গত দুই সপ্তাহের টানা বৃষ্টিপাত ও মেঘনা নদীর অস্বাভাবিক জোয়ারে লক্ষ্মীপুরের রামগতি ও কমলনগরের অন্তত ২৮টি গ্রাম পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে কয়েক হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে চরম দুর্ভোগে দিন কাটাচ্ছেন।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, প্রতি বছরই বর্ষা মৌসুমে একই অবস্থা দেখা দেয়। ত্রাণ সহায়তা মিললেও এই দুর্ভোগ থেকে স্থায়ী মুক্তি মেলেনি। এবারো টানা বৃষ্টিপাত ও নদীর জোয়ারের পানি লোকালয়ে ঢুকে পড়ায় রাস্তাঘাট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও ঘরবাড়ি পানির নিচে তলিয়ে গেছে।
জানা গেছে, রামগতি উপজেলার ৮টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা এবং কমলনগরের ৯টি ইউনিয়নের বেশিরভাগ এলাকায় বৃষ্টির পানি ও মেঘনার অতিরিক্ত জোয়ারের কারণে প্লাবিত হয়েছে। সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত চরকাদিরা, তোরাবগঞ্জ, চরবাদাম, চরপোড়াগাছা ও চরগাজী ইউনিয়নের বাসিন্দারা এখন পানিবন্দি।
স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, গুরুত্বপূর্ণ ভূলুয়া নদী ও খালগুলো দখল করে মাছের ঘের, অবৈধ বাঁধ ও স্থাপনা নির্মাণের কারণে পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এ কারণে জলাবদ্ধতা ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। হাজিরহাট জারিরদোনা শাখা খাল, চরলরেন্স বাজার খাল, চরপাগলা খালসহ অনেক খালের স্বাভাবিক প্রবাহও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তারা।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, লক্ষ্মীপুর জেলায় এবার সর্বোচ্চ ১৫১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে। এভাবে বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে গত বছরের মতো এবারও বড় ধরনের বন্যার শঙ্কা রয়েছে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য ও বাসিন্দারা জানিয়েছেন, চররমিজ, বড়খেরী, চরগাজী, চরমার্টিন ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে ঘরবাড়ি ও রাস্তাঘাট ডুবে গেছে। বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে অনেক এলাকায়। হাটবাজার ও জরুরি প্রয়োজন মেটাতেও দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে মানুষকে।
রামগতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ আমজাদ হোসেন বলেন, নদীর তীরবর্তী এলাকা হওয়ায় অল্প বৃষ্টি হলেই পানি ঢুকে পড়ে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় পর্যাপ্ত আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। কমলনগর ইউএনও রাহাত উজ জামানও জানিয়েছেন, জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে দুর্গত এলাকার খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে এবং আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
স্থানীয়রা ত্রাণের বদলে স্থায়ী সমাধান চান যাতে প্রতি বছর বৃষ্টি আর জোয়ারে এমন দুর্ভোগের পুনরাবৃত্তি না ঘটে।