বিশেষ প্রতিবেদক : স্থানীয় প্রশাসন বার বার অভিযান, জরিমানা করার পরও মির্জাপুরে নির্ভয়ে চালিয়ে যাচ্ছে অবৈধভাবে নদীর বালু কেটে বিক্রি করছে একটি প্রভাবশালী চক্র।
প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গলী দেখিয়ে এই প্রভাবশালী চক্রটি মাটি বিক্রি করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।
মির্জাপুরের ফতেপুর ইউনিয়নের বৈলানপুর, হিলড়া ও বরকির ফারাম এলাকায় তারা বেকু দিয়ে নদীর বালু বিক্রি করে যাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
বালু খেকো মহলটি সেখানে চারটি বেকু মেশিন দিয়ে প্রতিদিন কয়েকশ’ ট্রাক মাটি বিক্রি করছে।
প্রতিদিন শত শত ভারী মাটিভর্তি ট্রাক চলাচলের কারণে গ্রামীণ সড়ক হুমকির মধ্যে পড়েছে।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের থলপাড়া-কূর্নি সড়কের বিভিন্ন স্থানে ফাটল দেখা দিয়েছে। প্রভাবশালী মহলের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছেনা স্থানীয়রা।
বিষয়টি গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি অভিযান চালিয়ে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় ও মাটিকাটা বন্ধ করে দেয় প্রশাসন।
কিন্তু প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে পরের দিন থেকেই একই কায়দায় বেকু দিয়ে মাটি উত্তোলন ও বিক্রি শুরু করে বালু খেকোরা; যা প্রতিদিন সন্ধ্যার পর থেকে সারারাত চলে মাটি বিক্রি।
ইতিপূর্বেও স্থানীয়দের দাবির মুখে স্থানীয় প্রশাসন মাটি উত্তোলন বিক্রি বন্ধ করে দিলেও ১৫ দিন পর পুনরায় শুরু করে প্রভাবশালী মহলটি।
জানা গেছে, ফতেপুর ইউনিয়নের উপর দিয়ে প্রবাহিত লৌহজং নদীতে বিশাল একটি চর জেগে উঠে; আর সেই চরের দিকে নজর পড়ে বালুখেকোদের।
তারা নদীর এই বিশাল চরের মাটি বেকু দিয়ে কেটে বিক্রি করে প্রভাবশালীরা হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা।
স্থানীয় একটি বিশেষ সূত্র জানায়, হিলড়া গ্রামের জাতীয় পার্টির নুরু স্থানীয় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতা আজাদ ও বিএনপি নেতা ইব্রাহিম এই তিনজন মিলে প্রভাবশালী একটি চক্র গড়ে উঠেছে।
সূত্রটি আরো জানায়, এ চক্রের মুল হোতা হলো মির্জাপুরের বালু খেকো নামে পরিচিত কবির সিকদার। তারা বৈলানপুর. হিলড়া ও বকরির ফারাম এলাকায় চারটি বেকু মেশিন বসিয়ে নদীর মাটি কেটে তা বিক্রি শুরু করে।
স্থানীয়দের অভিযোগ –
স্থানীয়রা জানান, বর্তমানে বুড়িগঙ্গা নদী উদ্ধার প্রকল্পের আওতায় লৌহজং নদীর ড্রেজিং কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
বঙ্গ ড্রেজিং লিমিটেড নামের একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কাজ বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে; যার সাব ঠিকাদার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন কবির সিকদার নামের মির্জাপুরের এক বালু ব্যবসায়ী।
আর মির্জাপুরে বালু খেকো নামে পরিচিত কবিরের মাধ্যমে প্রশাসনকে ম্যানেজ করে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
বিনিময়ে মোট লাভের ৪০ ভাগ টাকা দেয়া হচ্ছে কবির গংদের। এদিকে জাতীয় পার্টির নুরু নামের কেন্দ্রীয় এক নেতা পাচ্ছেন ট্রাক প্রতি ৮০ টাকা। বাকি টাকা ভাগ করে নিচ্ছেন স্থানীয় বিএনপি ও আওয়ামী লীগের দুই নেতা।
ড্রেজিং কাজকে সামনে রেখে এসব বালু ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেডের মাধ্যমে ফতেপুর ইউনিয়নের হিলড়া, বৈলানপুর ও বকরির ফারাম এলাকায় গত বছরও বাংলা ড্রেজার বসিয়ে কোটি কোটি টাকার বালু বিক্রি করে বলে অভিযোগ উঠে।
এবছরও বেকু মেশিন দিয়ে মাটি কেটে বিক্রি শুরু করে। প্রতিদিন চার শতাধিক ১২ চাকা ও ৬ চাকার ট্রাক দিয়ে মাটি বিক্রি করছে তারা।
প্রতি ট্রাক মাটি ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা আর ছোট ট্রাক প্রতি বিক্রি করা হচ্ছে ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকায়। আর এ টাকা ভাগ বাটোয়ারা করে নিচ্ছে সিন্ডেকেডের সদস্যরা।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত কবির সিকাদার বলেন, আমরা বঙ্গ ড্রেজিং লিমিটেডের কাছ থেকে সাব-কন্ট্রাক্ট নিয়ে কাজ করছি।
তবে আমরা ওই সব এলাকায় ড্রেজিং বা বেকু দিয়ে মাটি উত্তোলন করি না; কেউ যদি আমাদের নাম বলে থাকে তবে মিথ্যা কথা বলেছে।
এবিষয়ে মির্জাপুরের সহকারী কমিশনার (ভুমি) মো. জুবায়ের হোসেন বলেন, ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান অব্যাহত আছে; গত সপ্তাহেও অভিযান করে জরিমানা আদায় করেছি।
তিনি আরো বলেন, অবৈধ বালু ব্যবসায়ীদের কোন প্রকার ছাড় দেয়া হবেনা বলেও জানান তিনি। সম্পাদনা – অলক কুমার