গত বছরের জুলাই ও আগস্টের গণআন্দোলনের এক বছর পূর্তিতে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি, আন্দোলনের সাফল্য ও সীমাবদ্ধতা নিয়ে এক টেলিভিশন আলোচনায় মতামত দিয়েছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম মাওলা রনি। আলোচনায় তিনি বলেন, ২০২৪ সালের ঐতিহাসিক জুলাই-আগস্টে বাঙালির বিক্ষোভ-প্রতিবাদের ঐতিহ্য নতুন মাত্রা পেয়েছে, তবে এটিকে তিনি ‘বিপ্লব’ নয়, ‘গণবিস্ফোরণ’ হিসেবে অভিহিত করেন।
রনি বলেন, ‘আমাদের দেশে এটাকে এখনো বিপ্লব বলা যাবে না, কারণ বিপ্লব দীর্ঘদিন ধরে নেতা তৈরি করে, যুদ্ধ করে জনপ্রিয়তা পায়। গত বছরের ঘটনা ছিল হঠাৎ এক গণবিস্ফোরণ—যেখানে গৃহবধূ, এমনকি শিশুরাও রাস্তায় নেমেছিল।’ তাঁর মতে, ১৮ কোটি মানুষের মধ্যে প্রায় ১০–১২ কোটি মানুষ শারীরিক বা মানসিকভাবে এই বিস্ফোরণের সাথে যুক্ত ছিলেন।
আন্দোলনের সীমাবদ্ধতা প্রসঙ্গে রনি বলেন, ‘বিপ্লব সবসময় তার বিপ্লবীদেরই খেয়ে ফেলে। আন্দোলনের গতি আর আবেগ ছিল, কিন্তু কোনো দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ছিল না। কৃতিত্ব কে নেবে—এ নিয়ে বিভক্তি দেখা গেছে।’
বর্তমান তরুণ নেতৃত্বের অভাব নিয়েও হতাশা প্রকাশ করেন তিনি। তাঁর মতে, ‘নেতৃত্বে দরকার উদ্দীপনামূলক ভাষণ, মানুষের অন্তরে পৌঁছানোর মতো ক্যারিশমা—যা এখন আর দেখা যাচ্ছে না।’
আন্দোলনের এক বছর পরও কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন না আসায় হতাশ রনি বলেন, ‘যাদের একসময় মানবতাবাদী মনে করা হতো, তারাই আজ ক্ষমতার অপব্যবহার করছে। নতুন দরবেশ, চাঁদাবাজ ও জালেম তৈরি হচ্ছে।’
বর্তমান রাজনৈতিক বিতর্কের কেন্দ্রে থাকা সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন পদ্ধতি নিয়েও তিনি মত দেন। তাঁর মতে, এ দাবি জোরালো হলেও বড় দলগুলোর জন্য এটি অস্বস্তিকর, তবে ছোট দল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের জন্য সম্ভাবনা তৈরি করবে।
রনি বলেন, ‘দেড় লাখে যদি আপনি একটা আসন দেন, তাহলে সারা দেশের ভোট মিলিয়ে ১৫–২০টি আসন সহজেই পাওয়া যাবে। তখন নেতা নিজে পরিবারের সবাইকে এমপি বানাতে পারবেন। তখন আর বড় দলের পেছনে ঘুরতে হবে না।’
বিএনপির সম্ভাবনা নিয়েও হতাশা প্রকাশ করেন রনি। তাঁর ভাষায়, ‘বিএনপি ভাবে যে কোনোভাবে নির্বাচন হলেও তারা ২৮০টি আসন পাবে। এ জন্য রাষ্ট্রের সম্পদ আর সুবিধা তাদের প্রাপ্য—এ ভাবনা থেকেই তারা অন্যদের শত্রু মনে করছে।’ সবশেষে রনি বলেন, ‘ভালো কাজ আর জনকল্যাণ ছাড়া দেশে স্থায়ী পরিবর্তন সম্ভব নয়। কিন্তু বর্তমান নেতৃত্বে সে ধারার কোনো ছাপ নেই।’