টাঙ্গাইলের কালিহাতীতে চিকিৎসা সেবা বন্ধ রেখে সামাজিক দূরত্ব না মেনে মানববন্ধন করেছেন উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মচারীরা। সোমবার (২২ জুন) উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে মানববন্ধনটি অনুষ্ঠিত হয়। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সাইদুর রহমানের বিরুদ্ধে দূর্নীতির বিরুদ্ধে দায়েরকৃত অভিযোগে সংবাদ প্রকাশ করায় তারা এ মানববন্ধন করেন।
জানা যায়, কালিহাতীর সালেংকা গ্রামের আবু মুহাম্মদ জিন্নাহ নামের এক ব্যক্তির উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ২৮ লাখ টাকার দুর্নীতির অভিযোগ এনে দুর্নীতি দমন কমিশন টাঙ্গাইলের সমন্বিত কার্যালয়ে ১৭ জুন একটি লিখিত আবেদন করেন। সেই লখিত অভিযোগের সূত্র ধরে ঢাকা থেকে প্রকাশিত কয়েকটি গণ্যমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হয়। এতে ক্ষুব্ধ হন ডা. সাইদুর রহমান। সংবাদ প্রকাশের প্রতিবাদে মানববন্ধন করা হয়।
এদিকে উপজেলার সকল স্বাস্থ্যকর্মীদের ডেকে এনে সামজিক দূরত্ব না মেনে মানববন্ধন করার বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকসহ সকল মহলে চলছে আলোচনা-সমালোচনার ঝড়। এছাড়া মানবন্ধননের ব্যানারে হলুদ সাংবাদিকতা শব্দ লেখায় ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন উপজেলার সংবাদকর্মীরা। মানববন্ধনে উপস্থিত সাংবাদিকদের বিষয়টি নজরে আসলে তারা তাৎক্ষণিকভাবে প্রতিবাদ করেন।
কালিহাতী উপজেলা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক দাস পবিত্র বলেন, দূর্নীতির লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে স্বাস্থ্য কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ হয়েছে। তারা মানববন্ধন করতেই পারেন। কিন্তু মানববন্ধনে হলুদ সাংবাদিকতা উল্লেখ থাকায় আমরা তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে।
কালিহাতী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আনছার আলী বিকম বলেন, সামাজিক দূরত্ব না মেনে ও সেবা বন্ধ করে স্বাস্থ্যকর্মীদের মানববন্ধনের বিষয়টি আমার জানা নেই। এ বিষয়ে আমি কোন মন্তব্য করতে পারবো না।
কালিহাতী উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মোল্লা বলেন, সারা পৃথিবী যেখানে মহামারী করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে ব্যস্ত। সেই সময়ে একজন স্বাস্থ্য কর্মকর্তার দূর্নীতি ঢাকতে সামাজিক দূরত্ব না মেনে ও সেবা বন্ধ করে মানববন্ধন করা অত্যন্ত নিন্দনীয়। বিষয়টি রাষ্ট্রীয়ভাবে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানাচ্ছি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলার কয়েকজন স্বাস্থ্যকর্মী বলেন, আমাদেরকে মিটিংয়ের কথা বলে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে মানববন্ধনে অংশগ্রহণ করানো হয়। বেলা ১টায় হলেও স্বাস্থকর্মীরা সকাল থেকেই আসতে শুরু করেন। উপজেলার স্বাস্থ্য বিভাগের স্থানীয় কয়েকজন নেতার সাথে আলোচনা করে মানববন্ধনের সিদ্ধান্ত নেন স্বাস্থ্য কর্মকর্তা।
উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সাইদুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন আমাকে ঘিরে মিথ্যা সংবাদের প্রতিবাদে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মানবন্ধন করেছেন। অনেক লোকের সামগম হওয়ায় সামাজিক দূরত্ব বজায় নাও থাকতে পারে। স্বাস্থ্যকর্মীদের ডেকে এনে পুরো উপজেলার স্বাস্থ্য সেবা বন্ধ করে মানববন্ধন করা কতটুকু যুক্তিযুক্ত এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন বেলা একটায় মানবন্ধন হয়েছে। সেবা কার্যক্রম বন্ধ ছিল না।
টাঙ্গাইলের সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ওয়াহীদুজ্জামান বলেন, আমাকে অবহিত করে মানববন্ধনটি করা হয়নি। সামাজিক দূরত্ব না মেনে ও সেবা বন্ধ রেখে মানববন্ধন হয়ে থাকলে সেটা ঠিক হয়নি। এ বিষয়ে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।