আদালত প্রতিবেদক : টাঙ্গাইলে জেলা জজ আদালতের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক খালেদা ইয়াসমিনকে হত্যার হুমকি দিয়ে চিঠি দিয়েছে একটি জঙ্গি সংগঠন।
এছাড়া তাকে হত্যা করতে ব্যর্থ হলে তার ঘনিষ্ট স্বজন আউট সোর্সিং হিসেবে প্রসেস সার্ভার পদে চাকুরীরত এক ছেলেকে জবাই করে হত্যার হুমকিও দেয়া হয়েছে।
শুক্রবার (২৭ আগস্ট) নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক খালেদা ইয়াসমিন নিজেই এতথ্যটি নিশ্চিত করেছেন।
আদালত সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার (২৬ আগস্ট) একটি খাকি খামে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক খালেদা ইয়াসমিনের কাছে একটি চিঠি আসে।
সেখানে প্রেরকের স্থানে জুবায়ের রহমান লেখা রয়েছে। পরে শুক্রবার বিষয়টি জানাজানি হয়।
এ নিয়ে পুরো বিচারকদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।
এতে নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন বিচারক খালেদা ইয়াসমিনসহ তার পরিবারের লোকজন।
বিচারককে হত্যার হুমকি দিয়ে পাঠানো চিঠিতে লেখা হুবুহু তুলে ধরা হলো, ‘ম্যাডাম- আপনাকে উদ্দেশ্য করে চিঠি দিলাম।
বিস্তারিত পড়ে দেখুন। আমরা জঙ্গি সংগঠনের লোক। তাই জীবনে চলার পথে অনেক অন্যায় কাজ করেছি। এমনকি এখনও করি।
আমরা যখন যাকে ট্রার্গেট করি তখন তাকে ছলে বলে কৌশলে হত্যা করি। এটাই আমাদের পেশা। এবার আপনাকে হত্যা করার পালা।
কারণ আপনি নারী ও শিশু কোর্টে আসার পর থেকে এ পর্যন্ত অনেকটি বড় ধরনের মামলার রায় দিয়েছেন।
তাতে আমাদের লোকজনের খুব বড় ধরনের ক্ষতি হয়েছে। তাই আল্লাহর দোহাই দিয়ে বলছি যদি নিজের জীবনের প্রতি মায়া থাকে তাহলে টাঙ্গাইল থেকে বদলি হয়ে চলে যান।
যদি কথা না শুনেন তাহলে আমরা আপনাকে হত্যা করতে বাধ্য হবো।
আর আমাদেরকে যারা সহযোগিতা করতেছে তারা কয়েকজন আইনজীবী এমনকি জজ কোর্ট ও ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট এর স্টাফদের সমন্বয়ে।
আপনাকে যেভাবে হত্যা করা হবে তার ২টি নমুনা –
‘টার্গেট-১ : অফিস হতে বাসার মধ্যে আসা যাওয়ার পথে আপনার গাড়ীতে বোমা নিক্ষেপ করা হবে।
টার্গেট-২ : অফিস চলাকালীন সময়ে লোকজনের ভিড়ের মধ্যে গিয়ে আপনার এজলাশ বা খাসকামড়া এর মধ্যে বোমা নিক্ষেপ করা হবে।’
তবে একটা কথা মনে রাখবেন আপনাকে পুলিশ যতই নিরাপত্তার মধ্যে রাখুক না কেন আপনাকে আমাদের বোমার হাত থেকে রক্ষা করতে পারবে না।
তাই প্রাণ বাঁচাতে চাইলে টাঙ্গাইল হতে তাড়াতাড়ি বদলি হয়ে চলে যান।
চিঠিতে আরও বলা হয়– যদি আপনাকে হত্যা করতে ব্যর্থ হই; তাহলে আমাদের হিংস্রতার টার্গেট রয়েছে আরেকটি।
সেটা হলো – আপনার নারী ও শিশু কোর্টে আউট সোর্সিং’ হিসেবে প্রসেস সার্ভার পদে যে ছেলেটি চাকরি করে সে নাকি আপনার খুব ঘনিষ্ট আত্মীয়।
তাই আমাদের লক্ষ্য ছেলেটাকে অফিসে আসা যাওয়ার পথে বা কোর্ট থেকে বাহিরে যাওয়া মাত্রই আমরা ছেলেটাকে অপহরণ করবো।
পরে গহীন জায়গায় নিয়ে আটকিয়ে রেখে কমপক্ষে ২০ লাখ টাকা মুক্তিপন দাবি করবো।
আর যদি টাকা না দিতে পারেন তাহলে ছেলেটাকে জবাই করে হত্যা করা হবে; পরে লাশ যমুনা নদীতে ফেলে দেয়া হবে। কথাটা মনে রাখবেন। ইতি – জঙ্গি সংগঠন।
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক খালেদা ইয়াসমিন বলেন, ‘চিঠিটি পাওয়ার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। পরিবারের লোকজন নিয়ে আতঙ্কের মধ্যে রয়েছি।’
টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার সঞ্জিত কুমার রায় বলেন, ‘বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে।
সেই সাথে বিচারক খালেদা ইয়াসমিন ও তার পরিবারের লোকজনদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে।’ সম্পাদনা – অলক কুমার