উন্নত চিকিৎসার জন্য “লন্ডন ক্লিনিকে” ভর্তি করা হয়েছে বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে। বুধবার (৮ জানুয়ারি) বিএনপি চেয়ারপার্সনের মিডিয়া ইউংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান এ তথ্য জানিয়েছেন। লন্ডনে পৌঁছানোর পর হিথ্রো বিমানবন্দর থেকে বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। বিমানবন্দর থেকে নিজেই ড্রাইভ করে খালেদা জিয়াকে হাসপাতালে নেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
এর আগে বাংলাদেশ সময় বিকেল ২টা ৫৮ মিনিটে খালেদা জিয়াকে বহনকারী এয়ার অ্যাম্বুলেন্স লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দরে অবতরণ করে।
পরে সেখান থেকে তিনি সরাসরি হাসপাতালের উদ্দেশে রওনা দেন। বিমানবন্দরে পৌঁছানোর পর সেখানে খালেদা জিয়াকে স্বাগত জানান ছেলে তারেক রহমান, তার স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমানসহ লন্ডন বিএনপির নেতাকর্মীরা। তারেক রহমান নিজেই গাড়ি চালিয়ে হাসপাতালে নিয়ে গেলেন খালেদা জিয়াকেতারেক রহমান নিজেই গাড়ি চালিয়ে হাসপাতালে নিয়ে গেলেন খালেদা জিয়াকে মঙ্গলবার রাত ১১টা ৪৬ মিনিটে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বেগম খালেদা জিয়াকে নিয়ে উড্ডয়ন করা এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটি কাতারের দোহা হয়ে হিথ্রো বিমানবন্দরে অবতরণ করেছে।
শাহজালাল বিমানবন্দরে খালেদা জিয়াকে বিদায় জানান বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যরা। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, আব্দুল মঈন খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাউদ্দিন আহমেদ, সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু ও হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বীর বিক্রম।
সফরে বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াসহ তার চিকিৎসক, পরিবার ও কাজের সহকারী রয়েছেন। এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে ছিলেন কাতারের সরকারি চিকিৎসকদের একটি দল। খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান কবে দেশে ফিরবেন?খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান কবে দেশে ফিরবেন? দীর্ঘ প্রায় সাত বছর পর লন্ডন গেলেন বিএনপির চেয়ারপার্সন।
এর আগে চিকিৎসার জন্য সর্বশেষ ২০১৭ সালের ১৫ জুলাই লন্ডন যান খালেদা জিয়া। প্রায় তিন মাসের বেশি সময় চিকিৎসার পর ১৮ অক্টোবর লন্ডন থেকে দেশে ফেরেন তিনি। ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি দুদকের মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে কারাবন্দির পর খালেদা জিয়ার শারীরিক নানা জটিলতা দেখা দেয়।
পরে বিশেষ বিবেচনায় তাকে বাসায় থাকার অনুমতি দেওয়া হয়। তবে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে দফায় দফায় খালেদা জিয়াকে বিদেশ নেওয়ার জন্য চিঠি ও আহ্বান জানালেও তা মানেনি তৎকালীন সরকার। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পরদিন ৬ আগস্ট রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের নির্দেশে খালেদা জিয়া স্থায়ী মুক্তি পান।
এর আগে, ২০২০ সালের ২৫ মার্চ সরকারের নির্বাহী আদেশে পিজি হাসপাতাল (বিএসএমএমইউ) থেকে বাসায় আসেন খালেদা জিয়া। এরপর ২০২১ সালের ১১ এপ্রিল কোভিড-১৯ ভাইরাস পজিটিভ রিপোর্ট আসে। ১৫ এপ্রিল এভারকেয়ার হাসপাতালে সিটি স্ক্যান করা হয়। ২৭ এপ্রিল করোনা ভাইরাসের চিকিৎসার জন্য প্রথম এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হন। সে বছরের ১৯ জুলাই করোনার প্রথম ডোজ টিকা এবং ১৮ আগস্ট দ্বিতীয় ডোজ ও ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি তৃতীয় ডোজ টিকা গ্রহণ করেন। ২০২১ সালের ২৫ অক্টোবর প্রথম অপারেশন হয়।
১১ জুন ২০২২ সর্বশেষ হঠাৎ অসুস্থ হয়ে মধ্যরাতে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হন। ২৪ জুন হাসপাতাল থেকে বিকেলে বাসায় ফেরেন। ২০২২ সালের ২২ আগস্ট রাজধানীর গুলশানে খালেদা জিয়ার ভাড়া বাসা থেকে নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়। সে বছর ২৮ আগস্ট সেখানে ভর্তি হন।
৩১ আগস্ট বাসায় ফেরেন। ২০২৩ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি আবারও তার স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়। একপর্যায়ে ২৯ এপ্রিল এভারকেয়ারে ভর্তি হন। চিকিৎসা শেষে ৪ মে বাসায় ফেরেন। ১৩ জুন রাত দেড়টায় আবারও এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ২০২৩ সালের ৯ আগস্ট হাসপাতালে ভর্তি হন। সর্বশেষ এ বছরের ১১ সেপ্টেম্বর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসা নেন খালেদা জিয়া।
জানা গেছে, ৭৯ বছর বয়সী খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে লিভার সিরোসিস, হৃদরোগ, ফুসফুস, কিডনি জটিলতা, আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন জটিলতায় ভুগছেন। লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত খালেদা জিয়ার রক্তনালিতে অস্ত্রোপচার করা হয় ২০২৩ সালের ২৭ অক্টোবর। যুক্তরাষ্ট্র থেকে তিনজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এনে খালেদা জিয়ার রক্তনালিতে অস্ত্রোপচার করা হয়েছিল। এছাড়া গত ২৫ জুন এভারকেয়ার হাসপাতালে খালেদা জিয়ার হৃদযন্ত্রে পেসমেকার বসানো হয়। কয়েক দফায় হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন খালেদা জিয়া।