দিনদুপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে দল বেঁধে ঘুরে বেড়াচ্ছে শিয়াল। সাধারণত যেখানে কুকুর থাকে, সেখানে শিয়াল আসে না। কিন্তু ক্যাম্পাসে যেন তাদের মধ্যে অলিখিত সন্ধি হয়েছে। কুকুর-শিয়াল প্রকাশ্যে ঘুরছে। কখনো কখনো দুপক্ষে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া হচ্ছে। কখনো কখনো শিয়ালের মধ্যে দুটি পক্ষের লড়াই চোখে পড়ছে। করোনাকালে বন্ধ ক্যাম্পাসে এসব দৃশ্য এখন সুলভ। হঠাৎ কেউ দেখলে শিয়ালকে কুকুর ভাবার ভ্রমও বিচিত্র কিছু নয়। বেজিগুলো মানুষ দেখলেই জঙ্গলে ঢুকে পড়ছে।
প্রায় ৭৫ একর জমিতে ১২ বছর আগে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এ বিশ্ববিদ্যালয়। তবে গত ৬-৭ বছরে ক্যাম্পাসে আমরা স্বেচ্ছাশ্রম এবং অপ্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগে প্রায় ৩৪ হাজার গাছ রোপণ করেছি। এখন সবুজ বৃক্ষে আচ্ছাদিত পুরো ক্যাম্পাস। করোনাকালে এই সবুজ যেন আরও মিষ্টি, আরও মায়াবি, আরও আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে। মাঠে যেন সবুজ ঘাস-গালিচা। ঘাসের ওপর দিয়ে তো কেউ হেঁটেও যায় না। পায়ের রেখায় গড়ে ওঠা মেঠোপথও এখন সবুজ গালিচার অংশ। গোটা ক্যাম্পাসজুড়ে মানুষের আনাগোনা নেই বললেই চলে। পাখি, প্রজাপতি, শিয়াল, বেজি, কুকুর তাই ধরেই নিয়েছে, এ তাদের সাম্রাজ্য। কাঠশালিক, গোশালিক, ভাতশালিক, ঝুঁটিশালিকের নির্ভয় বাস এখানে। সবুজ সুইচোরা আসে মাঝে মাঝেই। তিলা ঘুঘুরা আসে দল বেঁধে। ইউরোশিয়ান ঘুঘুও চোখে পড়বে। অসংখ্য ঘুঘুতে ভরা ক্যাম্পাস। বাসাও করেছে অনেক ঘুঘু।
দুই রকম বুলবুলি এসেছে। সিপাহী বুলবুলিও অনেক এসেছে। সাত ভাই ছাতারে পাখি দল বেঁধে চলে। অবিরত তারা ডাকতে থাকে। মুনিয়া বাসা করেছে। কাজী নজরুল ইসলামের গানে আছে চোখ গেলো পাখির কথা। সেই পাখিও এসেছে। করুণ পাপিয়া নামেও পরিচিত। বড় কুবো বা কানা-কুয়া নামের পাখি আর আজকাল চোখেই পড়ে না। ক্যাম্পাসের নির্জনতায় তারাও এখন ক্যাম্পাসে নিয়মিত আসছে। কাক এই পাখিকে ধাওয়া করে সব সময়। চাতক পাখিও আজকাল দুর্লভ। কিন্তু ক্যাম্পাসে তাদের বিচরণ অবাধ হয়ে উঠেছে। কসাই পাখিরা জোড়া বেঁধেছে অনেক আগেই। অনেকগুলো বাসা তাদের। একটি কসাই পাখি বাচ্চাদের রোদ থেকে আড়াল করে রাখে, অন্য পাখিটি খাবার আনতে যায়।
ক্যাম্পাস বন্ধ থাকার কারণে কাঠশালিক, চড়ুই ভবনের ভেতরেই বাসা বেঁধেছে। নিয়মিত উড়তে দেখা যায় প্যাঁচাকে। বাসাও বেঁধেছে ভবনের খোপে। কাছে গেলেই চোখ বড় বড় করে তাকায়। অসংখ্য ফিঙে বাচ্চা দিয়েছে। হাঁড়িচাঁচা, কুটুম পাখিদেরও এখন বাচ্চা দেওয়ার সময়। কাকেরাও বাসা বানিয়েছে। বনচড়ুই বা রামগাঙরা ক্যাম্পাসে ভিড় করেছে। মৌটুসি পাখিরা ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করছে। টুনটুনি পাখিদেরও উপস্থিতি বেড়েছে। শ্বেতাক্ষী এসেছে ক্যাম্পাসে। বসন্তবৌরি পাখির দুটি প্রজাতি দেখা যাচ্ছে। পাকুড়, জামরুল ফল খাচ্ছে সারা দিন। খঞ্জন পাখিও আসছে। মাছরাঙা পাখিকে সব সময়ই পাওয়া যাচ্ছে। চিল মাঝে মাঝে অনেক নিচে নেমে আসছে। বিদ্যুতের খুঁটিতে বসছে। সামান্য জল জমলেই সেখানে আসছে বক। মাঝেমধ্যে আসছে টিয়া। থেকে থেকে জোরে শিস দিয়ে ওঠে ফটিকজল। মেঘ হও মাছরাঙা আসে অতিথির মতো, মাঝেমধ্যে। দোয়েল বাচ্চা দিয়েছে। বাবুই আসে খাবার সংগ্রহ করতে। ফিঙে পাখির বাচ্চারা বড় হয়ে গেছে। সন্ধ্যার পরও বৈদ্যুতিক বাতির আলোতেও তারা শিকার করে। শামুকখোল পাখিকে কাম্পাসের আকাশে উড়তে দেখলেও এখনো পড়তে দেখিনি।
ক্যাম্পাসে বিচিত্র প্রজাপতির বর্ণিল প্রজাপতিরও মেলা বসেছে। প্রজাপতিগুলো ফুলে ফুলে মধু সংগ্রহ করছে।
শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ। করোনাকালে তাদের অনপুস্থিতিতে ক্যাম্পাসে আছ গভীর শূন্যতা। এই শূন্যতায় আস্তরণ গড়ে তোলে সবুজ উদ্যান। আর এই উদ্যান প্রকৃতির অংশ হিসেবে পাখি–শিয়াল-বেজি-কুকুরে অবাধ জীবন লাভ করেছে। ক্যাম্পাস খোলার পরও যদি এসব পশুপাখিকে অভয় দিয়ে সহাবস্থান করা যায়, তাহলে শিক্ষার্থীরা প্রকৃতিঘনিষ্ঠ সময়ের ভেতর দিয়ে তাদের বিশ্ববিদ্যালয়জীবন কাটাতে পারবে।
সূত্র: prothomalo.com