টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার ৪৫১.৩০ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের ভূখন্ড ডুবে আছে কার্বন ডাই অক্সাইড এবং এবং সালফাল ডাই অক্সাইডের সাগরে। জীববৈচিত্র উপর প্রভাব পড়ছে বিষাক্ত এ গ্যাসের। উপজেলায় ৬০টি ভাটায় ইট পোড়ানোর জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে নিম্নমানের কয়লা। প্রতি মৌসুমে প্রতিটি ভাটা ১ হাজার থেকে ১ হাজার দুইশ টন কয়লা পোড়ায়। পরিবেশ বিজ্ঞানের মতে, এক টন কয়লা পোড়ালে প্রায় তিন টন কার্বন নিঃসরণ হয়। ফলে বায়ুমন্ডলে কার্বন ডাই অক্সাইডের ঘনত্ব দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে, এরই সাথে বৃদ্ধি পাচ্ছে সালফাল ডাই অক্সাইডের মাত্রা। অতি মাত্রায় বিষাক্ত এসব গ্যাস নিঃসরণের ফলে বিরূপ প্রভাব পরছে এ অঞ্চলের পরিবেশের উপর।
উপজেলায় প্রায় সাড়ে চার লাখ লোকের বাস। ভূখন্ডের প্রায় একতৃতীয়াংশই হচ্ছে পাহাড়ি অঞ্চল। উপজেলা প্রশাসন থেকে জানা যায়, এরই মধ্যে গড়ে ইঠেছে ৬০টি ইটের ভাটা। জিগজ্যাগ পদ্ধতিতে স্থাপন করা এসব ভাটার সব গুলোই গড়ে তোলা হয়েছে ফসলী জমি, আবাসিক এলাকা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আশেপাশে। ইটভাটা স্থাপনের জন্য পরিবেশ অধিদপ্তরের যে নীতিমালা রয়েছে তার মধ্যে পড়ে এমন একটি ভাটাও নেই। ইট পেড়ানোর জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হয় কয়লা। পরিবেশ বিজ্ঞানের মতে এক টন কয়লা পোড়ালে প্রায় তিন টন কার্বন ডাই অক্সাইড নিঃসরণ হয়। ইটভাটাগুলোর মালিক সূত্রে জানা যায়, বছরে ৫ থেকে ৬ মাস সময় ধরে চলে ইট পোড়ানো কাজ।
এক লাখ ইট পোড়াতে প্রায় ২০ টন কয়লা লাগে। প্রতিট ভাটা মৌসুমে ৪০ খেকে ৪৫ লাখ ইট পোড়ায়। এ ক্ষেত্রে প্রতি ভাটায় ইট পোড়াতে শুরু থেকে মৌসুম শেষ পর্যন্ত সর্বনিম্ন কয়লা লাগে ১ হাজার থেকে ১ হাজার দুইশ টন। অর্থাৎ সর্বনিম্ন প্রতি ভাটায় ১ হাজার টন কয়লা পোড়ায় এমন হিসেব ধরলে ৬০টি ভাটায় কয়লা লাগে ৬০ হাজার টন। এ থেকে বিষাক্ত কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ ১ লাখ ৮০ হাজার টন। সবগুলো ভাটা মিলে প্রতিদিন কয়লা পোড়াচ্ছে প্রায় ৩৩৩ টন এবং এ থেকে প্রতিদিন কার্বন নিঃসরণ হচ্ছে ১ হাজার টন।
পরিবেশবিদের মতে, আমাদের দেশ এবং অন্যান্য দেশের তুলনায় ভারতীয় কয়লায় ১০ থকে ১২ ভাগ সালফার থাকে। দামে কম থাকায় ভাটা মালিকদের কাছে ভারতীয় কয়লাই পছন্দের বলে জানা যায়।
বিষাক্ত এ গ্যাস দ্রুত পরিমন্ডলে ছড়িয়ে পড়ছে এবং এ অঞ্চলের তাপমাত্রা দিনদিন বেড়ে যাচ্ছে। এর বিরূপ প্রভাব পড়ছে পরিবেশ ও জীববৈচিত্রের উপর। মানুষের শ্বাসকষ্ট ও হার্টের রোগসহ দেখা দিচ্ছে নানাবিধ রোগ। এর প্রভাবে পড়ছে বিভিন্ন ধরনের ফসলসহ ফলদবৃক্ষের উপর। নারিকেল গাছে ডাব আছে কিন্তু ভিতরে পানি নেই। আম গাছে আম ধরে কিন্তু তা বড় হয় না। গত ভাটার মৌসুমে উপজেলার হাজীপুর মানিকপুর এলাকায় ফরিদ ইটভাটার বিষাক্ত ধোয়ায় বোরো ধানের প্রায় ২৫ একর জমির ধান পুরে যায়। এ নিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা উপজেলা চেয়ারম্যান বরাবর ক্ষতিপূরণ চেয়ে লিখিত আবেদন করেন।
এ বিষয়ে টাঙ্গাইল পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো.মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, উপজেলার ভাটাগুলোর পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি নেই। তাহলে কিভাবে অনুমোদনবিহীন ভাটাগুলো চলছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মালিকপক্ষ আদালতে রিট করে ইট পোড়াচ্ছে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ^বিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ড.এ এস এম সাদত প্রতিবেদক বলেন, এক টন কয়লা পোড়ালে প্রায় তিন টন কার্বন ডাই অক্সাইড নিঃসরণ হয় সাথে ক্ষতিকর সালফার ডাই অক্সাইডও নিঃসরণ হয়। এসব বিষাক্ত গ্যাস পরিবেশ ও মানব স্বাস্থের জন্য ক্ষতিকর। বায়ুমন্ডলে সালফার ডাই অক্সাইড ও কার্বন যৌগসমূহ থেকে সৃষ্ট গ্রিন হাউজ গ্যাস বনের জন্য অতি মারাত্মক এসিড বৃষ্টি ঘটাবে। জীববৈচিত্রসহ এলাকার মানুষের কৃষি ও স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়বে।
স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ও বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) এর যুগ্ন-সম্পাদক অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, কয়লা পোড়নোর ফলে যে ধোয়ার সৃস্টি হয় তা শুধু জীববৈচিত্র্য নয়, আমাদের পরিবেশের জন্যও মারাত্মক ক্ষতিকর।