২০১৮ ও ২০২৪ সালের বিনা ভোটের জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের পক্ষে কাজ করার অভিযোগ থাকা দেশের বিভিন্ন থানার বিতর্কিত অফিসার ইনচার্জরা (ওসি) আবারও গুরুত্বপূর্ণ থানায় পদায়নের লটারিতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। পুলিশ সদর দপ্তর প্রকাশিত সর্বশেষ তালিকায় দেখা যাচ্ছে—মোট ৫০ জন বিতর্কিত ওসির নাম আবারও লটারিতে উঠেছে। এদের বেশিরভাগের বিরুদ্ধেই রয়েছে জামাত–বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে হয়রানি, মিথ্যা মামলা দেওয়া, নির্বিচার গ্রেপ্তার এবং নির্বাচনী কারচুপির অভিযোগ। দুই নির্বাচনেই মাঠপর্যায়ে দলীয় সুবিধা নিশ্চিত করেছিলেন তারা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের নির্বাচনে ডিএসবি’র ডি-আই-ওয়ান (DIO-1) হিসেবে মাঠপর্যায়ে আওয়ামী লীগের সুবিধা নিশ্চিত করতে যেসব পুলিশ কর্মকর্তা সরাসরি কাজ করেছিলেন তারাই এখন আবারো প্রভাবশালী থানার দৌড়ে শীর্ষে। প্রশ্ন উঠছে—নির্বাচনী অপরাধে জড়িতদের কি আবারও ‘পুরস্কৃত’ করা হচ্ছে? নাগরিক সমাজের উদ্বেগ নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা বলছেন“একই চক্র বারবার গুরুত্বপূর্ণ থানায় যাচ্ছে। এতে পুলিশ প্রশাসনের নিরপেক্ষতা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তৈরি হচ্ছে।”
তারা মনে করেন, এত গুরুতর অভিযোগ থাকা পুলিশ কর্মকর্তাদের যাচাই–বাছাই ছাড়াই দায়িত্ব দেওয়া হলে জনআস্থা আরও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বিতর্কিতদের আবারও গুরুত্বপূর্ণ থানা, সূত্রের তথ্যে জানা গেছে ৫ আগস্টের পর যাদের বিভিন্ন থানায় দায়িত্ব থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছিল যাদের, তারাও এবার লটারিতে গুরুত্বপূর্ণ থানা পেয়েছেন।
২০২৪ সালের নির্বাচনে মাঠপর্যায়ে দেখা গেছে—অনেক ডিবি কর্মকর্তা যাদের বিরুদ্ধে দলীয় ভূমিকার অভিযোগ আছে, তারাও এবার ওসি–পদে লটারিতে অন্তর্ভুক্ত।
রাজনৈতিক সম্পর্ক গোপন করে ভেটিং সম্পন্ন :
আরও অভিযোগ পাওয়া গেছে, অনেক কর্মকর্তার পরিবারে আওয়ামী লীগের উচ্চপদস্থ নেতা থাকা সত্ত্বেও পুলিশ ভেরিফিকেশনে সেই তথ্য গোপন করে পদায়নের ভেটিং সম্পন্ন করা হয়েছে।
উদাহরণ : আল মামুন সরকার, ২০১৬ সাল থেকে ময়মনসিংহ ডিএসবিতে ডি-আই-ওয়ান হিসেবে দুটি নির্বাচনে সক্রিয় দায়িত্ব পালন পরে ধোবাউড়া থানার ওসি এবার লটারিতে নেত্রকোনা সদর থানার জন্য তার নাম উঠে এসেছে ।
আগের বিতর্কিতদের ফের ফেরত আরও জানা গেছে অনেকে নিজের জেলার থানা পেয়েছেন কেউ কেউ আগে যে থানায় ওসি ছিলেন, আবারও সেই থানাতেই লটারিতে নাম পেয়েছেন এমনও আছেন যারা চাঁদাবাজি, নির্যাতন কিংবা শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে বিতাড়িত হওয়ার পরও পুনরায় লটারিতে জায়গা পেয়েছেন।
আওয়ামী লীগপন্থী কর্মকর্তাদের দাপট :
আওয়ামী লীগ আমলে এসআই হিসেবে যারা চাকরিতে প্রবেশ করেছিলেন তাদের অনেকেই এখন ওসি পদে বঙ্গবন্ধুর মতো গুরুত্ব পাচ্ছেন, যদিও তাদের দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। একজন ওসি মন্তব্য করেন এবার নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হবে। সাবেক ছাত্রলীগপন্থী নেতারাই এবার ওসি পদে বেশি গুরুত্ব পেয়েছেন।”
বিতর্কিত ওসিদের সুনির্দিষ্ট তথ্য, আরজু মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন (বিপি: ৭৫৯৯০৭১৩৫৬), ২০১৮ এবং ২০২৪—দুই নির্বাচনে ওসি ছিলেন। ৫ আগস্টেও ওসি পাঁচ আগস্টের পর আরও দুই থানায় ওসি, সর্বশেষ জলঢাকা থানা, নীলফামারী। ৬৩ জনের তালিকায় রাজশাহী রেঞ্জে পোস্টিং, এবার লটারিতে কুড়িগ্রাম সদর থানার ওসি হয়েছে মো. শফিকুল ইসলাম (বিপি: ৮২১০১৩৬৭০৬), ৫ আগস্টে সাদুল্লাপুর থানা, গাইবান্ধার ওসি, পরে পীরগঞ্জ থানা, রংপুরে ওসি, এবার লটারিতে আবারও সাদুল্লাপুর থানায় ওসি হিসাবে নাম উঠেছে।
অতিরিক্ত তদন্তে উঠে আসা আরও উদাহরণ :
সিরাজগঞ্জ – বেলকুচি থানা, নতুন ওসি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের হল শাখার সাবেক সহ-সভাপতি, তার মামা নগর আওয়ামী লীগের কাউন্সিলর, জয়পুরহাট – পাঁচবিবি থানা: নতুন ওসি সরাসরি আওয়ামী পরিবারভুক্ত, দলীয় প্রভাব সুস্পষ্ট।
নিয়োগ পাওয়া ওসি ২০১৮ ও ২০২৪ সালের নির্বাচনে ভোট কারচুপিতে সরাসরি যুক্ত ছিলেন। আগেই ঘোষণা ছিল যারা কারচুপিতে যুক্ত ছিল তারা আর ওসি হতে পারবে না, কিন্তু বাস্তবে তার উল্টোটা ঘটেছে। নওগাঁ – আত্রাই থানা, নতুন ওসি ছাত্রলীগপন্থী, এবং সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের পিএস হিসেবে কাজ করেছেন।
আওয়ামী লীগপন্থী কর্মকর্তাদের ব্যাপক আধিপত্য :
২০১০ ব্যাচের ৭৮ জন, ২০১২ ব্যাচের ২ জন মোট ৮০ জন আওয়ামী লীগপন্থী কর্মকর্তা এবার পদায়নের দৌঁড়ে সামনের সারিতে। এই লটারিকে কেন্দ্র করে পুলিশ বাহিনীর ভেতরে যেমন আলোচনা ও ক্ষোভ, তেমনি সাধারণ মানুষের মধ্যেও প্রশ্ন বিতর্কিত অতীতধারী পুলিশ কর্মকর্তাদের দিয়ে কি থানার স্বচ্ছতা, ন্যায়বিচার ও জননিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব?
তথ্যসূত্র – প্রতিদিনের কাগজ










