সারা দেশে প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের আতঙ্কে টাঙ্গাইলের নাগরপুরে জনজীবন স্থবির হয়ে গেছে। সরকারের দেওয়া অঘোষিত লকডাউন চলছে। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ায় গত ২৬ মার্চ থেকে এ উপজেলার সব হাট-বাজার, দোকানপাট, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখাসহ সর্বসাধারণকে অযথা বাইরে ঘোরাঘুরি না করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ফলে করোনা সংক্রমণ রোধে সরকারের অঘোষিত লকডাউনে কর্মহীন হয়ে পড়ে ভিক্ষুক, রিক্সাচালক, ভ্যানচালক, পরিবহণ শ্রমিক, রেস্টুরেন্ট শ্রমিক, কুলি, নির্মাণ শ্রমিক, ফেরিওয়ালা, দিনমজুর, দর্জি শ্রমিক, ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেল চালক ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার প্রায় ৩ হাজার নিম্ন আয়ের মানুষ।
তাদের হাতে কাজ নেই, ঘরে খাবার নেই। সরকার এসব কর্মহীন মানুষের জন্য খাদ্য সহায়তা দিচ্ছে। সরকারিভাবে নাগরপুর উপজেলায় এ পর্যন্ত ১৫শ পরিবারকে খাদ্য সহায়তা দেয়া হয়েছে। আরও বিভিন্ন ইউনিয়নে পাঁচশ পরিবারের মধ্যে খাদ্য সহায়তা দেয়ার প্রস্তুতি চলছে। আবার বরাদ্দ পেলে বাকিদের দেয়া হবে বলে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আবু বকর সিদ্দিকী জানিয়েছেন। কিন্তু কর্মহীন দরিদ্ররা এ সহায়তা পাচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ছাড়া যে পরিমাণ ত্রাণ বরাদ্দ, সেটিও প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল বলে জানা গেছে। প্রয়োজনের তাগিতে যারা ঘর থেকে বের হয়েছে তাদের উপার্জনও অনেক কমে গেছে। রিক্সা চালক রমজান জানান, প্রথম কয়েকদিন ঘর থেকে বের হতে পারিনি হাতে যে টাকা পয়সা ছিল তা শেষ হয়ে গেছে এখন রিক্সার চাকা ঘুরলে আমার পরিবারের পেট চলবে। নাগরপুর উপজেলা সিএনজি ও অটোরিক্সা শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মো. সোহাগ মিয়া বলেন, করোনা ভাইরাসের প্রভাবে আমাদের প্রায় ৯০০ শ্রমিক কর্মহীন হয়ে পড়েছে। আমরা সরকারিভাবে মাত্র ১০০ জনের ত্রাণ পেয়েছি যা আমাদের কর্মহীন শ্রমিকের তুলনায় অপ্রতুল।
এদিকে সরকারের পাশাপাশি এ উপজলার রাজনৈতিক দলের নেতা, জনপ্রতিনিধি ও সামাজিক সংগঠনের পক্ষ থেকে কর্মহীন মানুষের মধ্যে সেরকম ভাবে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করা হচ্ছে না। এখন পর্যন্ত শুধুমাত্র উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম-আহবায়ক ভক্ত গোপাল রাজবংশী পিন্টু ও শাহিনুর রহমান ছাড়া আর কেউ খাদ্য সামগ্রী নিয়ে কর্মহীন মানুষের পাশে দাড়ায়নি। তারা উপজেলার ২শত কর্মহীন পরিবারের মাঝে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করেন।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস সূত্রে জানা যায়, আপৎকালীন প্রকল্পের মাধ্যমে ১২টি ইউনিয়নে ২০ টন চাল ও ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে। যা কর্মহীন শ্রমজীবী মানুষের তুলনায় বরাদ্দ অপ্রতুল। তবে স্থানীয় সাংসদ আহসানুল ইসলাম টিটু আলু, ডাল, তেল ও সাবানের খরচ বাবদ ২ লাখ টাকা সাহায্য দিয়েছেন।
দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে করোনাভাইরাস রোধ ও চলমান পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকারের দেওয়া নির্দেশনা মানতে গিয়ে কর্মহীন হয়ে পড়েছে ৩ হাজার কর্মজীবি মানুষ। এতদিন ধরে নিম্ন আয়ের মানুষজন কর্মহীন থাকায় গচ্ছিত অর্থ খরচ করে চরম হতাশায় ভুগছে।