মাদারীপুরের রাজৈর থানা পুলিশের দুই এএসআই নারী নিয়ে অশ্লীল নৃত্য করেছিলেন, সেই নৃত্যের কয়েকটি ভিডিও ক্লিপ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। রাজৈর থানায় কর্মরত ওই দুই এএসআইয়ের সঙ্গে যোগ হয়েছে যুবলীগের কয়েক নেতাও। এতে সমালোচনার ঝড় উঠেছে জেলাজুড়ে। বিষয়টি জানাজানির পর অভিযুক্তদের ক্লোজড করা হয়েছে।
এ বিষয়ে পুলিশ সুপারের দাবি, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে শৃঙ্খলাবহির্ভূত কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত হওয়ায় বিভাগীয় মামলা হবে। আর অভিযুক্তদের দাবি, এটি তাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র।
অভিযুক্তরা হলেন এএসআই মো. হাদিবুর রহমান ও এএসআই স্বপন অধিকারী।
ভাইরাল ভিডিওতে দেখা যায়, মাদারীপুরের রাজৈর থানায় দুই এএসআই মো. হাদিবুর রহমান ও স্বপন অধিকারীর চারটি ভিডিও ক্লিপ এরই মধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। ভিডিওতে দেখা যায়, তারা একটি টিনশেড ঘরে মদ্যপ অবস্থায় একাধিক নারীকে নিয়ে নাচানাচি করছেন। এ সময় সিগারেটের ধোঁয়া উঁচিয়ে গানের তালে তালে উল্লাস করছে। আবার কখনো যুবলীগের কয়েক নেতাও নাচের তাল দিচ্ছেন, সেখানে উপজেলা যুবলীগ নেতা রাহাত হোসেনও ছিলেন।
দুই পুলিশ কর্মকর্তার মদ্যপ অবস্থায় অশ্লীল নৃত্য ভাইরাল
এক যুগ পর কারামুক্ত ডেসটিনির রফিকুল
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাজৈর উপজেলার কদমবাড়ি ইউনিয়নের নটাখোলা জগদীসের বাড়ি ও আনন্দপুরের ভবত শের বাড়ির সঙ্গে গ্যারেজে মাঝে মধ্যেই আসর বসান বিভিন্ন শ্রেণির বখাটেরা। যেখানে মদ, গাঁজাসহ অবৈধ কর্মকাণ্ড চলে। অভিযোগ আছে, বিভিন্ন সময় পুলিশ সদস্যদের নিয়ে বেশ কয়েকজন পলাতক যুবলীগ নেতাও সেখানে অশ্লীল কর্মকাণ্ড করে থাকেন। এমন কয়েকটি ভিডিও ক্লিপ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সমালোচনার মুখে পরে পুলিশ বিভাগ।
এ ব্যাপারে রাজৈর থানার ওসি মোহাম্মাদ মাসুদ খান কালবেলাকে বলেন, পুলিশ বাহিনী শৃঙ্খলা মেনে কাজ করেন। কোনো অবস্থায়ই আইনের বাইরে কিছু করতে পারেন না। যদি অন্যায় বা শৃঙ্খলা ভঙ্গের কাজ করেন, তার সেই কাজের দায়ভার পুলিশ বিভাগ নেবে না। অভিযুক্তদের বিষয় জানতে পেয়ে তাৎক্ষণিক পুলিশ সুপারকে অবহিত করা হয়। তিনি তাদের ক্লোজড করেছেন।
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে ভিন্ন ভিন্ন কথা বলেন অভিযুক্ত দুই এএসআই। এ বিষয়ে অভিযুক্ত স্বপন অধিকারী বলেন, ‘আমি বিনদাস মানুষ, মাঝেমধ্যে একটু আমোদ ফুর্তি করি। অনেক সময় আসামি ধরতে নানা কৌশল নিতে হয়। এতে যদি অন্যায় হয়, তাহলে আমি দোষী। আর অন্যায় না হলে কিছু করার নেই।’
অন্যজন মো. হাদিবুর রহমান বলেন, ‘আমার জন্মদিন উপলক্ষে কিছু দিন আগে বন্ধু-বান্ধব মিলে একটু আনন্দ-ফুর্তি করেছি। কিন্তু সেটা ভিডিও করে কে ভাইরাল করল, বিষয়টি বুঝে আসছে না। আমাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রও হতে পারে। তবে আমি ভুল শিকার করছি, এ রকম কাজ আর কখনো করব না।’
যুবলীগ নেতা রাহাত হোসেনের সঙ্গে ওই আসরে মাতলামি করেছেন কেন, এমন প্রশ্নের জবাবে হাদিবুর রহমান বলেন, ‘কে কে ছিল, সেটা জানি না। আমার বন্ধুরা মিলে এমন আয়োজন করেছিল, তাই সেখানে গিয়েছি। তা ছাড়া আমাদের শরীরে কোনো ইউনিফর্ম ছিল না। সবারই কম বেশি আনন্দ-ফুর্তি করার অধিকার আছে।’
অন্যদিকে মাদারীপুর জেলা পুলিশ সুপার মো. সাইফুজ্জামান বলেন, ‘পুলিশ বাহিনী অত্যন্ত শৃঙ্খলা মেনে কাজ করে। ইতোমধ্যে যে ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়েছে, সেটা অত্যন্ত নিন্দনীয়। কোনোভাবেই এটা পুলিশের সদস্য করতে পারে না। তাৎক্ষণিক অভিযুক্তদের পুলিশ লাইন্সে ক্লোজড করা হয়েছে। দ্রুত শৃঙ্খলা ভঙ্গ করায় বিভাগীয় মামলা করা হবে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে।’
উল্লেখ্য, অভিযুক্ত এই দুই কর্মকর্তার বিরদ্ধে মামলা বাণিজ্য, আসামিদের গ্রেপ্তার না করে অনৈতিক সুবিধা নেওয়াসহ নানা অভিযোগ রয়েছে সহকর্মীদের মধ্যেও। তবে ক্যামেরায় কথা বলতে রাজি হয়নি অনেকেই।
আর যুবলীগ নেতা রাহাত হোসেন পলাতক থাকায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তার পরিবার এসব বিষয় কথা বলতে রাজি হয়নি।