দু’হাজার চার সালে বিবিসি বাংলা একটি ‘শ্রোতা জরিপ’-এর আয়োজন করে। বিষয়টি ছিলো – সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি কে? তিরিশ দিনের ওপর চালানো জরিপে শ্রোতাদের ভোটে নির্বাচিত শ্রেষ্ঠ ২০জনের জীবন নিয়ে বিবিসি বাংলায় বেতার অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয় ২০০৪-এর ২৬শে মার্চ থেকে ১৫ই এপ্রিল পর্যন্ত।
বিবিসি বাংলার সেই জরিপে শ্রোতাদের মনোনীত শীর্ষ কুড়িজন বাঙালির তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে আসেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। আজ তাঁর জীবন-কথা।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাঙালির কাছে বিশেষ একটি নাম। বাংলা সাহিত্যের তিনি একজন উজ্জ্বল নক্ষত্র এবং তাঁর বিশাল সাহিত্য কীর্তির জন্য তিনি বহু বাঙালির রক্তস্রোতে আজও মিশে আছেন।
তিনি ছিলেন একাধারে বাঙালি কবি, ঔপন্যাসিক, সঙ্গীতকার, চিত্রশিল্পী, নাট্যকার, ছোটগল্পকার, প্রাবন্ধিক ও দার্শনিক। এক কথায় বহুমুখী প্রতিভার সম্বন্বয় ঘটেছিল তাঁর বর্ণময় দীর্ঘ কর্মজীবনে।
তবুও তাঁর কবি পরিচিতিই তাঁকে বিশ্ববরেণ্য করে তুলেছিল আর তাই রবীন্দ্রনাথকে ভূষিত করা হয়েছিল ‘বিশ্বকবি’ বা ‘কবিগুরু’ নামে। আর তাঁর কবিতাগুচ্ছের জন্য তিনি পেয়েছিলেন সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার।
কলকাতায় জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়িতে এক ধনী ও সংস্কৃতিবান পরিবারে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জন্মগ্রহণ করেছিলেন ১৮৬১ সালের ৭ই মে। বাবা ছিলেন দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং মা সারদাসুন্দরী দেবী। রবীন্দ্রনাথ ছিলেন তাঁর বাবামায়ের চতুর্দশ সন্তান।
ছোটবেলায় প্রথাগত বিদ্যালয় শিক্ষা তিনি নেননি। বাড়িতে গৃহশিক্ষক রেখে তাঁর শিক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। স্কুলের বাঁধাধরার মধ্যে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় ছোটবেলা থেকেই ছিল তাঁর অনাগ্রহ। তাঁর ‘জীবনস্মৃতি’ বইয়ে রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন, যে অল্পকাল তিনি স্কুলে পড়েছিলেন সেসময় স্কুলের পাঠ ও পরিবেশ এবং স্কুলের দিনগুলো তাঁর কাছে কেমন “মুখবিবরের মধ্যে প্রাত্যহিক বরাদ্দ গ্রাসপিণ্ডের মত” লাগত।
জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়িতে বা কলকাতার বাইরে পারিবারিক বাগানবাড়িতে প্রাকৃতিক পরিবেশের মধ্যে ঘুরে বেড়াতেই বেশি স্বচ্ছন্দবোধ ক
মাত্র আট বছর বয়সে তিনি কবিতা লেখা শুরু করেন তাঁর থেকে বয়সে বড় তাঁর এক ভাগিনার উৎসাহে। সে কবিতা পরে ছাপাও হয়েছিল একটি পত্রিকায়।
তাঁর যখন এগারো বছর বয়স তখন তিনি কয়েকমাসের জন্য বাবার সঙ্গে ভারতের বিভিন্ন জায়গা ঘুরতে বেরিয়েছিলেন। এর মধ্যে পাঞ্জাবে হিমালয় পাহাড় ঘেরা ডালহাউসি শহরে থাকাকালীন বাবার কাছে তিনি সংস্কৃত, ইংরেজি, জ্যোতির্বিজ্ঞান, সাধারণ বিজ্ঞান ও ইতিহাসের নিয়মিত পাঠ নিতেন।
ওই পাহাড়ি শৈলাবাসে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৮৭৩ সালে লিখেছিলেন তাঁর প্রথম গান “গগনের থালে রবি চন্দ্র দীপক জ্বালে”। বলা হয় এটি ছিল পাঞ্জাবি একটি ভজনের অনুবাদ। ওই সময় অমৃতসরে এক মাস যখন তিনি বাবার সঙ্গে ছিলেন, তখন বাবা ও ছেলে নিয়মিত যেতেন স্বর্ণমন্দিরে। রবীন্দ্রনাথ তাঁর ‘জীবনস্মৃতি’তে লিখেছেন, সেসময় ওই মন্দিরের ভজন সঙ্গীত তাঁর ওপর বড়ধরনের প্রভাব ফেলেছিল।
রতেন তিনি।
রবীন্দ্রনাথ মাকে হারিয়েছিলেন তাঁর চোদ্দ বছর বয়সে। তাঁর বাবা অনেক সময় কাটাতেন দেশের বাইরে। ফলে রবীন্দ্রনাথের ছেলেবেলা কেটেছিল গৃহভৃত্যদের শাসন ও সান্নিধ্যে।
সূত্র: bbc.com