নিজস্ব প্রতিবেদক : কৃষিমন্ত্রী, জেলার সকল সংসদ সদস্য এবং জেলা আওয়ামী লীগ নেতাদের নিয়ে নিজ নির্বাচনী এলাকা টাঙ্গাইলের নাগরপুরে বড় জনসমাবেশ করলেন স্থানীয় সংসদ আহসানুল ইসলাম ওরফে টিটু।
উপজেলা আওয়ামী লীগের ব্যানারে সমাবেশ হলেও সেখানে যাননি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক এবং সংসদীয় আসনের দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশীরা।
এর মধ্য দিয়ে নাগরপুরে উপজেলা আওয়ামী লীগ ও সাংসদের মধ্যকার দ্বন্দ্বে চিত্রটি আরো স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
আরো পড়ুন – দেশে জিনিসপত্রের দাম একটু বেশি – কৃষিমন্ত্রী
স্থানীয় আওয়ামী লীগ সূত্র জানায়, টাঙ্গাইল-৬ (নাগরপুর-দেলদুয়ার) আসনের সংসদ সদস্য আহসানুল ইসলামের সাথে তীব্র দ্বন্দ্ব রয়েছে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাধারণ সম্পাদকসহ শীর্ষ নেতাদের।
সেই সাথে এই আসনের দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী সাবেক মন্ত্রী তারানা হালিম, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি তারেক শামস খান ওরফে হিমু ও ইনসাফ আলী ওসমানী, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাকিরুল ইসলাম ওরফে উইলিয়ামের সাথেও রয়েছে তীব্র দ্বন্দ্ব।
এরা সবাই একাট্টা হয়েছেন সংসদ সদস্য আহসানুল ইসলামের বিরুদ্ধে। কয়েক বছর ধরে সংসদ সদস্যের সাথে তাদের মুখ দেখা দেখি বন্ধ।
সংসদ সদস্য তার নিজের অনুসারীদের নিয়ে দলীয় কর্মসূচি পালন করেন।
অপরদিকে অন্যান্যরা উপজেলা আওয়ামী লীগের ব্যানারে পৃথকভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করেন।
সম্প্রতি জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নাগরপুরে বড় একটি সমাবেশ করার উদ্যোগ নেয়া হয়।
স্থানীয়রা জানান, এই সমাবেশকে কেন্দ্র করে নাগরপুরের রাজনৈতিক মহলে গুঞ্জন উঠেছিলো উপজেলা আওয়ামী লীগ, সকল মনোনয়ন প্রত্যাশী ও সংসদ সদস্যের মধ্যে যে দ্বন্দ্ব রয়েছে তার অবসান হবে।
তারা আরো জানান, জেলার নেতৃবৃন্দ ও মন্ত্রীর সমন্বয় ও মধ্যস্থতায় নাগরপুর আওয়ামী লীগের মধ্যে দ্বন্দ্ব আছে তার অবসান হবে।
কিন্তু তা হয়নি, বরং এমপির নেতৃত্বে এই সমাবেশে উপস্থিত হয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাধারণ সম্পাদক ও কৃষিমন্ত্রী এই দ্বন্দ্বকে আরো বড় করে দিলো।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্যদের বক্তব্য –
উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক খালিদ হোসেন জানান, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক আগামী অক্টোবরে প্রথম সপ্তাহে সমাবেশটি করার জন্য প্রস্তাব দেন।
তারা এই প্রস্তাবের কথা কৃষিমন্ত্রী মো. আব্দুর রাজ্জাক ও জেলা আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দকে জানান।
এই প্রস্তাব অগ্রাহ্য করে সংসদ সদস্য কৃষিমন্ত্রী ও জেলা আওয়ামী লীগ নেতাদের সাথে আলাপ করে ১৭ সেপ্টেম্বর সমাবেশের তারিখ নির্ধারণ করেন।
তিনি কারো সাথে সমন্বয় না করে একাই সমাবেশের প্রচারনা শুরু করেন। তখন অন্য সবাই এ সমাবেশ বয়কট করার সিদ্ধান্ত নেন।
এবিষয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কুদরত আলী বলেন, সংসদ সদস্য রোববার যে সমাবেশ করলো; তার সাথে উপজেলা আওয়ামী লীগের কোন সম্পর্ক নেই।
তিনি কারো সাথে সমন্বয় করেন নাই। এমপি হওয়ার পর থেকেই তিনি আওয়ামী লীগ নেতাদের এড়িয়ে চলেন।
তিনি বিএনপি-জামাতের লোকদের নিয়ে রাজনীতি করেন। কেন্দ্রীয় ও জেলার নেতাদের ম্যানেজ করে তিনি এই সমাবেশ করেছেন।
উপজেলা আওয়ামী লীগ পরবর্তীতে সমাবেশ করবেন বলেও তিনি জানান।
