প্রথমে প্রেমের ফাঁদ ও পরে বিয়ে। বিয়ের পর নানা কৌশলে টাকা আদায়। এভাবে একে একে চার বিয়ে করেছে এলজিইডির ইলেকট্রিশিয়ান জাহাঙ্গীর আলম। তার প্রতারণার ফাঁদে নিঃস্ব হয়েছেন দুই স্কুলশিক্ষিকাসহ বেশ কয়েকজন নারী। তাদের কাছ থেকে হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে ২৩ লাখ টাকা। এছাড়া জাহাঙ্গীরের সঙ্গে পরকীয়ার কারণে এক নারীর স্বামী আত্মহত্যাও করেছেন। বিয়ের নামে প্রতারণার অভিযোগে আত্মহত্যা করেছেন এক তরুণী। এতকিছুর পরও বিয়ে গোপন করে বাগিয়ে নিয়েছেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সদস্যপদ। ওই পদের দাপট দেখিয়ে একের পর এক প্রতারণা করেও পার পেয়ে গেছেন ওই ইলেকট্রিশিয়ান। প্রতারণার শিকার দুই শিক্ষিকা ওই প্রতারকের বিচার দাবি করেছেন। বর্তমানে সে দিনাজপুর জেলার হাকিমপুর উপজেলায় এলজিইডি অফিসে কর্মরত। তার বাড়ি দিনাজপুর জেলার ঘোড়াঘাট উপজেলার জালালপুর গ্রামে।
জানা গেছে, ঢাকায় প্রশিক্ষণের সুবাধে ২০১৯ সালে ইলেকট্রিশিয়ান জাহাঙ্গীর আলমের সঙ্গে পরিচয় হয় টাঙ্গাইলের স্কুলশিক্ষিকা রেহেনা কাজলের। বিয়ের পর নানা কৌশলে ওই শিক্ষিকার কাছ থেকে ১০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন জাহাঙ্গীর। একপর্যায়ে কাজল জানতে পারেন জাহাঙ্গীর ইতঃপূর্বেও একাধিক মেয়ের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। কর্মস্থলেও একাধিক নারীকে যৌন হেনস্তা করেছেন। জাহাঙ্গীর ইলেকট্রিশিয়ান পদে গাইবান্ধার পলাশবাড়ীতে এলজিইডিতে যোগদানের পর থেকেই অপকর্মে জড়ান। দুর্নীতির অভিযোগে ২০২০ সালের ১২ ডিসেম্বর জাহাঙ্গীরকে শোকজ করা হয়। এদিকে ২০২০ সালের ২৪ ডিসেম্বর পলাশবাড়ীর নারী সার্ভেয়ার এলজিইডি কর্মকর্তার কাছে জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ করেন।
পরে তাকে শোকজ করা হয়। ২০২১ সালের ২০ ডিসেম্বর জান্নাতুল ফেরদৌস নামে এক শিক্ষিকা ঘোড়াঘাটের ইউএনওর কাছে জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে একাধিক বিয়ের বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দেন। ২০২২ সালের ৭ আগস্ট জান্নাতুল ফেরদৌস ঘোড়াঘাট থানায় জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। সেখানে তিনি উল্লেখ করেন জাহাঙ্গীর তাকে না জানিয়ে আরেকটি বিয়ে করেছেন। এদিকে একাধিক বউ থাকলেও ২০২২ সালের ১৭ জুলাই জাহাঙ্গীর কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সদস্যপদ পান। ২০২৩ সালের ২১ মে শিক্ষিকা জান্নাতুল ফেরদৌস জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলী বরাবর প্রতারণার অভিযোগ দেন।
প্রতারিত শিক্ষিকা রেহেনা কাজল বলেন, আমার কাছ থেকে সাড়ে নয় লাখ টাকা, ১ ভরি সোনার চেইন, ১২ আনার হাতের বালা, ৪ আনার কানের দুল নিয়েছে। আমি আমার টাকা ও স্বর্ণ ফেরত চাই। এই প্রতারক যাতে আর কারও সঙ্গে প্রতারণা করতে না পারেন সেই বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের নজরদারি কামনা করি। আমি তার বিরুদ্ধে মামলা করেছি। আশা করছি মামলাতে সুষ্ঠু বিচার পাবো।
শিক্ষিকা জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, জাহাঙ্গীরকে বিয়ের পর থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত সব বেতন তাকে দিতে হয়েছে। এছাড়াও লোন করে আরও ১২ লাখ টাকা দিয়েছি। লোন নেয়ার পরেই আমাকে ডিভোর্স দেয়। পরে আমার মেয়েকে জোর কেরে নিয়ে নেয় জাহাঙ্গীর। আমার মেয়েকে ফেরত চাই। আমার আগেও জয়পুরহাটের লাভলী নামের এক মেয়েকে বিয়ে করেছিল। এছাড়াও তার বাসার কাছে এক ভ্যানচালকের স্ত্রীর সঙ্গে অবৈধ সম্পর্ক ছিল। বিষয়টি জানতে পেরে ভ্যানচালক আত্মহত্যা করেছে। ঘোড়াঘাটের এক চায়ের দোকানদারের মেয়ের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল। পরে তাকে বিয়ে না করায় মেয়েটি আত্মহত্যা করেছে।
অভিযুক্ত জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমি কোন টাকা পয়সা নেইনি। আমি দুই বিয়ে করেছি। চার বিয়ে করিনি। আমার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ মিথ্যা।