বাংলাদেশের আয়তন ইতালির অর্ধেক হলেও ১৭ কোটি মানুষের খাদ্য যোগান দিচ্ছে সরকার। পাশাপাশি মিয়ানমারে নির্যাতনের শিকার ১৩ লাখ রোহিঙ্গাকেও আশ্রয় ও খাদ্য সহায়তা প্রদান করছে দেশটি। এই তথ্য সোমবার (১৩ অক্টোবর) বিশ্ব খাদ্য ফোরামের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ইতালির রোমে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস জানিয়েছেন।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশে তরুণদের নেতৃত্বে জনগণের অংশগ্রহণে একটি সফল আন্দোলন সংগঠিত হয়েছিল। বর্তমানে সেই তরুণরাই দেশের প্রতিষ্ঠানগুলোর পুনর্গঠনে নেতৃত্ব দিচ্ছে। আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, যা ন্যায় ও জনগণের ক্ষমতার প্রতি অঙ্গীকারের প্রাতিষ্ঠানিক রূপ হবে।
ড. মুহাম্মদ ইউনূস আরও বলেন, বাংলাদেশ প্রধান খাদ্য চালে স্বয়ংসম্পূর্ণ। এখন দেশটি বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ ধান, শাকসবজি ও মিঠাপানির মাছ উৎপাদনকারী দেশ। কৃষকরা জমির ফসল উৎপাদনের হার ২১৪ শতাংশে উন্নীত করেছেন। এছাড়া ১৩৩টি জলবায়ু-সহনশীল ধানজাত উদ্ভাবন করা হয়েছে। কৃষিতে ৭০ শতাংশ পর্যন্ত ভর্তুকি দিয়ে যান্ত্রিকীকরণ ও শক্তিশালী খাদ্য বিতরণ ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়েছে।
তিনি বলেন, ক্ষুধা কোনো স্বল্পতার ফল নয়; এটি মানুষের তৈরি অর্থনৈতিক ও নৈতিক ব্যর্থতার ফল। ২০২৪ সালে ৬৭৩ মিলিয়ন মানুষ ক্ষুধার্ত থাকলেও পৃথিবী পর্যাপ্ত খাদ্য উৎপাদন করছে। উৎপাদনের ব্যর্থতা নয়, এটি অর্থনৈতিক ব্যবস্থার ব্যর্থতা। পাশাপাশি বিশ্বের কিছু দেশে কয়েক বিলিয়ন ডলার অস্ত্র কেনায় ব্যয় হচ্ছে, যা নৈতিক ব্যর্থতার প্রমাণ।
প্রযুক্তি ও ব্যবসায়িক কাঠামো সঠিকভাবে ব্যবহার করলে নতুন পৃথিবী গড়ে তোলা সম্ভব, মন্তব্য করেন তিনি। ড. মুহাম্মদ ইউনূস আরও বলেন, গ্রামীণ ব্যাংক প্রমাণ করেছে, দরিদ্র নারীরাও হতে পারে সফল উদ্যোক্তা। গ্রামীণ দানোন শিশুখাদ্য অপুষ্টির বিরুদ্ধে লড়ছে এবং সামাজিক ব্যবসার মাধ্যমে মানুষ ও সমাজকে ক্ষমতায়ন করছে।
তিনি যোগ করেন, এখন সময় এসেছে তরুণ, নারী, কৃষক, কৃষিভিত্তিক উদ্যোক্তা ও প্রযুক্তি উদ্ভাবকদের জন্য সামাজিক ব্যবসার তহবিল গড়ে তোলার। এজন্য উপযুক্ত আইনি ও আর্থিক কাঠামো তৈরি করা দরকার, যাতে তারা বাধাগ্রস্ত না হয়ে এগিয়ে যেতে পারে।