নিজস্ব প্রতিবেদক : টাঙ্গাইলের বাসাইলে আগামীকাল রবিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।
প্রায় ৭ বছর পর অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া এ সম্মেলনকে ঘিরে সরগরম হয়ে উঠেছে উপজেলার রাজনৈতিক অঙ্গন।
বাসাইল উপজেলা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পাদদেশে অবস্থিত কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে সম্মেলনের সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।
সমাবেশ স্থলের মঞ্চ ও প্যান্ডেল তৈরিসহ পুরোদমে চলছে সম্মেলন প্রস্তুতির কাজ।
নবীন-প্রবীণ পদপ্রত্যাশীদের বাহারী রং ও ডিজাইনের পোস্টার, ব্যানার, ড্রপডাউন ও বিলবোর্ডে ছেয়ে গেছে রাস্তা-ঘাট অলিগলিসহ পুরো শহর।
রাস্তায় রাস্তায় নির্মাণ করা হয়েছে দৃষ্টিনন্দন শুভেচ্ছা তোরণ। সম্মেলনকে কেন্দ্র করে দলের জেলা ও উপজেলাসহ তৃণমূল পর্যায়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ ও উদ্দীপনা লক্ষ্য করা গেছে।
সব মিলিয়ে সরগরম হয়ে উঠেছে রাজনৈতিক অঙ্গন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, জেলা পরিষদের প্রশাসক ও একুশে পদকপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা ফজলুর রহমান খান ফারুক।
সম্মেলনে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক এমপি; শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এমপি; কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম এমপি; শিক্ষা ও মানব সম্পদ সম্পাদক শামসুন নাহার চাঁপা; মহিলা বিষয়ক সম্পাদক মেহের আফরোজ চুমকি এমপি।
সম্মেলনের প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখবেন টাঙ্গাইল-৮ (বাসাইল-সখীপুর) আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট জোয়াহেরুল ইসলাম।
এছাড়াও বক্তব্য রাখবেন জাতীয় শ্রমিক লীগের সাবেক সভাপতি আব্দুস সালাম খান।
এ সম্মেলনকে কেন্দ্র করে তৃণমূল আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের মধ্যে বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ।
তবে উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের মধ্যে অভ্যন্তরিন গ্রুপিং দ্বন্দ্ব ও কোন্দলের রেশ কাটেনি।
উপজেলার ১টি পৌরসভা এবং ৬টি ইউনিয়নে সম্মেলনকে ঘিরে পদপ্রত্যাশীরা মাঠে প্রচারণাও চালিয়ে যাচ্ছেন।
পাশাপাশি জেলা ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতাদের সাথেও নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করে চলছেন।
সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে একাধিক হেভিওয়েট প্রত্যাশী থাকায় তৃণমূলের সকল নেতাকর্মীদের মাঝে বইছে আলোচনা ও সমালোচনার ঝড়।
এদিকে, পদপ্রত্যাশীরা তাদের অতীত কার্যক্রমের ফিরিস্তি ও অবস্থান তুলে ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে দিচ্ছেন নানা স্ট্যাস্টার্স।
কে হবেন দলের সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক?
