মধুপুর প্রতিনিধি : টাঙ্গাইলের মধুপুর গড়ে গারো কোচদের ভূমির অধিকার ও উচ্ছেদ না করার দাবিতে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
সমাবেশ শেষে তারা দাবি আদায়ের জন্য রোববার (৩১ জানুয়ারি) বিকাল ৩টা থেকে ৪টা পর্যন্ত ১ ঘন্টা টাঙ্গাইল-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে।
পরে খবর পেয়ে মধুপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আরিফা জহুরা, সহকারী পুলিশ সুপার কামরান হোসেন, মধুপুর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তারিক কামাল জলছত্র জয়েনশাহী আদিবাসী অফিসে এসে আদিবাসী নেতৃবৃন্দের সাথে বৈঠক করে অবরোধকারীদের দাবি পূরণের আশ্বাস দিলে স্থানীয়রা অবরোধ তুলে নেয়।
এ সময় টাঙ্গাইল ময়মনসিংহ মহাসড়কের চলাচলকারী স্থানীয় ও দুরপাল্লার শতশত যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
মধুপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বলেন, আপনাদের সমস্যার কথা স্থানীয় সংসদ সদস্য কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর সাথে আলোচনা করে সমস্যার সমাধান করা যায় সে জন্য কথা বলবো।
আদিবাসীদের দাবি –
এর আগে সমাবেশে তাদের দাবি আদায়ের জন্য বক্তারা বলেন, মধুপুরে যুগ যুগ ধরে বংশপরম্পরায় তারা বসবাস করছে।
তাদের স্বত্বদখলীয় ভূমি ৪ দলীয় সার্ভে করে ভূমি চিহ্নিত করতে হবে।
মধুপুর বনাঞ্চলের সংরক্ষিত, জাতীয় উদ্যান, ইকোপার্ক ঘোষনাকে বাতিল করে তাদের সাথে অর্থ পূর্ণ আলোচনার ব্যবস্থা করতে হবে।
১৯৮৪ সাল থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত তাদের এলাকার রেকর্ডিও জমি খাজনা নেওয়া হতো। এখন আর খাজনা নেওয়া হয় না।
১৯৮২ সালের আতিয়া বন অধ্যাদেশ বাতিল করে তাদের রেকর্ড জমির খাজনা নেওয়া বন্ধ আবার চালু করার ব্যবস্থা করতে হবে।
তাদের স্বত্বদখলীয় ভূমিসমূহ স্থায়ী বন্দোবস্তের ব্যবস্থা করা, বন মামলাসমূহ ভ্রাম্যমাণ আদালত সৃষ্টি করে দ্রুত নিষ্পত্তির ব্যবস্থা করা ও সামাজিক বনায়ন বাতিল করে প্রাকৃতিক বন রক্ষার দায়িত্ব তথা কমিউনিটি ফরেষ্ট্রি বা গ্রামবন পদ্ধতি চালু করা এবং তাদের ভূমির প্রথাগত অধিকার দেয়ার দাবি জানায়ে বক্তারা বলেন, আমার ভূমি আমার মা, কেড়ে নিতে দিব না।
রোববার (৩১ জানুয়ারী) দুপুরে মধুপুর গড়াঞ্চলে জলছত্র ফুটবল মাঠে আয়োজিত ভূমির অধিকার ও উচ্ছেদ না করার দাবিতে প্রতিবাদ সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।
বক্তারা আরও বলেন, পূর্ব পুরুষগণ এ গড়াঞ্চলে উঁচুচালা জমিতে জুম চাষ ও নিচু বাইদ জমিতে ধান চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করতো। এ ভাবে তারা বংশানুক্রমে এ অঞ্চলে বসবাস করছে। তাদের দাবি সম্প্রতি বন বিভাগের সংরক্ষিত বনভূমি উদ্ধার বিষয়ে মধুপুর গড়ের বসবাসকারী গারো কোচদের উচ্ছেদ আতংকে ফেলেছে।
সমবেশে উপস্থিতি ও সংহতি প্রকাশ করেন যারা –
সর্বস্তরের জনগণের ব্যানারে অনুষ্ঠিত সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন জয়েনশাহী আদিবাসী উন্নয়ন পরিষদের সভাপতি ইউজিন নকরেক।
অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন জিএমএডিসির সভাপতি অজয় এ মৃ; মধুপুর উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান যষ্ঠিনা নকরেক; ট্রাইবাল ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের সভাপতি উইলিয়াম দাজেল; আচিক মিচিক সোসাইটির নির্বাহী পরিচালক সুলেখা ম্রং; জিএসএফ এর সাধারণ সম্পাদক লিয়াং রিছিল; বাগাছাসের সভাপতি জন যেত্রা; গাসু’র সভাপতি ইব্রীয় মানখিন; কোচ নেতা গৌরাঙ্গ বর্মন, আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অলিক মৃ; বেলার প্রতিনিধি গৌতম চন্দ্র চন্দ, আদিবাসী শিক্ষিকা ও নেত্রী পিউ ফিলোমিনা ম্রং; বাগাছাস নেতা শ্যামল মানখিন প্রমুখ।
সংহতি প্রকাশ করেন শোলাকুড়ি ইউপি, ফুলবাগচালা ইউপি, বেরীবাইদ ইউপি, অরণখোলা ইউপি, মুক্তাগাছা দাওগাও ইউপি’র সাবেক চেয়ারম্যান বাদশা মিয়া ও নিজেরা করির প্রতিনিধি ফজলুল হক প্রমুখ।
সমাবেশে মধুপুর গড় এলাকার বিভিন্ন গ্রামের আদিবাসী সম্প্রদায়ের শিক্ষার্থীসহ সকল শ্রেণী-পেশার মানুষ যোগদান করেন।