ঝিনাইদহের মহেশপুর সীমান্তে বাংলাদেশিদের ওপর ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের সহিংসতা ও নির্যাতন বেড়েই চলেছে। গত দুই মাসে একের পর এক ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ও গুরুতর আহত হয়েছেন একাধিক বাংলাদেশি। এসব ঘটনায় স্থানীয়দের মধ্যে চরম আতঙ্ক ও ক্ষোভ বিরাজ করছে।
সবশেষ ২ মে রাতে মহেশপুর উপজেলার পেপুলবাড়িয়া গ্রামের রিয়াজ হোসেন সীমান্তের জিরো পয়েন্টে গেলে বিএসএফ হঠাৎ গুলি চালায়। এতে গুলিবিদ্ধ হন রিয়াজ। তাকে উদ্ধার করে প্রথমে জীবননগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, পরে যশোর ও অবশেষে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তার অবস্থা এখনও সংকটাপন্ন।
এর মাত্র পাঁচ দিন আগে, ২৭ এপ্রিল ভোরে গোপালপুর গ্রামের ওবায়দুল হক বিএসএফের গুলিতে নিহত হন। তার মরদেহ ভারতের চব্বিশ পরগণার বাগদা থানা পুলিশ বস্তায় ভরে নিয়ে যায়। এখনো মরদেহ দেশে ফেরত আনা সম্ভব হয়নি।
তালিকায় রয়েছে আরও কয়েকটি মর্মান্তিক ঘটনা। ৮ এপ্রিল পলিয়ানপুর সীমান্তে ওয়াসিম নামের এক যুবককে নির্যাতন করে ইছামতি নদীতে ফেলে দেয় বিএসএফ। এখনও তার মরদেহ ফেরত পাওয়া যায়নি।
১৬ মার্চ কুমিল্লাপাড়া সীমান্তে নির্যাতনের শিকার হন ফারুক হোসেন এবং ২৭ ফেব্রুয়ারি বাঘাডাঙ্গা সীমান্তে একইভাবে নির্যাতনের শিকার হন বিল্লাল সানা।
স্থানীয় মানবাধিকার কর্মী আমিনুর রহমান টুকু বলেন, “বিএসএফের এমন নিষ্ঠুর আচরণ আন্তর্জাতিক আইনের চরম লঙ্ঘন। নির্বিচারে গুলি ও নির্যাতনের মাধ্যমে তারা মানবাধিকারের চূড়ান্ত অবমূল্যায়ন করছে।”
বীর মুক্তিযোদ্ধা ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি লিয়াকত হোসেন বলেন, “এটা কোনো বন্ধুত্বপূর্ণ দেশের আচরণ হতে পারে না। সরকারকে এখনই জোরালো পদক্ষেপ নিতে হবে।”
বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে মহেশপুর ৫৮ বিজিবির অধিনায়কের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।
ঝিনাইদহের জেলা প্রশাসক আব্দুল আওয়াল জানান, “সীমান্তবাসীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে আমরা ইতিমধ্যে উদ্যোগ নিয়েছি। বিজিবি-বিএসএফের মধ্যে এ নিয়ে বৈঠক হয়েছে এবং আশাবাদী, সমস্যা সমাধানে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”