দীর্ঘ ১৬ বছর আওয়ামী লীগের শাসনামলের সবচেয়ে বেশি দমনপীড়ন চলেছে ২০১৪ সালের রাতের ভোটে নির্বাচন সম্পন্ন করে ক্ষমতায় বসার পর। আর সেই সময়টাতে টাঙ্গাইল জেলা বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বভার আসে এডভোকেট ফরহাদ ইকবালের উপর। সকল চরাই উৎরাই পেরিয়ে, জেল-জুলুম-হুলিয়া মাথায় নিয়ে দলের নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ রেখেছেন বলে মন্তব্য নেতাকর্মীদের। ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের পতনের পর একটি চক্র ফরহাদ ইকবালের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে মেতেছেন বলে অভিযোগ তৃণমূল নেতাকর্মীদের।
বিগত ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের পতনের পর বিএনপি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে দ্রæততম সময়ে জাতীয় নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছিলো। ২০২৬ সালের ফেব্রæয়ারি মাসে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন করার কথা ঘোষণা দেয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান। তারপর থেকেই টাঙ্গাইলে বিএনপির রাজনীতিতে অপরাজনীতি ও দলের ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতা ফরহাদ ইকবালের ইমেজ নষ্টের তৎপরতায় সক্রিয় রয়েছে একটি চক্র। তারা প্রতিনিয়ত ফরহাদ ইকবালের ইমেজ ও ত্যাগকে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলিতে নানারকম মিথ্যা প্রপাগান্ডা ছড়িয়ে দিচ্ছে বলে অভিযোগ দলের ত্যাগী ও তৃণমূলের নেতাকর্মীদের।
নেতাকর্মীদের বক্তব্য –
প্রপাগান্ডার বিষয়ে তীব্র নিন্দা জানিয়ে ৫ নং ছিলিমপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সেলিম রেজা বলেন, ফ্যাসিবাদ বিরোধী সমস্ত আন্দোলনে ফরহাদ ইকবাল নেতৃত্ব দিয়েছেন। এখনকার অনেক নেতাই তখন পালিয়ে থাকত, কিন্তু ফরহাদ ইকবাল কখনো পালিয়ে থাকেনি। তখন যুবদলের সিনিয়র অনেক নেতা পালিয়ে থাকলেও সদস্য সচিব তৌহিদুল ইসলাম বাবু কখনো পালিয়ে যাননি। অথচ কোন একজন বিশেষ নেতার সাথে কাজ না করার জন্য তাকে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে দল থেকে বহিস্কার করা হয়েছে। আরো কয়েকজনকে বহিস্কার করা হয়েছে। এখন তারা ফরহাদ ইকবালের বিরুদ্ধে কথা বলে।
এসময় তিনি বলেন, আমি কারো নাম বলতে চাই না। তিনিও একজন ত্যাগী নেতা কিন্তু বহিরাগত। টাঙ্গাইল সদর আসনের সাধারণ মানুষ বহিরাগত কাউকে চায় না। এসময় তিনি আরো বলেন, টাঙ্গাইলে আবারো যেন পরিবারতন্ত্র প্রতিষ্ঠা না পায়। আমরা পরিবারতান্ত্রিক রাজনীতি আমরা আর চাই না। আর কোন মায়ের বুক যেন খালি না হয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বেশ কয়েকজন বলেন, তিনি অনেক বড় নেতা, তার হাত অনেক লম্বা। তিনি দিনকে রাত আর রাতকে দিন বানাতে পারেন এখন। তার সম্পর্কে মন্তব্য করার সাহস তাদের নাই বলে জানান তারা। তবে এই ঘটনা তীব্র নিন্দা, প্রতিবাদ ও ক্ষোভ জানিয়ে বলেন, এটা অপরাজনীতি। এই ধরণের রাজনীতি দলের ও দলের কর্মীদের ক্ষতি করবে। কর্মীদের ঐক্য নষ্ট করবে।
এবিষয়ে সদর উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি মামুন সরকার বলেন, এখন আমি সদর উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি, কিন্তু ৫ আগস্টের আগে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ছিলাম। ৫ আগস্টের আগে ফরহাদ ইকবালের ভ‚মিকা সম্পর্কে তিনি বলেন, ফরহাদ ইকবালের ভ‚মিকা ছিলো সর্বোচ্চ। বিগত ১৭টি বছর ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে যে আন্দোলন, লড়াই-সংগ্রাম হয়েছে, এই লড়াই-সংগ্রামে সঠিক নেতৃত্ব দিয়েছেন ফরহাদ ভাই।
