বিশেষ প্রতিবেদক : দীর্ঘ একযুগ পর সম্মেলনের মাধ্যমে টাঙ্গাইল জেলা ছাত্রলীগের কমিটি গঠনের পর বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে প্রকৃত নেতা-কর্মীদের মধ্যে।
দীর্ঘদিন পর সম্মেলনের মাধ্যমে আশানুরূপ কমিটি গঠিত হয়নি বলেও জানান বর্তমান ও সাবেক অনেক নেতাকর্মী।
তাদের অনেকের সাথে কথা বললে এই বিরূপ প্রতিক্রিয়া জানা যায়।
তাদের সাথে কথা বললে তারা জানান, টাঙ্গাইলের গোপালপুর এবং সখীপুর উপজেলার দুই ছাত্রলীগ নেতাকে দিয়ে ছাত্রলীগের জেলা কমিটি গঠন করায় পুরো জেলা জুড়ে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বইছে।
এ নিয়ে চাপা ক্ষোভ দেখা দিয়েছে সংগঠনটির নেতাকর্মীদের মাঝে।
প্রকাশ্যে কেই কিছু না বললেও অনেক নেতা কর্মী এখন ছাত্রলীগের রাজনীতি ছেড়ে দিতে চাইছেন।
তবে সাবেক নেতাকর্মীরা বলছেন, জেলা কমিটিতে যারা ত্যাগী নেতা এবং শহরে অবস্থান; এছাড়া ছাত্রলীগের রাজনীতিতে সক্রিয় রয়েছেন, তাদের মধ্যে থেকেই বছাই করে কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পদ সভাপতি- সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দিলে সংগঠনটি আরো চাঙ্গা হতো।
ঘটনার শুরু যেখান থেকে –
গত শনিবার (৪ ডিসেম্বর) রাতে টাঙ্গাইল সার্কিট হাউজে ছাত্রলীগের নতুন কমিটির ঘোষনা দেন কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য।
এতে সভাপতি নির্বাচন করা হয় গোপালপুর উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম-আহবায়ক সোহানুর রহমান সোহানকে।
আর সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হয় সখীপুর উপজেলার বহেড়াতৈল ইউনিয়নের গোহাইল বাড়ি গ্রামের মো. ইলিয়াস হাসানকে।
জানা যায়, ২০১৭ সালের ১৯ মে গঠিত ছাত্রলীগের আহবায়ক করা হয়েছিল মো. মোস্তাফিজুর রহমান সোহেলকে।
সেই আহবায়ক কমিটিতে যুগ্ম-আহবায়ক ছিলেন মো. তানভীরুল ইসলাম হিমেল, রনি আহম্মেদ, মো. শফিউল আলম মুকুল, মো. রাশেদুল হাসান জনি এবং শামীম আল মামুন।
নব-নির্বাচিত সভাপতি সোহানুর রহমান সোহান সেই আহবায়ক কমিটির ১১ নম্বর সদস্য ও গোপালপুর উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম-আহবায়ক ছিলেন।
আর নব-নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক বিলুপ্ত আহবায়ক কমিটির ২৯ নম্বর সদস্য ও সরকারি সা’দত কলেজ শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম-আহবায়ক ছিলেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সদ্য বিলুপ্ত হওয়া কমিটির সাবেক একাধিক নেতা জানান, জেলার রাজনীতিতে সোহানুর একেবারেই নতুন; থাকেন গোপালপুরে।
তাছাড়া তিনি জেলা ছাত্রলীগের কার্যালয় চেনেন কিনা এ নিয়েও তার সন্দেহ রয়েছে।
আর সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে ইলিয়াস হাসানকে। তিনিতো থাকেন সরকারি সা’দত কলেজের মেসে।
তাদের এই দুইজনকে জেলা কমিটির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এটা কোনভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।
তাই তারা ঠিক করেছেন ওই দুইজনের নেতৃত্বে থাকার চেয়ে ছাত্রলীগের রাজনীতি ছেড়ে দিবেন।
তারা আরো জানান, বিগত সময়ে ছাত্রলীগের নতুন কমিটি গঠন করা নিয়ে শহরে আনন্দ মিছিলসহ মিষ্টি বিতরন থেকে শুরু করে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হতো; কিন্তু এবার পুরোটাই ভিন্ন।
নতুন কমিটি ঘোষনা করার পর থেকেই সংগঠনটির নেতাকর্মীরা ছাত্রলীগের রাজনীতি ছেড়ে দিতে চাইছেন।
তারা জানিয়েছেন, স্বাধীনতার পর থেকে সর্বশেষ আহবায়ক কমিটির নেতৃত্বের একটা মানদন্ড ছিল।
আন্দোলন, সংগ্রামসহ সকল কিছুতেই ছাত্রলীগের ভূমিকা অপরিসীম। বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া প্রাণের এই সংগঠনকে আজ এই কমিটির ঘোষনার মধ্য দিয়ে গলা টিপে হত্যা করা হয়েছে; যা কোন ভাবেই মেনে নেয়া যায় না।
এমন নেতৃত্বের কারণে প্রকৃত ও মেধাবি শিক্ষার্থীরা আর কখনও ছাত্রলীগের রাজনীতি করতে ইচ্ছা দেখাবে না।
নেতৃবৃন্দের কথা –
টাঙ্গাইল শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সাবেক ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এম এ রৌফ জানান, জেলা কমিটি যাদের নিয়ে গঠন করা হয়েছে তা কোনভাবেই সঠিক হয়নি।
সংগঠনে অনেক ত্যাগী নেতা রয়েছে তাদের এখনো বয়স আছে ছাত্রলীগ করার।
কিন্তু এভাবে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক দুইজনকে দুই উপজেলা থেকে এনে কমিটিতে বড় পদে দায়িত্ব দেওয়া মানে জেলার ছাত্রলীগতে ধ্বংস করে দেওয়া।
তবে যে কোন এক পদে শহরের একজন ত্যাগী নেতা দেখে দায়িত্ব দিলে ভালো হতো; এভাবে ত্যাগী নেতাদের বাদ দিয়ে কমিটি গঠন করায় এখন আর ছাত্ররা রাজনীতিতে আসতে চাইবে না।
জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক এবং জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ফারুক হোসেন মানিক জানান, কেন্দ্রীয় নেতারা আমাদের চেয়ে অনেক ভালো বোঝেন এবং জানেন।
তারা যে কমিটি গঠন করে দিয়েছে এজন্য অভিনন্দন জানাই; একই সাথে এই নতুন কমিটির সভাপতি-সম্পাদকের পদটি শহর থেকে কয়েকজন ত্যাগী নেতাদের মধ্য থেকে বাছাই করে দিলে ভালো হতো।
টাঙ্গাইল পৌরসভার মেয়র শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং সাবেক ছাত্রলীগ নেতা এস এম সিরাজুল হক আলমগীর জানান, কেন্দ্রীয় নেতাদের বিরুদ্ধে আমার কোন বক্তব্য নেই।
তবে তারা যা ভাল বুঝেছেন তাই করেছেন। তিনি এই নতুন কমিটিকে অভিনন্দন জানান। সম্পাদনা – অলক কুমার