এই ভুল কার? এর দায় কে নেবে? ফারজানা না বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ? দুই বছর পর এমন প্রশ্নের জন্ম হবে এমনটা ভাবেনি কেউ। নবম-দশম শ্রেণিতে দুই বছর লেখাপড়া শেষে নির্বাচনী পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়ার সব শেষ প্রক্রিয়া “ফরম পূরণ”। সেই সময় বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানান, ফারজানা ফরম পূরণ করতে পারবে না। কারণ হিসেবে জানান, ফারজানা জেএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারে নাই। আর তখনই এই সব প্রশ্নের জন্ম হয়।
এই ভুলের কারণে ফারজানার জীবন থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে দুই বছর। ভুল ফারজানার, না বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের? এ প্রশ্ন এখন তার পরিবার ও সচেতন শিক্ষানুরাগী এলাকাবাসীর।
ফারজানা মির্জাপুর উপজেলার গেড়ামারা-গোহাইলবাড়ি সবুজ সেনা উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রী ও চান্দুলিয়া গ্রামের ফজলুর রহমানের মেয়ে।
বৃহস্পতিবার ওই শিক্ষার্থী এ বিষয়ে বিচার চেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আবদুল মালেকের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছে। অনুলিপি দেয়া হয়েছে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার হারুন অর রশিদের কাছেও।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, ফারজানা ২০১৭ সালে গেড়ামারা গোহাইলবাড়ি সবুজ সেনা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে জেএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে উত্তীর্ণ হয়ে নবম শ্রেণির মানবিক শাখায় ভর্তি হয় সে। নবম শ্রেণিতে নিবন্ধন শেষে বার্ষিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে দশম শ্রেণীতে ভর্তি হয়। দশম শ্রেণিতে তার ক্লাস ক্রমিক নম্বর ৩০।
গত ১৫ অক্টোবর থেকে এসএসসি’র নির্বাচনী পরীক্ষা শুরু হলে তাকে ১৪ অক্টোবর বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক স্বাক্ষরিত প্রবেশ পত্র দেয়া হয়। নির্বাচনী পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ফারজানা সকল বিষয়ে উত্তীর্ণও হয়। এসএসসি’র ফরম পুরণ শুরু হলে ফারজানার কাছ থেকে ফরম পুরণ বাবদ ৪ হাজার ২৫০ টাকা নেয় স্কুল কর্তৃপক্ষ। কিন্ত দুই বছর পর গত মঙ্গলবার বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানায় ফারজানা জেএসসি পরীক্ষায় ফেল করেছে। সে কারণে সে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবেনা এবং ফরম পুরণের টাকা ফেরত দেয়। এ ঘটনা জানতে পেরে ফারজানা ও তার পরিবারের সদস্যরা মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে।
ফারজানার প্রশ্ন সে যদি জেএসসি পরীক্ষায় ফেল করে থাকে তাহলে কিভাবে তাকে নবম শ্রেণিতে ভর্তি করা হলো। কেন তাকে এসএসসি’র নির্বাচনী পরীক্ষায় অংশ নিতে দেয়া হলো এবং ফরম পুরণের টাকা নেয়া হলো।
ফারজানার বাবা ফজলুর রহমান অভিযোগ করে বলেন, নবম দশম শ্রেণিতে দুই বছর লেখাপড়ার পর স্কুল কর্তৃপক্ষ এখন বলছে আমার মেয়ে জেএসসি পরীক্ষাই উত্তীর্ণ হয়নি। তিনি বলেন, এখন মেয়ের জীবন থেকে দুইটি বছর হারিয়ে গেল। এই ভুলের খেসারত কে দেবে?
এ ব্যাপারে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মোজাম্মেল হকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ফারজানা নামে দশম শ্রেণিতে কামারপাড়া গ্রামের এক ছাত্রী রয়েছে। সে ওই ফারজানার রোল নম্বর দিয়ে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে বলে দাবি করেন।
এ ব্যাপারে মির্জাপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. হারুন অর রশিদ সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে ছাত্রীর লিখিত অভিযোগ পাওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।