টাঙ্গাইলের হাত বাড়ালেই মিলে ভারতীয় বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মদ। জেলার বেশ কয়েকটি উপজেলার অন্তত ১০-১২টি স্পটে এখন প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে অবৈধ ভারতীয় মদ। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, কাস্টমস ও পুলিশের প্রশাসনের একাংশের উদাসীনতা ও দায়িত্বহীনতার সুযোগ নিয়ে গড়ে উঠেছে শক্তিশালী মাদক সিন্ডিকেট। জেলায় প্রতিদিন ঢুকছে বিপুল পরিমাণ ভারতীয় মদ। আর তা বিক্রি হচ্ছে প্রশাসনের চোখের সামনে নিয়মকানুনের তোয়াক্কা না করে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, টাঙ্গাইল পৌর শহরের আদালত পাড়া, আকুরটাকুর পাড়া, হাউজিং এলাকা; মির্জাপুরের কলেজ রোড, গোড়াই, হাটুভাঙ্গা; হামিদপুর ব্যাংক কলোনী এলাকা, দেলদুয়ারের পাথরাইল; মধুপুরের ভাইঘাট, জলছত্র এলাকায় বেশ কয়েকজন বিক্রেতা ভোক্তাদের কাছে সরবরাহ করে থাকে। বিক্রেতারা প্রশাসনের চোখের সামনে যেভাবে উন্মুক্তভাবেই এই মদ বিক্রি করে; তাতে বোঝা যায়, তাদের মধ্যে প্রশাসনের কোন ভয় নাই।
যেভাবে ঢুকছে মদের চালান –
বিশ্বস্ত একটি সূত্র জানায়, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ও স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই তারা ভারতসহ বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মদ বিক্রি করে থাকে। কিভাবে ভারতীয় মদ টাঙ্গাইলে প্রবেশ করে জানতে চাইলে সূত্রটি জানায়, টাঙ্গাইল থেকে সিলেট যাতায়াত করা যাত্রীবাহী বাসে করে অধিকাংশ চালান টাঙ্গাইলে ঢোকে। এছাড়াও বিভিন্ন ভিআইপি গাড়ি, ব্যক্তিগত গাড়ি, ট্রাক এমনকি ট্রান্সপোর্ট কোম্পানীর মিনি কাভার্ড ভ্যানেও আসছে বলে সূত্রটি নিশ্চিত করেছে। সূত্রটি নিজের পরিচয় গোপন রাখার শর্তে এই তথ্য দিয়েছেন। তবে তিনি এই সিন্ডিকেটের সাথে ঘনিষ্ট বলে জানিয়েছেন তিনি।
মাদক ব্যবসায়ীদের কৌশল –
সেক্ষেত্রে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের আগে থেকেই জানাতে হয় চালানে বোতলের সংখ্যা এবং বোতল প্রতি কমিশন আগেই তাদের প্রদান করতে হয়। কমিশনের পরিমান নির্ধারণ করে ওই কর্মকর্তারাই। সূত্রটি আরো জানায়, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর টাঙ্গাইল অফিসের অসাধু কয়েকজন কর্মকর্তা সারা জেলায় বিদেশী মদের ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে মাসোহারা নিয়ে নিরাপত্তা দিয়ে থাকে অভিযোগ আছে।
অনুসন্ধানে বেড়িয়ে আসে আরো ভয়াবহ চিত্র। প্রতিদিন টাঙ্গাইলে সবকয়টি স্পট মিলিয়ে ৩-৪’শ বোতল ভারতীয়সহ বিভিন্ন বিদেশী ব্র্যান্ডের মদ বিক্রি হয়। যার আনুমানিক মূল্য প্রায় ২৫-৩০ লক্ষ টাকা। জেলায় মাসে অন্তত ৭-৮ কোটি টাকার মদ বিক্রি হয়। যা থেকে কোন রাজস্ব পায় না সরকার।
মাদ্রকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণের কথা –
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রয়ণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের শেষ নেই। বর্তমান বছরের জুন মাসে মাদক উদ্ধারের নামে ভূঞাপুরে এক সাবেক কাউন্সিলরের বাড়িতে ডাকাতির অভিযোগ উঠে। সেই ঘটনা সত্যতাও পাওয়া যায়। পরবর্তীতে কয়েকজনকে সাময়িক বরখাস্ত ও সবার তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হয়।
টাঙ্গাইলের সদ্য যোগদান করা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরে উপ-পরিচালক মোহাম্মদ শামছুল আলম বলেন, টাঙ্গাইল একটি ঐতিহ্যবাহী জেলা। সবাইকে নিয়ে টাঙ্গাইলকে ভাল ও সুন্দর একটা পরিবেশ দেয়ার চেষ্টা করবো।
পুলিশ ও বিশেষজ্ঞরা যা বলছে –
টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান পিপিএম বলেন, এবিষয়ে আমার কাছে কোন রিপোর্ট আসেনি বা কেউ কোন কমপ্লেন দেয়নি। তথ্য পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা অবশ্যই গ্রহণ করবো।
তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এভাবে প্রশাসনের নিরবতা ও দুর্বলতার সুযোগে দেশজুড়েই গড়ে উঠেছে এক ভয়াবহ কালোবাজার। যা কেবল আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিকেই বিপন্ন করছে না, বরং দেশের রাজস্ব ব্যবস্থাকেও করছে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত।