নিজ্স্ব প্রতিবেদক : দলীয় একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, কেন্দ্র থেকেও মুরাদ সিদ্দিকীকে জেলা আওয়ামী লীগের কমিটিতে রাখার জন্য বলা হয়েছিল।
গত ৭ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় কৃষিমন্ত্রী মো. আবদুর রাজ্জাকের বাসায় কমিটি চূড়ান্ত করতে বৈঠক হয়।
ওই বৈঠকে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফজলুর রহমান খান, সাধারণ সম্পাদক জোয়াহেরুল ইসলাম অংশ নেন।
তিন নেতা জেলা আওয়ামী লীগের কমিটি চূড়ান্ত করেন।
সেখানে মুরাদ সিদ্দিকীর নাম অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়টি উঠলেও শেষ পর্যন্ত তাঁকে কমিটিতে রাখা হয়নি।
প্রস্তাবিত চূড়ান্ত কমিটি কয়েকদিনের মধ্যেই অনুমোদনের জন্য কেন্দ্রে পাঠানো হবে। ওই কমিটিতে স্থান পাননি মুরাদ সিদ্দিকী।
এদিকে দলে তাঁর যোগদান নিয়ে টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের পক্ষে-বিপক্ষে অনেকে সক্রিয় আছেন।
তাঁরা মুরাদ সিদ্দিকীর আওয়ামী লীগে যোগদান ঠেকাতে নানা তৎপরতা চালাচ্ছেন। যদিও আওয়ামী লীগে স্থান পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী মুরাদ সিদ্দিকী।
মুরাদ সিদ্দিকী কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি আবদুল কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম এবং আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকীর ভাই।
স্থানীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ১৯৯৯ সালে কাদের সিদ্দিকী আওয়ামী লীগ ত্যাগ করে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ গঠন করেন।
কাদের সিদ্দিকীর সঙ্গে তখন মুরাদ সিদ্দিকীও ওই দলে যোগ দেন।
২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ থেকে তিনি নিজেকে গুটিয়ে নেন।
২০০৯ সাল থেকে মুরাদ সিদ্দিকী আওয়ামী লীগে যোগ দেওয়ার চেষ্টা করছেন।
তাঁর একসময়ের সহযোগী টাঙ্গাইল পৌরসভার সাবেক মেয়র জামিলুর রহমানসহ তাঁর অনুসারীদের অনেকেই ২০১৫ সালে আওয়ামী লীগে যোগ দেন।
তাঁরা দলে গুরুত্বপূর্ণ পদ পেয়ে রাজনীতিতে সক্রিয় আছেন। কিন্তু মুরাদ সিদ্দিকী বারবার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন।
তবে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন কর্মসূচিতে সমর্থকদের নিয়ে অংশ নেন তিনি।
গত ৭ নভেম্বর বড় মিছিল নিয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে অংশ নেন তিনি।
নেতাদের বক্তব্য –
টাঙ্গাইল শহর আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি মাহমুদ মামুন খান বলেন, মুরাদ সিদ্দিকীদের পুরো পরিবার বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী।
মুরাদ সিদ্দিকী দলীয় পদে না থাকলেও আওয়ামী লীগের কর্মকান্ডে অংশ নিচ্ছেন। সরকারের উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড মাঠপর্যায়ে তুলে ধরছেন।
তিনি আওয়ামী লীগে স্থান পেলে দলের ভালো হবে। টাঙ্গাইলে তাঁর অনেক কর্মী-সমর্থক আছেন।
কেন প্রস্তাবিত কমিটিতে নাম নাই?
দলীয় একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, কেন্দ্র থেকেও মুরাদ সিদ্দিকীকে জেলা আওয়ামী লীগের কমিটিতে রাখার জন্য বলা হয়েছিল।
গত ৭ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় কৃষিমন্ত্রী মো. আবদুর রাজ্জাকের বাসায় কমিটি চ‚ড়ান্ত করতে বৈঠক হয়।
ওই বৈঠকে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফজলুর রহমান খান, সাধারণ সম্পাদক জোয়াহেরুল ইসলাম অংশ নেন। তিন নেতা জেলা আওয়ামী লীগের কমিটি চ‚ড়ান্ত করেন। সেখানে মুরাদ সিদ্দিকীর নাম অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়টি উঠলেও শেষ পর্যন্ত তাঁকে কমিটিতে রাখা হয়নি।
আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে, জেলা আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী কয়েকজন নেতা ও কয়েকজন সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগে মুরাদ সিদ্দিকীর যোগদানের তীব্র বিরোধিতা করছেন।
তবে জেলার শীর্ষ দুই নেতা তাঁর যোগদানের ব্যাপারে ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করছেন।
আওয়ামী লীগে যোগ দিচ্ছেন মুরাদ সিদ্দিকী?
নাম প্রকাশ না করার শর্তে জেলা আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী অন্তত পাঁচজন নেতা বলেন, মুরাদ সিদ্দিকী এমন একটি পরিবারের সন্তান, তাঁর দলে যোগদান সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে সিদ্ধান্ত আসার ওপর নির্ভর করছে।
তাঁর ব্যাপারে স্থানীয়ভাবে কেউ সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন না।
অনুসারী ও মুরাদ সিদ্দিকীর বক্তব্য –
মুরাদ সিদ্দিকীর অনুসারীরা জানান, একটি মহল মুরাদ সিদ্দিকীর দলে যোগদান ঠেকাতে তৎপর।
তাদের ‘অপতৎপরতা’র কারণেই তাঁর নাম কমিটিতে রাখা হয়নি। তবে কেন্দ্রীয় নেতাদের সবুজ সংকেত আছে।
এ জন্যই মুরাদ সিদ্দিকী হতাশ নন। তিনি হাল ছাড়েননি।
রোজার মাসে টাঙ্গাইল সদর ও কালিহাতীতে বেশ কয়েকটি ইফতার মাহফিল ও মতবিনিময় সভা করেছেন তিনি।
মুরাদ সিদ্দিকী বলেন, ‘আমি নিজেকে আওয়ামী লীগের বাইরের কেউ মনে করি না। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সব সময় লালন করেছি।
দলে স্থান পেলে আওয়ামী লীগ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞ থাকব।
আওয়ামী লীগে কাজ করার সুযোগ পাব। এ ব্যাপারে এখনো আমি আশাবাদী।’ সম্পাদনা – অলক কুমার