বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশনা সত্ত্বেও দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গকারী নেতাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছে বিএনপি। চলমান বহিষ্কার প্রক্রিয়ার পাশাপাশি গ্রেপ্তারের ঘটনা ঝুট ব্যবসায়ীদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি করেছে। এই পরিস্থিতিতে অনেক নেতাই খোলাসা করতে শুরু করেছেন।
বুধবার (৯ জুলাই) অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত রবিবার থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের পাঁচ জন নেতাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বহিষ্কৃতদের মধ্যে দুইজন ইতোমধ্যে গ্রেপ্তার হয়েছেন, একজন চিকিৎসার জন্য বিদেশে আছেন এবং বাকিরা প্রকাশ্যে নেই।
দলীয় সূত্র জানায়, গত ৬ জুলাই কেন্দ্রীয় বিএনপি টঙ্গীর তিন নেতাসহ গাজীপুর মহানগর বিএনপির চার নেতাকে প্রাথমিক সদস্য পদসহ বহিষ্কার করে। চাঁদাবাজি, দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ এবং দলীয় নীতি-আদর্শ পরিপন্থী কাজের অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বহিষ্কৃত নেতাদের মধ্যে রয়েছেন গাজীপুর মহানগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রাকিব উদ্দিন সরকার পাপ্পু, সাবেক সদস্য অ্যাডভোকেট জিয়াউল হাসান উরফে জিএস স্বপন, মহানগর সেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হালিম মোল্লা এবং টঙ্গী পূর্ব থানা সেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব সিরাজুল ইসলাম সাথী।
গ্রেপ্তার হয়েছেন জিয়াউল হাসান স্বপন ও সিরাজুল ইসলাম সাথী। ৮ জুলাই বাসন থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলাম মনিরকেও বহিষ্কার করা হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, টঙ্গীতে প্রায় তিন শতাধিক কারখানা রয়েছে, যেখানে দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসা পরিচালনা করছেন নানা রাজনৈতিক গডফাদাররা। সাবেক প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেলের চাচা মতিউর রহমান মতি এখানকার ব্যবসায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। আওয়ামী লীগের সময়ে এই কারখানাগুলো তাদের দখলে থাকলেও এখন বিএনপি নেতারা দখল করে ব্যবসায় নিয়োজিত।
বিভিন্ন নেতার নাম উঠে আসছে ঝুট ব্যবসায় জড়িত থাকার অভিযোগে। উইন্ডি অ্যাপারেলস লিমিটেডে আওয়ামী লীগ আমলে একচেটিয়া ব্যবসা করতেন গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সাবেক ভারপ্রাপ্ত মেয়র আসাদুর রহমান কিরণ। তাঁর গ্রেপ্তারের পর এই কারখানাটি নিয়ন্ত্রণে নেয় বিএনপি নেতা হাসান উদ্দিন সরকারের পিএস গোলাম কিবরিয়া জনি।
জনি জানান, তাঁর নামে চুক্তিপত্র থাকলেও তিনি নিজে ঝুট ব্যবসায় জড়িত নন। টঙ্গী পশ্চিম থানা বিএনপির আহ্বায়ক প্রভাষক বসির উদ্দিনও এ ধরনের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘আমি ঝুট ব্যবসা করি না এবং চিকিৎসার জন্য ঢাকায় যাচ্ছি।’
বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ডা. মাজহারুল আলম বলেন, ‘ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বারবার দলের শৃঙ্খলা রক্ষার আহ্বান জানাচ্ছেন। যারা তা মানছেন না, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া স্বাভাবিক। বিএনপিকে সুশৃঙ্খল একটি দল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত রাখতে আমরা এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানাই।’এখন দলের শৃঙ্খলা রক্ষায় নেওয়া কঠোর পদক্ষেপ কার্যকর হবে কি না, তা সামনে আসতে সময় লাগবে।