ঘটনার শুরু ২০১৬ সাল থেকে। চাঁদা না পেয়ে নিরীহ হিন্দু সংখ্যালঘুর দোকনে তালা লাগিয়ে দিয়েছে স্থানীয় ইউনিয়ন যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের কিছু নামধারী নেতা। কিন্তু প্রায় চার বছর পার হয়ে গেলেও তারা দোকান দখল করতে পারেনি। তাই পরিবারের একমাত্র ছেলেকে মেরে ফেলার চেষ্টা করছে মির্জাপুর উপজেলার মহেড়া ইউনিয়ন যুবলীগের বাবু, আফসার, শাহীন, চেরাগ আলী ও মহেড়া ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক ইউসুফ আলী নবীন ও আফসারের পিতা আশ্রম। এই বিষয়ে ইউপি চেয়ারম্যান বাদশা মিয়ার কাছে প্রতিকার চেয়ে দরখাস্ত করলেও তার কোন প্রতিকার পাননি ভ‚ক্তভোগী পরিবার।
এতদিন পরিবারটির সদস্যদের নানাভাবে হুমকী ধমকী দিয়ে যাচ্ছিল। তারই ধারাবাহিকতায় এবছর ১২ আগস্ট ঐ জায়গার মালিক বিপুলকে প্রাণে মেরে ফেলার উদ্দেশ্যে ফাঁকা রাস্তায় প্রাইভেট কার দিয়ে চাপা দেয় উক্ত ব্যক্তিরা বলে অভিযোগ ভ‚ক্তভোগী পরিবারের। ঐ ঘটনায় বিপুলের দুটি পা ও একটি হাত ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যায়। প্রায় দুই মাস পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসার পর বাড়িতে শয্যাশায়ী হয়ে পরে আছে।
এছাড়াও অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে এলাকায় মাদক, অবৈধ বাংলা ড্রেজার, জমি দখল সহ সকল প্রকার অসামাজিক কার্যকলাপের সাথে লিপ্ত থাকার অভিযোগও পাওয়া গেছে।
ঐ নেতা-কর্মীরা এতটাই ভয়ঙ্কর যে, কেউ তাদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে মুখ খুলতে রাজি হয়নি। যে ২/১ জন কথা বলেছে, তারাও প্রতিবেদকের ক্যামেরা, মোবাইল নিজ হাতে বন্ধ করে দিয়ে কথা বলেছে, কেউ ঘরের ভিতরে, কেউ গ্রামের বাইরে এসে। প্রতিবেদক ঐ স্থানে যাওয়ার পরই ঐ নেতাদের বাহামভ‚ক্ত কয়েকজন সন্ত্রাসী তাদের দিকে নজর রাখতে শুরু করে।
ঘটনার বিবরণে জানা যায়, মির্জাপুর উপজেলার ছাওয়ালী বাজারের উত্তর পাশের্^র নদীয়া সড়কের পাশের্^র বাসিন্দা জিতু রবি দাস ২০১৬ সালের প্রথম দিকে আধা শতাংশ জমি বিক্রি করে। বিক্রির অপরাধে ওই নিরীহ পরিবারের কাছে পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দাবী করে, আর তাদের দাবিকৃত চাঁদা না দেয়ায় চার বছর যাবৎ তাদের দোকানে তালা দিয়ে রেখেছে যুবলীগ নামধারী সন্ত্রাসীরা। বিষয়টি জানিয়েছেন ভক্তগোভাগীরা।
ঘটনাস্থল মির্জাপুর উপজেলার মহেড়া ইউনিয়নের ছাওয়ালী বাজারে গিয়ে জানা গেছে, ওই বাজারের বাসিন্দা জীতু রবি দাস পূর্ব পুরুষের আমল থেকেই নগর ছাওয়ালী মৌজার ১৩৪ নম্বর খতিয়ানের ২৬০ দাগের ৫ শতাংশ জায়গায় বসবাস করছেন। শারীরিক অসুস্থতার কারণে প্রায় পাঁচ বছর আগে তাঁর মেয়ের ঘরের নাতি বিপুল রবি দাসের নামে পাঁচ শতাংশ জায়গা লিখে দিয়ে সেখানেই পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বসবাস করে আসছেন। এর মধ্যে দোকান পজেশনে থাকা প্রায় এক শতাংশ জায়গা পার্শ্ববর্তী ভাতকুড়া গ্রামের সিরাজুল ইসলাম কাপড়ের দোকান দিতেন। সিরাজুল সেখান থেকে চলে যাওয়ার পর নাতনীর বিয়ের কারণে প্রায় তিন মাস আগে জীতু রবি দাস পার্শ্ববর্তী ভাতকুড়া গ্রামের হুমায়ুন কবিরের কাছে দোকান পজেশনের প্রায় আধা শতাংশ (৯ ফুট বাই ১০ ফুট) জায়গা দুই লাখ টাকায় বিক্রি করেন। এছাড়া সিরাজুলকে পুরাতন টিনের ঘরের মূল্য বাবদ এক লাখ টাকা দেওয়া হয়।
জীতুর মেয়ে মায়া রবি দাস ও তার স্বামী বাবুল রবি দাস জানান, পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা না দেয়ায় চার বছর যাবৎ তারা আমাদের দোকানে তালা লাগিয়ে রেখেছে। জায়গা বিক্রির দিন থেকেই সন্ত্রাসীরা তাদের নানাভাবে হুমকী দিচ্ছে। আমার ছেলেকে গাড়ি চাপা দিয়ে মেরে ফেলার চেষ্টা করেছে। মামলা করেও কোন প্রতিকার পাইনি। নির্যাতন আরো বেড়েছে।
সিরাজুল ইসলাম জানান, তিনি দীর্ঘ দিন ওই জমিতে ঘর তুলে কাপড়ের দোকান করেছেন। জায়গাটি জীতুর হওয়ায় জায়গা ছেড়ে দিয়েছি এবং ঘর বাবদ এক লাখ টাকা নিয়েছি। যারা ঘরে তালা দিয়েছে তারা অন্যায় কাজ করেছেন।
শাহীন ও ইউসুফ আলী নবীন জানান, তারা এ ঘটনার সাথে জড়িত নয়। তবে ওই পরিবারের বিপদে আপদে আমরা সব সময় তাদের পাশে ছিলাম। আমাদের না জানিয়ে জমি বিক্রি করায় ক্ষোভে ছেলেরা তালা দিয়েছে বলে তারা উল্লেখ করেন।
মির্জাপুরের মহেড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বাদশা মিয়া জানান, ঘটনাটি আমি কিছুটা শুনেছি। ঐ পরিবার একবার আমার কাছে এসেছিল। তারপর আর আসেছি। আমার কাছে আসলে আমি ঘটনাটির মিমাংসা করার চেষ্টা করব বলেও তিনি জানান।
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ৫ মার্চ মজলুমের কণ্ঠ, দৈনিক দেশবাসী, প্রগতির আলো, কালের ¯্রােত, ইত্তেফাক, সমকাল, মানবকণ্ঠ, ইনকিলাব সহ আরো বেশ কয়েকটি জাতীয় পত্রিকায় সংবাদটি ফলাও করে প্রকাশিত হয়েছিল। তখন মির্জাপুর উপজেলা ও পুলিশ প্রশাসন থেকে দোকানটির তালা খুলে দিয়েছিল। তারপর আবার তারা অন্য একটি দোকানে তালা দিয়ে দোকানটি চেরাগ আলী নামের এক ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসীর বলে দাবি করে যাচ্ছেন।