স্বাস্থ্য ডেস্ক : সারা বিশ্বে আবারও বাড়ছে করোনা সংক্রমণ। একই সঙ্গে বাড়ছে মৃত্যু। বাংলাদেশেও সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখী।
গত এক দিনে ৩৫৭ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে, যা ১৪ সপ্তাহের মধ্যে সর্বোচ্চ।
সর্বশেষ ৮ মার্চ এর চেয়ে বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছিল এক দিনে, সেদিন ৪৪৬ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়েছিল।
করোনা সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতির পরিপ্রেক্ষিতে প্রস্তুত রাখা হয়েছে কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালগুলো; সতর্ক থাকার পাশাপাশি ‘নো মাস্ক নো সার্ভিস’ নীতি চালুর তাগিদ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
করোনা মোকাবিলায় গঠিত জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটি বিদেশ থেকে আসা ব্যক্তিদের জন্য করোনা নেগেটিভ সনদ এবং টিকা সনদ বাধ্যতামূলক করাসহ স্বাস্থ্যবিধি প্রয়োগের পরামর্শ দিয়েছে।
আরো পড়ুন – মধুপুরের সেই আ’লীগ নেতার বিরুদ্ধে মামলা করেছে নির্বাচন কর্মকর্তা
এক নজরে দেখা –
গত জানুয়ারিতে করোনা আক্রান্তের হার ছিল এক দিনে সর্বোচ্চ ৩৩ শতাংশ। সেদিন শনাক্ত হয়েছিল ১৫ হাজার ৪৪০ জন।
এর পর ফেব্রুয়ারিতে শনাক্তের হার ধীরে ধীরে কমতে শুরু করে। তার ধারাবাহিকতা ছিল মে মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত।
এরপর আবারও ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে শনাক্তের হার। সংক্রমণ কমার ধারায় গত ৫ মে দৈনিক শনাক্ত রোগীর সংখ্যা নেমেছিল ৪ জনে।
তবে গত ২২ মের পর থেকে টানা দুই সপ্তাহ ধরে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা আবারও বাড়ছে।
১১ সপ্তাহ পর দৈনিক শনাক্ত কোভিড রোগীর সংখ্যা গত রবিবার আবার ১০০ ছাড়িয়ে যায়; সেদিন সারা দেশে ১০৯ জনের শরীরে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ার কথা জানায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
সোমবার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত হয় ১২৮ জন নতুন রোগী। মঙ্গলবার শনাক্ত রোগী আরো বেড়ে হয় ১৬২ জন।
আরো পড়ুন – শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং এন্ড ইনকিউবেশন সেন্টার স্থানান্তরের প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ
বুধবার ২০০ ছাড়ানোর পর বৃহস্পতিবারই সাড়ে ৩০০ ছাড়াল। সবাইকে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধী টিকার বুস্টার ডোজ নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।
এসময় তিনি বলেন, ‘পার্শ্ববর্তী দেশসহ বাংলাদেশেও করোনা বাড়ছে। এ জন্য সবাই বুস্টার ডোজ নিন। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন।’ বৃহস্পতিবার দুপুরে সচিবালয়ে ওষুধ শিল্প সমিতির সঙ্গে বৈঠক শেষে স্বাস্থ্যমন্ত্রী এ কথা বলেন।
বিশেষজ্ঞদের মতামত –
করোনা মোকাবিলায় গঠিত জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ সহিদুল্লা বলেন, দেশে করোনা সংক্রমণ বাড়ছে।
কিন্তু অফিস-আদালত, যানবাহন, মার্কেট, হাটবাজার—কোথাও স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না। বহির্বিশ্বে যাতায়াতও বেড়েছে।
আবার করোনা পরীক্ষাও করাতে চায় না অনেকে। এভাবে চলতে থাকলে করোনা সংক্রমণ ব্যাপক হারে বেড়ে যেতে পারে।
তাই আমাদের আগের মতো ‘নো মাস্ক নো সার্ভিস’ চালু করতে হবে। সবার মাস্ক পরতে হবে, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে; নইলে করোনার এবারের ঢেউয়ের ব্যাপকতা বেড়ে যাবে।
আইইডিসিআরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এ এস এম আলমগীর বলেন, করোনার উপসর্গ দেখা দিলে পরীক্ষা করতেই হবে; মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করতে হবে।