সভার বিষয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাকিরুল ইসলাম উইলিয়াম বলেন, সাংসদ উপজেলা আওয়ামী লীগের কোন প্রকার সমন্বয় করেন নাই।
তাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক সহ অন্যান্যরা উপস্থিত হন নাই।
অপরদিকে টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও নাগরপুর-দেলদুয়ার আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী তারেক শামস্ হিমু বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় সভানেত্রীর নির্দেশ- দল চালাবে উপজেলা আওয়ামী লীগ; আর সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বাস্তবায়ন ও মনিটরিং করবে এমপিরা।
কিন্তু নাগরপুর-দেলদুয়ারের এমপি উপজেলা আওয়ামী লীগকে বরাবরই দূরে সরায়ে রেখে দলটাকে তার আয়ত্বে নেয়ার জন্য সে প্রথম থেকেই চেষ্টা করে যাচ্ছিল।
সেখান থেকে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাথে তার বিরোধ শুরু হয়।
এই বিষয়ে বারবার প্রধানমন্ত্রী হুশিয়ারি দেয়ার পরও তিনি শোধরাননি। এর জন্য এমপিই সম্পূর্ণ রূপে দায়ী।
উপজেলা আওয়ামী লীগকে পাশ কাটিয়ে কৃষিমন্ত্রীকে এনে গতকাল যে অনুষ্ঠানটি হয়েছে; তারপর থেকে নাগরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের কর্মী ও সাধারণ জনগণ বিভ্রান্তিতে পড়েছে।
টিটুর অনুসারীদের কথা –
এ প্রসঙ্গে সাংসদ আহসানুল ইসলাম টিটু অনুসারী ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাহিদুল ইসলাম খান জানান, আজকের সমাবেশ যারা বয়কট করেছে তারা দলীয় শৃঙ্খলা মানেন না।
আরো পড়ুন – ভূঞাপুরে এমপি-মেয়রের পাল্টাপাল্টি নৌকা বাইচ, দুই গ্রুপের সংঘর্ষের আশঙ্কা
সংসদ সদস্য সবাইকে নিয়ে রাজনীতি করতে চান।
কিন্তু যারা সমাবেশে আসেননি তারা কৃষিমন্ত্রী মো. আব্দুর রাজ্জাক এবং জেলা আওয়ামী লীগকে অবজ্ঞা করেছেন।
নাগরপুর সরকারি কলেজ মাঠে বিকেলে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
সমাবেশে আরো যারা উপস্থিত ছিলেন –
এতে প্রধান অতিথি ছিলেন টাঙ্গাইল-১ (ধনবাড়ী-মধুপুর) আসনের সংসদ সদস্য কৃষিমন্ত্রী ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য মো. আব্দুর রাজ্জাক।
সভায় সভাপতিত্ব করেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মো. আনিসুর রহমান।
জনসভায় প্রধান বক্তা ছিলেন, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফজলুর রহমান খান।
সভাটি সঞ্চালন করেন- উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সম্পাদক আব্দুল আলীম।
আরো পড়ুন – হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটনে মাঠ কাজ করছে র্যাব ও পুলিশ
অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও টাঙ্গাইল-৮ (বাসাইল-সখীপুর) আসনের সংসদ সদস্য জোয়াহেরুল ইসলাম, টাঙ্গাইল-৩ (ঘাটাইল) আসনের সংসদ সদস্য আতাউর রহমান খান, টাঙ্গাইল-৪ (কালিহাতী) আসনের সংসদ সদস্য হাসান ইমান খান সোহেল হাজারী, টাঙ্গাইল-৫ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য মো. ছানোয়ার হোসেন, টাঙ্গাইল-৬ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য আহসানুল ইসলাম টিটু, টাঙ্গাইল-৭ (মির্জাপুর) আসনের সংসদ সদস্য খান আহমেদ শুভ, টাঙ্গাইল-২ (ভ‚ঞাপুর-গোপালপুর) আসনের সংসদ সদস্য তানভীর হাসান ওরফে ছোট মনির, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি খন্দকার আশরাফুজ্জামান স্মৃতি, সাংগঠনিক সম্পাদক মো. জামিলুর রহমান, কেন্দ্রীয় যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মামুনুর রশিদ মামুন, দেলদুয়ার উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি খন্দকার ফজলুল হক প্রমুখ।