স্বাস্থ্যখাত সংস্কার কমিশন তাদের চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে জমা দিয়েছে। সোমবার (৫ মে) সকাল ১১টায় এই প্রতিবেদন আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করা হয়।
প্রতিবেদনে দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার কাঠামোগত পরিবর্তনসহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ তুলে ধরা হয়েছে। কমিশন মনে করে, স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের মান উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা জবাবদিহিমূলক করতে এসব সুপারিশ বাস্তবায়ন জরুরি।
কমিশনের ৮টি প্রধান সুপারিশ হলো:
স্বতন্ত্র ‘বাংলাদেশ স্বাস্থ্য সার্ভিস’ গঠন:
বর্তমান বিসিএস (স্বাস্থ্য) ক্যাডারের পরিবর্তে আলাদা ‘বাংলাদেশ স্বাস্থ্য সার্ভিস’ গঠনের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এ জন্য পৃথক পাবলিক সার্ভিস কমিশন (স্বাস্থ্য) গঠন এবং নতুন জনবল কাঠামো তৈরির সুপারিশ করা হয়েছে।
ক্যারিয়ার প্ল্যানিং ও পদোন্নতির সুযোগ বৃদ্ধি:
স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা ও প্রশাসন—এই তিন শাখায় পর্যাপ্ত পদসোপান তৈরি করে লাইন প্রমোশনের ব্যবস্থা করার কথা বলা হয়েছে। পাশাপাশি, প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে ‘সুপিরিয়র এক্সিকিউটিভ সার্ভিস’-এ প্রবেশের সুযোগ তৈরির পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
স্বাস্থ্য শিক্ষা ও সেবা বিভাগ পৃথককরণ:
মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালগুলোকে ‘একাডেমিক’ ও ‘সার্ভিস’ ক্যাটাগরিতে ভাগ করে আলাদা ব্যবস্থাপনার আওতায় আনতে হবে।
জনবল নিয়োগ ও উপস্থিতি নিশ্চিতে ব্যবস্থা:
নতুন চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান চালুর আগে প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগ নিশ্চিত করা এবং উপস্থিতি নিশ্চিত করতে ডিজিটাল হাজিরা ও মাঠ পর্যায়ের তদারকি বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে।
বাজেট বণ্টন ও দালাল দমন:
হাসপাতাল বাজেট শয্যার ভিত্তিতে নয়, রোগীর সংখ্যার ভিত্তিতে নির্ধারণের পাশাপাশি দালালদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।
স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইন ও নিয়ন্ত্রক সংস্থা:
চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী ও রোগীদের অধিকার ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করে ‘স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইন’ প্রণয়ন এবং ল্যাবরেটরির মান নিয়ন্ত্রণে একটি স্বতন্ত্র রেগুলেটরি কর্তৃপক্ষ গঠনের সুপারিশ দেওয়া হয়েছে।
ফিজিওথেরাপি বিভাগ ও পদ সৃষ্টি:
সরকারি মেডিকেল কলেজ ও বিশেষায়িত হাসপাতালে ফিজিওথেরাপি বিভাগ এবং পদ সৃষ্টি করে এই চিকিৎসাশাখাকে গুরুত্ব দেওয়ার পরামর্শ এসেছে প্রতিবেদনে।
কমিউনিটি স্বাস্থ্য কেন্দ্র পরিচালনায় আউটসোর্সিং:
গ্রামীণ পর্যায়ে প্রতিষ্ঠিত কমিউনিটি স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলো পরিচালনার জন্য নির্দিষ্ট শর্তে এনজিও বা বেসরকারি সংস্থাকে দায়িত্ব দেওয়ার পাশাপাশি বাজেট বরাদ্দ দেওয়ার প্রস্তাব রাখা হয়েছে।
এই সুপারিশগুলো বাস্তবায়িত হলে দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় একটি কাঠামোগত পরিবর্তন আসবে বলে মনে করছে কমিশন।