নিজস্ব প্রতিবেদক : ৭১’এ বুদ্ধিজীবী হত্যা ও গণহত্যার অভিযোগে টাঙ্গাইল থেকে দুই যুদ্ধাপরাধীকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হস্তান্তর করা হয়েছে।
হস্তান্তরকৃত দুই যুদ্ধাপরাধী হলো, জেলার গোপালপুর উপজেলার মনিরুজ্জামান কোহিনুর ও আলমগীর হোসেন তালুকদার।
বৃহস্পতিবার (৩ মার্চ) রাতে গ্রেপ্তারকৃত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হস্তান্তর করা হয়।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন গোপালপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোশারফ হোসেন।
দুই যুদ্ধাপরাধীর পরিচয় :
যুদ্ধাপরাধী আলমগীর হোসেন উপজেলার হাদিরা ইউনিয়নের চাতুটিয়া গ্রামের মৃত শফী উদ্দিনের ছেলে।
গ্রেপ্তারকৃত আলমগীর হোসেন তালুকদার ১৯৭৬ সালে সেনাবাহিনীতে সৈনিক হিসেবে যোগদান করেন।
পরে গোপালপুর পৌরসভার সুতী দাখিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ হিসেবে গত বছরের নভেম্বরে অবসরে যান।
অপর যুদ্ধাপরাধী যুদ্ধাপরাধী মনিরুজ্জামান কোহিনুর তিনি গোপালপুর উপজেলার ঝাওয়াইল ইউনিয়নের বেড়াডাকুরি গ্রামের মৃত সবুর মাস্টারের ছেলে।
কিভাবে, কোথা থেকে গ্রেপ্তার :
ওসি মোশারফ হোসেন খবরবাংলাকে জানান, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের কাছ থেকে ম্যাসেজ পেয়ে বৃহস্পতিবার গোপালপুরের হাদিরা ইউনিয়নের চাতুটিয়ায় অভিযান চালিয়ে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে আলমগীর হোসেনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
অপরদিকে, ডিএমপি’র নিউমার্কেট থানা পুলিশ ঢাকার এলিফ্যাণ্ট রোড়ের বাসা থেকে অপর যুদ্ধাপরাধী মনিরুজ্জামান কোহিনুরকে গ্রেপ্তার করা হয়।
তিনি গোপালপুর উপজেলার ঝাওয়াইল ইউনিয়নের বেড়াডাকুরি গ্রামের মৃত সবুর মাস্টারের ছেলে।
পরে তাদের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের উপ-পরিচালক এবং তদন্তকারী কর্মকর্তা মতিউর রহমান জানান, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দুই অপরাধী সম্পর্কে থানা পুলিশকে আগেই ম্যাসেজ দেওয়া হয়েছিল।
পুলিশ যুদ্ধাপরাধী আলমগীর হোসেন ও মনিরুজ্জামান কোহিনুরকে গ্রেপ্তার করে ট্রাইব্যুনালের কাছে হস্তান্তর করে।
পরে তাদের মধ্যে মনিরুজ্জামান কোহিনুরকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হলে তাকে জেল-হাজতে পাঠানো হয় এবং আলমগীর হোসেনকে পুলিশি হেফাজতে রাখা হয়।
আলমগীর হোসেনকে শনিবার (৫ মার্চ) ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হবে।
বিভিন্ন মহলের প্রতিক্রিয়া :
এদিকে, যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে রাজাকার আলমগীর ও কোহিনুরকে গ্রেপ্তারের খবর ছড়িয়ে পড়লে গোপালপুর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের উদ্যোগে তাদের ফাঁসির দাবিতে পৌরসভায় আনন্দ মিছিল করা হয়।
মিছিল শেষে পৌরসভার থানা ব্রিজ এলাকায় সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বীরমুক্তিযোদ্ধারা উল্লাস প্রকাশ করে বক্তব্য রাখেন।
সমাবেশে বীরমুক্তিযোদ্ধা সমরেন্দ্র নাথ সরকার বিমলের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন, পৌর মেয়র রকিবুল হক ছানা, বীরমুক্তিযোদ্ধা আব্বাস আলী, আওয়ামী লীগ নেতা মনিরুজ্জামান প্রমুখ।
মামলার বিবরণে প্রকাশ :
মামলার বিবরণে প্রকাশ, গ্রেপ্তার হওয়া দু’জনই ৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সহযোগী ও রাজাকার হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
৭১ সালের ৩০ জুন রাজাকার মনিরুজ্জামান কোহিনুর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে সাথে নিয়ে গোপালপুর উপজেলার ঝাওয়াইল বাজারে হামলা চালান।
সেসময় ঝাওয়াইল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সুরেন্দ্রবালা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও বিশিষ্ট লেখক মুসলিম উদ্দীনকে আটক করে গোপালপুর ক্যাম্পে নিয়ে আসেন।
সেখানে তাকে টানা সপ্তাহব্যাপী অমানুষিক নিযার্তন করা হয়।
পরে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে হত্যা করে তার লাশ গুম করা হয়। তার পরিবার শহীদ মুসলিম উদ্দীনের লাশের কোন সন্ধান পায়নি।
১৯৯৭ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার শহীদ মুসলিম উদ্দীনকে বুদ্ধিজীবী হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে তার নামে স্মারক ডাকটিকেট প্রকাশ করে।
অপরদিকে, একাত্তর সালের ৩০ সেপ্টেম্বর রাজাকার মনিরুজ্জামান কোহিনুর ও আলমগীর হোসেন তালুকদার একদল রাজাকার ও আলবদরকে সাথে নিয়ে মাহমুদপুর গ্রামে হামলা চালান।
বর্বর হানাদার বাহিনী আওয়ামী লীগের তৎকালীন এমএনএ হাতেম আলী তালুকদারের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে।
তারা শতাধিক বাড়িঘর পুড়িয়ে দেয়ার পর ১৭ জনকে হত্যা করে। এই দুই কুখ্যাত রাজাকার ওই গণহত্যায় নেতৃত্ব দেন।
মামলায় আরও বলা হয়, ৭১’ এর ১১ ডিসেম্বর টাঙ্গাইল হানাদার মুক্ত হওয়ার আগের দিন (১০ ডিসেম্বর) পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সাথে কোহিনূর ঢাকায় যান।
১৬ ডিসেম্বর রমনা রেসকোর্স ময়দানে ৯৩ হাজার পাকিস্তানি খান সেনার সাথে মনিরুজ্জামান কোহিনুর মিত্র ও মুক্তিবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পন করেন।
তিনি পাকিস্তানি বাহিনীর সাথে ভারতের জব্বলপুর কারাগারে বন্দি ছিলেন।
পরে শিমলা চুক্তি অনুযায়ী মুক্তি পেয়ে তিনি খান সেনাদের সাথে পাকিস্তান চলে যান।
পরে পাকিস্তানি নাগরিক হিসেবে নব্বইয়ের দশকে জাপান যান। ২০০২ সালে কোহিনুর দেশে ফেরেন।
তিনি বর্তমানে একজন শিল্পপতি এবং দেশের একটি শীর্ষ ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতা। সম্পাদনা – অলক কুমার