সীমান্তে আরো ১০০টি স্থানে ভারত কাঁটাতারের বেড়া দেবে বলে সে দেশের গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হয়েছে। তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই বেড়া দেওয়ার বিষয়ে সংকট কাটেনি। কারণ ভারত বেড়া দিতে চায় নোম্যানস ল্যান্ডের ভেতরে। কিন্তু বাংলাদেশ সেটি হতে দিতে চায় না।
গত ১৭ থেকে ২০ ফেব্রুয়ারি ভারতের নয়াদিল্লিতে দুই দেশের সীমান্ত বাহিনীর প্রধান পর্যায়ের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সম্মেলনে বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকীর নেতৃত্বে ১৩ সদস্যের বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল অংশগ্রহণ করে। অপরদিকে ছিল বিএসএফ মহাপরিচালক শ্রী দলজিত্ সিং চৌধুরীর নেতৃত্বে ১৩ সদস্যের প্রতিনিধিদল। বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে জানিয়েছেন, এবারের বৈঠকটি ছিল আলাদা।
অন্যান্যবার ভারত একতরফাভাবে বলে যেত, আর বাংলাদেশের কর্মকর্তারা তা মেনে নিতেন। ফলে খুব সহজে বৈঠক শেষ হয়ে যেত। এরপর বাংলাদেশের প্রতিনিধিদলকে বিভিন্ন জায়গায় তারা ঘুরতে নিয়ে যেত। বিজিবি আর বিএসএফ প্রধানদের স্ত্রীদের একসঙ্গে নানা অনুষ্ঠানও থাকত। কিন্তু এবার ভারত ঘুরতে নিয়ে যেতে চাইলেও প্রতিনিধিদলের কেউ রাজি হননি। তাঁরা হোটেলেই ছিলেন। ওই কর্মকর্তা আরো জানান, বৈঠকে সীমান্ত হত্যার ঘটনা তোলার পর ভারতের তরফ থেকে সেটাকে জায়েজ করার চেষ্টা করা হয়। তারা বলতে চায়, বাংলাদেশিরা কাঁটাতারের বেড়া কেটে ভেতরে ঢুকে যাওয়ার কারণে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটছে। এ সময় বাংলাদেশের প্রতিনিধিদল তাদের বক্তব্যের বিরোধিতা করে বলে, এটা কোনো যুক্তি হতে পারে না।
যদি কেউ অবৈধভাবে প্রবেশও করে তাকে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা যায়। তাকে বিচারবহির্ভূত হত্যা করা যায় না। একপর্যায়ে ভারতের পক্ষ থেকে বলা হয়, বাংলাদেশি অপরাধীরা ভারতের গভীরে চলে যায় এবং তারা সেটা দলিলে লিখতে চায়। এটার প্রতিবাদ জানায় বাংলাদেশ। বাংলাদেশ সাফ জানিয়ে দেয়, ‘ডিপ’ শব্দটি থাকলে তারা তাতে স্বাক্ষর করবে না। এ নিয়ে ঘণ্টাখানেকের বেশি যুক্তিতর্কের পর ভারতের প্রতিনিধিদল সেই শব্দ বাদ দিতে বাধ্য হয়। ওই কর্মকর্তা আরো জানান, বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে ১৬৭টি স্থানে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়ার বিষয়ে শেখ হাসিনা সরকারের আমলে চুক্তি করা হয়েছে। বিএসএফ জানায়, নো-ম্যান্স ল্যান্ডে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়ার বিষয়ে চুক্তিতে উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু নো-ম্যান্স ল্যান্ডে বেড়া দেওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ আপত্তি জানায়।
গত ৬ জানুয়ারি ঝিনাইদহের
মহেশপুর সীমান্ত থেকে বিএসএফের দখল থেকে পাঁচ কিলোমিটার কোদলা নদী মুক্ত করে বিজিবি। নদীটির প্রায় পাঁচ কিলোমিটার অংশ বাংলাদেশে অবস্থিত, যা আগে বিএসএফ বাংলাদেশের নাগরিকদের ব্যবহার করতে বাধা দিত। সীমান্ত সম্মেলনে এ বিষয়টিও উঠেছিল। সেখানে বিএসএফ স্বীকার করে জায়গাটি বাংলাদেশেরই ছিল।
সীমান্ত সম্মেলনের শেষ দিন ভারতীয় গণমাধ্যম দ্য টেলিগ্রাফ অনলাইন জানায়, সীমান্ত এলাকায় নতুন করে প্রায় ১০০টি স্থানে বেড়া নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারত। পাশাপাশি চলমান সীমান্ত বেড়া নির্মাণকাজও অব্যাহত থাকবে। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে বাংলাদেশের ওই কর্মকর্তা বলেন, শেখ হাসিনা সরকারের নতজানু নীতির কারণে সীমান্তে নো-ম্যানস ল্যান্ডেও বেড়া দেওয়ার ক্ষেত্রে অনুমোদন দিয়ে রেখেছে। যেটাকে ধরে ভারতীয়রা কথা বলার সুযোগ পাচ্ছে। এতে বাংলাদেশের জমি বেহাত হতে পারে।
প্রতিনিধিদল ফেরার পর বিজিবির তরফ থেকে গত ২২ ফেব্রুয়ারি গণমাধ্যমে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠানো হয়। এতে জানানো হয়, সম্মেলনে বিজিবি মহাপরিচালক সীমান্তে বাংলাদেশি নাগরিকদের নিহতের বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং সীমান্ত হত্যার ঘটনা শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিএসএফ মহাপরিচালকের প্রতি জোর আহ্বান জানান।
সীমান্তের ১৫০ গজের মধ্যে যেকোনো স্থায়ী স্থাপনা এবং কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণের ক্ষেত্রে উভয় দেশের যথাযথ কর্তৃপক্ষের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে গঠিত যৌথ পরিদর্শকদলের পরিদর্শন ও যৌথ আলোচনার দলিলের ভিত্তিতে নির্মাণের ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করা হয়। এ ছাড়া সীমান্তবর্তী নদীর ভাঙন রোধে তীরবর্তী বাঁধ নির্মাণ ও সংস্কারকাজ এবং পূর্বাভাস না দিয়ে বাংলাদেশের উজানে বাঁধ খুলে পানি ছেড়ে দিয়ে বাংলাদেশে সৃষ্ট অনাকাঙ্ক্ষিত বন্যার ব্যাপারে যথাযথ কর্তৃপক্ষকে অবগত করার জন্য বিএসএফকে অনুরোধ জানানো হয়।