মাদক উদ্ধার অভিযান চালায়। পরে প্রায় ৩ ঘন্টার অধিক সময় নাটকীয় ভাবে অভিযান চালিয়ে ১০ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার করে তারা। এসময় ওই বাড়িতে থাকা নগদ প্রায় ৮ লাখ ৪৬ হাজার টাকাও নিয়ে যায় তারা দাবি পরিবারের। পরে দুপুরে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আবু আব্দুল্লাহ খানের সাথে জব্দকৃত মাদক নিয়ে ফটোসেশান করেন টাঙ্গাইল জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সদস্যরা।
এরপর ভূঞাপুর থানায় মাদক কারবারি রনিকে পলাতক দেখিয়ে ১০ বোতল ফেনসিডিল দিয়ে ১টি মামলা করেন টাঙ্গাইল জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (ডিএসই)। তবে এলাকাবাসীর দাবি রনিকে বাড়িতে পেয়েও ছেড়ে দিয়েছেন তারা। এছাড়াও ডিএনসির দায়ের করা মামলার এজহারে দেখা যায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইউএনও এর উপস্থিতিতে মাদক উদ্ধার করা হয়েছে বলা হয়।
তবে ইউএনও বলছেন ডিএনসি সদস্যরাই মাদক উদ্ধার করে এবং পরে তাকে অবগত করে উপজেলা পরিষদ চত্ত্বরে ফটোসেশান করে নিয়ে যায় তারা। অপরদিকে ভুক্তভোগী সালেহা বেগম ওই দিন সন্ধায় ভূঞাপুর থানায় একটি লিখিত অভিযোগে বলেন, টাঙ্গাইল ডিএনসির লোকজন বুধবার তার বাড়িতে ঢুকে ঘর তল্লাশীর নামে সকল আলমারি, সুকেশ ও ড্রয়ার খুলে তার ও ছেলের জমানো নগদ ৮ লাখ ৪৬ হাজার টাকা নিয়ে যায়। পরে তাদের কাছ থেকে মিথ্যা জবানবন্দি ভিডিও করে নিয়ে যায় ডিএনসি টাঙ্গাইলের সদস্যরা।
ঘটনায় অভিযুক্ত একজন ডিএনসি টাঙ্গাইলের উপ-পরিদর্শক শামীম আল আজাদ কে ফোন করলে তিনি এ ব্যপারে কোন কথা বলবেন না বলে ফোন কেটে দেন। এ বিষয়ে ভূঞাপুর থানা অফিসার ইনচার্জ এ কে এম রেজাউল করিম জানান, ঘটনায় পাল্টাপাল্টি দুইটা অভিযোগ পেয়েছি, একটির মামলা নথি ভুক্ত করা হয়েছে, অন্যটি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে ভূঞাপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ আবু আব্দুল্লাহ খান জানান, তারা মাদক উদ্ধার করে আমাকে অবহিত করলে আমি তাদের সাথে শুধু ফটোসেশানে অংশ নিয়েছি। এজাহারে কি লিখেছে সেটি কোর্ট তদন্ত দিলে জানা যাবে। তখন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
এবিষয়ে কথা বলতে গিয়ে টাঙ্গাইল মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আবুল হোসেনের সাথে কথা হয় মুঠোফোনে। প্রথমে তিনি উদ্ধার ও মামলা প্রদানের বিষয়টিকে প্রতিষ্ঠিত করতে চান। পরবর্তীতে তিনি বিষয়টা দেখার কথা বলে ফোন কেটে দেন। পরবর্তীতে তিনি আবার কল দিয়ে বলেন, “আপনি সিরাজ সাহেবের সাথে কথা বলেন” বলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।
উল্লেখ্য, এর আগেও গত ৫ ফেব্রুয়ারী ২৫ ইং বিভিন্ন প্রিন্ট ও অনলাইন গণমাধ্যমে এই ডিএনসি সদস্যদের নিয়ে “ভূঞাপুরে মাদক না পেলেও নগদ টাকা লুট করেছে টাঙ্গাইল ডিএনসি!” শিরোনামে একটি সংবাদ ব্যাপকভাবে ভাইরাল হয়। যেখানে দেখা যায়, ভূঞাপুরের এক প্রতিবন্ধীর বাড়িতেও মাদকবিরোধী অভিযানে গিয়ে লকার ভেঙে ৪০ হাজার টাকা লুট করে ডিএনসি সদস্যরা। ওইসময় জোরপূর্বক ভিডিও বক্তব্য নেওয়ার অভিযোগও করেছে ভুক্তভোগী পরিবার। আর লুট হওয়া টাকাটি ছিল তার মায়ের ছাগল ও ধান বিক্রির আয়। তারা প্রশাসনের কাছে বিচার ও টাকার ফেরত দাবি করেছিলেন। তখন টাঙ্গাইল ডিএনসি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কথা থাকলেও পরে আর কোন ব্যবস্থা নেয়নি। এছাড়াও শহরের কান্দাপাড়া এলাকায় প্রতিনিয়তই এই ধরনের ঘটনা ঘটালেও অভিযোগ করতে সাহস পায় না ভূক্তভোগীরা।