টাঙ্গাইলে গ্রামীণ হাট-বাজার ও গ্রামের পিঁড়িতে বসে চুল ও দাঁড়ি কাটার ঐতিহ্য এখনও কিছু নরসুন্দর ধরে রেখেছেন। তবে আধুনিক সেলুন ও জেন্টস পার্লারের উত্থানের কারণে এই দৃশ্য দিন দিন কমে আসছে।
পিঁড়িতে বসে চুল-দাঁড়ি কাটার ঐতিহ্য হাজার বছরের পুরনো। গ্রামীণ নরসুন্দররা কাঠের বাক্সে ক্ষুর, কাঁচি, চিরুনি, সাবান, ফিটকারি, পাউডার ও লোশন নিয়ে বসে মানুষের চুল ও দাঁড়ি কাটেন। আশি ও নব্বইয়ের দশকে এই দৃশ্য গ্রামীণ হাট-বাজারের পরিচিত দৃশ্য ছিল।
টাঙ্গাইলের করটিয়া ইউনিয়নের হাট ও বাজারে এখনো প্রদীপ চন্দ্র শীল (৭০) ও মনোরঞ্জন চন্দ্র শীল (৬০) নামের দুই নরসুন্দর পিঁড়িতে বসে মানুষের চুল-দাঁড়ি কাটছেন। তারা বংশপরম্পরায় এই পেশা চালিয়ে আসছেন। যদিও বর্তমানে তাদের আয় অত্যন্ত কম। ৩০ টাকায় চুল এবং ১৫ টাকায় দাঁড়ি কাটলেও দিনের শেষে সংসার চালানো হিমশিম খাওয়া হয়ে যায়।
প্রদীপ চন্দ্র শীল বলেন, “আমার তিন ছেলে আধুনিক সেলুনে কাজ করলেও তাদের আলাদা সংসার, তাই আমি বৃদ্ধ বয়সেও পিঁড়িতে বসে কাজ করি।” মনোরঞ্জন চন্দ্র শীলও একইভাবে দিন-রাত গ্রামীণ হাট-বাজারে মানুষের চুল-দাঁড়ি কাটেন।
স্থানীয়রা nostalgically এই দৃশ্যকে স্মরণ করেন। নুরজামাল মিয়া বলেন, “এ দৃশ্য ছোটবেলার স্মৃতি মনে করিয়ে দেয়। তখন নরসুন্দররা আমাদের দুই হাঁটুতে বসিয়ে চুল কাটতেন।”
মহিনী শীল (৫৫) ৪০ বছর ধরে বাপ-দাদার পেশা ধরে রেখেছেন। তিনি বলেন, “আগে ধানের বিনিময়ে চুল কেটে দিতাম। এখন ৯০-১০০ টাকায় দিন কাটাই। কিন্তু বাপদাদার পেশা ধরে রাখতে চেষ্টা করি।”
যদিও আধুনিক ও নামি সেলুনে যান্ত্রিক চুল কাটা মেশিন, শেভিং ক্রিম, লোশন ব্যবহার হচ্ছে এবং কদর বেড়েছে, গ্রামীণ পিঁড়িতে বসা নরসুন্দরদের ঐতিহ্য হারিয়ে যেতে বসেছে। ধীরে ধীরে এই দৃশ্য ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে নিছক গল্পই হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।