প্রপাগান্ডা বিষয়ে মামুন সরকার বলেন, যারা ফেইক আইডি দিয়ে এই সকল প্রপাগান্ডা ছড়াচ্ছে, তারা দলে ঐক্য নষ্ট করার জন্যই এই কাজগুলো করছে। এর তীব্র নিন্দা জানান তিনি। এসময় তিনি একজন ত্যাগী নেতার বিরুদ্ধে এই ধরনের প্রপাগান্ডা প্রচারকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ও সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণের কথাও বলেন তিনি।
জেলা বিএনপি’র সভাপতির বক্তব্য –
টাঙ্গাইল জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রপাগান্ডা ছড়ানোর ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ জানিয়েছেন সভাপতি হাসানুজ্জামিল শাহীন। এসময় তিনি বলেন, যারা এই প্রপাগান্ডাগুলো ছড়াচ্ছে, তারা কিন্তু কোন অথেনটিক আইডি থেকে পোস্ট দেয়নি। তাদের কাছে যদি কোন প্রমাণ থাকতো, তাহলে প্রমাণ সাবমিট করে তারা বলতো।
এসময় জেলা বিএনপির সভাপতি হাসানুজ্জামিল শাহীন চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে বলেন, যদি বুকের পাটা থাকে, প্রমাণ সামনে নিয়ে হাজির হয়ে এগুলো বলুক, করুক। এগুলো সবাই করতে পারে। এগুলো শুধু তাকে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য করা হচ্ছে। এসময় তিনি বলেন, বিএনপি একটি বিশাল সংগঠন, নির্বাচনে যেকোন নির্বাচনী এলাকায় একাধিক প্রার্থী অবশ্যই থাকতে পারে। তার মানে এই নয় যে, এই ধরনের নোংরামি করতে হবে! এটা দুঃখজনক। প্রতিযোগিতা থাকতে পারে। মনোনয়ন দিবে হাই কমান্ড এবং যাকে দিবে তার পক্ষে সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবে। কিন্তু এই নোংরামিগুলোর কোন ভিত্তি নাই। আমি এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।
ফরহাদ ইকবাল যা বলেন –
এই বিষয়ে জেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ ইকবাল বলেন, দলের ত্যাগী নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ আমার সম্পর্কে জানে। আমি দলের ত্যাগী নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের সাথেই থাকতে চাই, তাদের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করতে চাই। কোন সুবিধাভোগীর জন্য নয়, সাথেও নয়। এসময় তিনি এই প্রপাগান্ডার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।
উল্লেখ্য –
এডভোকেট ফরহাদ ইকবাল ছাত্রজীবনে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের মাধ্যমে রাজনীতিতে প্রবেশ করেন। ১৯৯০ সালে তিনি সরকারী মাওলানা মোহাম্মদ আলী কলেজ ছাত্রদল শাখার সভাপতি হন। এরপর ১৯৯১ ও ১৯৯৩ সালে ওই কলেজের ছাত্রসংসদের ভিপি নির্বাচিত হন। তারপর ১৯৯৯ সালে তিনি টাঙ্গাইল জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক ও ২০০২ সালে সভাপতি নির্বাচিত হন। ওই বছরই তিনি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সংসদের (ঢাকা বিভাগ) সহ-সভাপতি হন। পরবর্তীতে ২০০৯ সালে তিনি টাঙ্গাইল জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক। সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন প্রায় ৫ বছর দায়িত্ব পালন করেন তিনি। এরপর ২০১৭ সালে কাউন্সিল অধিবেশনের মাধ্যমে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন ফরহাদ ইকবাল।