এখন আন্তর্জাতিক গমন বেড়েছে। সংক্রমণও বেড়েছে। তাই যানবাহনসহ সব জায়গায় স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে হবে; নইলে করোনা বৃদ্ধির আশঙ্কা রয়েছে।
আরো পড়ুন – মুক্তিযোদ্ধা ফারুক হত্যা মামলা : সাবেক মেয়র মুক্তির জামিন স্থগিত
তিনি বলেন, টিকা নিলে করোনা হবে না—এই ধারণা ঠিক না। টিকা নিলেও করোনা হতে পারে, তবে জটিলতা কম হবে।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের কথা –
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম বলেন, মাস্ক পরতেই হবে। এর কোনো বিকল্প নেই; একই সঙ্গে উপসর্গ দেখা দিলে পরীক্ষা করাতে হবে।
পজিটিভ হলে হাসপাতালে যেতে হবে, চিকিৎসা সেবা নিতে হবে; কারণ যে কোনো সময় জটিলতা দেখা দিতে পারে।
তিনি বলেন, করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় সারা দেশে কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালে আইসিইউসহ সার্বিকভাবে প্রস্তুত করা হচ্ছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, বুধবার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ৫ হাজার ২০০টি নমুনা পরীক্ষা করে ৩৫৭ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে; তাদের মধ্যে ৩২৮ জনই ঢাকা মহানগর ও জেলার বাসিন্দা।
এর বাইরে চট্টগ্রামে ১৬ জন, কক্সাবাজারে সাত জন, নারায়ণগঞ্জে ও বরিশালে দুই জন করে এবং গাজীপুর, চাঁদপুরে একজন করে নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে।
গত এক দিনে নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার বেড়ে ৫ দশমিক ৭৬ শতাংশ, যা আগের দিন ৩ দশমিক ৮৮ শতাংশ ছিল; গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে কারো মৃত্যুর খবর আসেনি।
আরো পড়ুন – সোহেল হাজারী কোন অথরিটিতে এমপি? জানতে চান হাইকোর্ট
মহামারী ঠেকাতে পরামর্শ সমূহ –
এদিকে জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটি (কোভিড-১৯) মহামারি নিয়ন্ত্রণে কয়েকটি পরামর্শ দিয়েছে। বুধবার রাতে কমিটির ৫৮তম সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় সভাপতিত্ব করেন কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ সহিদুল্লা।
পরামর্শক কমিটি এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে, যেসব দেশে করোনা ভাইরাসের নতুন ধরন এবং উপধরনে সংক্রমণের হার বেশি, সেসব দেশ থেকে আসা ব্যক্তিদের মাধ্যমে বাংলাদেশে ভাইরাস ছড়াচ্ছে বলে মনে করছে কমিটি।
এজন্য বিমান, স্থল ও নৌবন্দরে প্রয়োজনীয় ব্যবস্হা নিতে হবে। বিশেষ করে অধিক আক্রান্ত দেশগুলো থেকে আসা যাত্রীদের জন্য প্রয়োজনে কোভিড-১৯ নেগেটিভ সনদ, টিকা সনদ আবশ্যক করতে হবে।
সন্দেহজনক ব্যক্তিদের র্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্টের ব্যবস্হা করতে হবে। যারা এখনো বুস্টার ডোজ নেননি, তাদের টিকার ব্যাপারে উৎসাহিত করার এবং ৫ থেকে ১২ বছরের শিশুদের নিয়ম মোতাবেক টিকা দিতে সুপারিশ করেছে কমিটি।
কমিটির পরামর্শগুলোর মধ্যে আরো রয়েছে- স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য জনসাধারণকে পুনরায় উ দ্ধ করতে সব ধরনের গণমাধ্যমে অনুরোধ জানানো; সব ক্ষেত্রে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করা, ‘নো মাস্ক নো সার্ভিস’ নীতি প্রয়োগ করা; সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, জনসমাগম বর্জন করা; ধর্মীয় প্রার্থনার স্থানে (মসজিদ, মন্দির, গির্জা ইত্যাদি) মাস্ক পরা।
কমিটি আরো বলেছে, জ্বর, সর্দি, কাশি হলেও অনেকে করোনা পরীক্ষা করছেন না। এ কারণে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না। সংক্রমণও বাড়ছে এ কারণে।
কারো উপসর্গ দেখা দিলে এবং সংক্রমিত মানুষের সংস্পর্শে গেলে তাদের করোনা পরীক্ষা করার জন্য অনুরোধ করার পরামর্শও দিয়েছে টেকনিক্যাল কমিটি। সম্পাদনা – অলক কুমার