নিজস্ব প্রতিবেদক : প্রবাদে আছে, “নামে নামে যমে টানে”। টাঙ্গাইলে এখন পুলিশেও টানে। আর এমনই ঘটনা ঘটেছে জেলার মধুপুর উপজেলার কুড়াগাছা ইউনিয়নের কুড়াগাছা গ্রামের চান মিয়ার সাথে।
যৌতুকের এক মামলায় আসামি না হয়েও শুধু নামের মিল ও পুলিশের ভুলের কারণে কারাভোগ করছেন চান মিয়া নামের ওই ব্যক্তি।
পুলিশের ভুলে কারাগারে পাঠানো চান মিয়া পেশায় একজন লেপ তোষক ব্যবসায়ী। বাবার নাম জরু শেখ।
বাড়ি মধুপুর উপজেলার কুড়াগাছা ইউনিয়নের কুড়াগাছা গ্রামে।
অন্যদিকে মামলার আসামি ‘চান মিয়া’ একজন কাঠ মিস্ত্রি। বাবার নাম জহুর উদ্দিন। বাড়ি মির্জাবাড়ী ইউনিয়নের ব্রাহ্মণবাড়ী গ্রামের তোরাপ বাজার এলাকায়।
পুলিশের ভুলে হাজতে থাকা চান মিয়ার স্ত্রী ও তিন সন্তানসহ সুখের সংসার। নিম্ন মধ্যবিত্ত চান মিয়ার নামে কখনও কোনদিন মামলা হয়নি!
অথচ স্ত্রীর করা যৌতুক মামলার আসামি হয়ে গত বৃহস্পতিবার (২৬ নভেম্বর) পুলিশের হাতে আটক হয়ে জেলে গেছেন।
এ নিয়ে ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করেছেন তার পরিবারের সদস্যরা।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, সিআর ১৭০/১৯ নং যৌতুকের ৩ ধারায় মামলার বাদী জমিলা বেগম। তিনি ১২ বছরের এক মেয়ে সন্তান নিয়ে ঢাকায় থাকেন।
যৌতুকের দাবি করায় গত এক বছর আগে তিনি তার স্বামী চান মিয়ার নামে মামলা করেন।
বর্তমানে জমিলা ঢাকায় একটি গার্মেন্টেসে চাকরি করছেন। তার শ্বশুরের নাম (আসামি চান মিয়ার বাবা) জহুর উদ্দিন।
অন্যদিকে বর্তমানে হাজতে থাকা ‘চান মিয়া’ বাদী জমিলা বেগমের বাবার বাড়ির প্রতিবেশী।
বাদী জমিলা বেগম জানান, আটক হওয়া চান মিয়া নামের ব্যক্তি তার মামলার আসামি নন। এই চান মিয়া তার বাবার বাড়ি কুড়াগাছা গ্রামের বাসিন্দা।
তিনি আরও জানান, এক বছর আগে তিনি তার স্বামীর নামে যৌতুকের মামলা করেছেন। মামলার পর চান মিয়া তার দ্বিতীয় স্ত্রী নিয়ে পলাতক রয়েছেন।
মামলায় একাধিকবার শুনানির দিন ধার্য হলেও আসামি আদালতে হাজির হননি। পরে আদালত তার নামে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে।
বৃহস্পতিবার কুড়াগাছা বাজারে গিয়ে লেপ তোষকের ব্যবসায়ী চান মিয়াকে আটক করে পুলিশ।
আটক চান মিয়া ও তার পরিবারের বক্তব্য :
আটক চান মিয়ার পরিবারের অভিযোগ, স্বজনসহ স্থানীয়রা পরোয়ানার কাগজ বা কারণ জানতে চাইলেও পুলিশ কথা শুনেনি।
সহজ সরল চান মিয়াকে এ মামলার আসামি হিসেবে আদালতে হাজির করেছে।
ওইদিনই তাকে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মধুপুর আমলী আদালতে হাজির করলে আদালত তাকে টাঙ্গাইল জেলা কারাগারে নেয়ার নির্দেশ দেন।
হাজতবাসী চান মিয়ার স্ত্রী মনোয়ারা বেগম জানান, তার স্বামীর নামে এ পর্যন্ত কোন মামলা হয়নি। তিনি দ্বিতীয় স্ত্রী হলেও প্রথম স্ত্রীর সাথে ছাড়াছাড়ি হয়েছে অন্তত ২০ বছর আগে। ওই ঘরের এক ছেলে তাদের সাথে থেকে ব্যবসা করছে।
পুলিশ পক্ষের বক্তব্য :
মধুপুর থানার অফিসার ইনচার্জ তারিক কামাল বলেন, নামের মিল থাকায় কারাগারে পাঠানো চান মিয়া মামলার প্রকৃত আসামি কিনা প্রমাণিত নয়।
তবে গ্রেফতারকৃত চান মিয়া ওই মামলার আসামি না- এমনটাও জানাননি ওসি।
আসামির নাম আর ঠিকানা এক থাকায় তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে তিনি জানান।
কেন এমন ভুল হলো এমন প্রশ্নের জবাবে গ্রেফতারকৃত আসামির বাড়ি আগে মির্জাবাড়ি ইউনিয়নের ব্রাহ্মণবাড়ী গ্রামে ছিল বলে জানান তিনি।
তবে এ ঘটনায় বাদীর সাথে কথা হয়েছে আগামীকাল রোববার আদালতে নিশ্চিত হবে কে আসামি।
জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) মো. শাহিনুল ইসলাম বলেন, সিআর মামলা কোর্টে হওয়ায় ও নামের মিল থাকায় অনেক সময় এমন ভুল হয়ে যায়।
তবে বিষয়টি তার জানা নেই। আদালতে জামিন আবেদন করলে বিনাদোষে কারাভোগকারী জামিন পাবেন।