এ নিয়ে দলের প্রভাবশালী নেতাদের ড্রয়িং রুম থেকে শুরু করে চায়ের দোকান পর্যন্ত চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা; চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ ও হিসাব-নিকাশ।
এরই মধ্যে সরগরম হয়ে উঠেছে তৃণমূল আওয়ামী লীগের রাজনীতি। অনেকেই বলেছেন, এবার উপজেলা কমিটিতে আসছে চমক।
তবে শেষ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে শীর্ষ পদে কোন দুই নেতা দায়িত্ব পাচ্ছেন। তৃণমূল নেতাকর্মীরা ক্লিন ইমেজের দুই শীর্ষ নেতাকে দায়িত্ব দেওয়ার দাবি জানান।
এবারের সম্মেলনে সভাপতি হিসেবে যাদের নাম আলোচনায় ঘুরপাক খাচ্ছে তারা হলেন- উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ক্লিন ইমেজ ও ত্যাগী নেতা হাজী মতিয়ার রহমান গাউজ, বাসাইল পৌরসভার মেয়র আব্দুর রহিম আহমেদ, উপজেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা সদস্য অ্যাডভোকেট রফিকুল ইসলাম আলো, টাঙ্গাইল জেলা কৃষকলীগের সভাপতি জহিরুল ইসলাম মাষ্টার, উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি একে আজাদ খানশুর।
এছাড়াও কাজী অলিদ ইসলামও সভাপতির পদে প্রার্থী হতে পারেন বলেও একটি সূত্র জানিয়েছে।
সাধারণ সম্পাদক পদের প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় রয়েছেনÑ উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আব্দুস সাত্তার জমাদার, উপজেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা সদস্য ক্লিন ইমেজের নেতা আলহাজ আব্দুল মোমেন জমাদার, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও বাসাইল ডিগ্রী কলেজের সাবেক জিএস আল মামুন খান নবু, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক শফিউল আরেফিন খানশূর সুজন, উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান আলহাজ শাহাদত হোসেন খান, কাশিল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মির্জা রাজিক, বাসাইল ডিগ্রী কলেজের সাবেক ভিপি জাদিদুর রহমান রোনু, কাউলজানী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক চেয়ারম্যন হাবিবুর রহমান চৌধুরী হবি।
এছাড়াও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আবু হানিফ মিয়া, আওয়ামী লীগ নেতা মোস্তফা খান রাজিব, উপজেলা আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক সোহানুর রহমান সোহেল, সাবেক ছাত্র নেতা সফিকুল ইসলামের নামও শোনা যাচ্ছে।
নেতৃস্থানীয়দের কথা –
টাঙ্গাইল-৮ (বাসাইল-সখীপুর) আসনের সংসদ্য সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জোয়াহেরুল ইসলাম বলেন, ‘জাতির পিতার আদর্শ ও বিশ্বনন্দিত নেত্রী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশের কল্যাণে, মানুষের প্রয়োজনেই আমরা রাজনীতি করছি।
তৃণমূলের সংগঠনকে শক্তিশালী করে দেশের উন্নয়নে রাজনৈতিক কার্যক্রম এগিয়ে নেওয়ার জন্যই সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ হয়েছে।
সব নেতাকর্মীকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সম্মেলনে আসার জন্য বলা হয়েছে।
তাছাড়া করোনা সংক্রমণে আগে যে ভয় ছিল তা থেকে এখন আমরা অনেকটাই নিরাপদ।
আশা করছি স্বাস্থ্যবিধি মেনেই উৎসবমুখর পরিবেশের মধ্য দিয়ে সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে।
দলীয় সংগঠন শক্তিশালী করতে ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতি অব্যাহত রাখতে ত্যাগী, সৎ, যোগ্য ও সঠিক নেতৃত্ব বেরিয়ে আসবে।
উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক হাজী মতিয়ার রহমান গাউজ বলেন, ‘জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শকে বুকে ধারণ ও লালন করে এবং বঙ্গবন্ধুর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্ব ও নির্দেশনা মেনে, ‘দীর্ঘদিন ধরে রাষ্ট্র এবং মানুষের কল্যাণে রাজনীতি করছি আমরা।
দেশের উন্নয়নে দলের সঙ্গে আছি, দলের সব কর্মকান্ড পালন করছি।
দুঃসময়ে দলের জন্য কাজ করেছি। ভবিষ্যতেও তৃণমূলের সংগঠনকে শক্তিশালী করে দেশ ও দলের জন্য আমরন কাজ করে যাবো।
আমাদের দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তই আমাদের কাছে চূড়ান্ত; তিনি আমাকে দায়িত্ব দিলে অবশ্যই আমি পালন করবো ইনশাআল্লাহ।’
জনসংখ্যার বিবেচনায় এবারের উপজেলা কমিটির আকৃতি বাড়ানোসহ বিদ্রোহী, বিতর্কিত ও সুবিধাবাদী নব্য আওয়ামী লীগ নেতাদের বাদ দিয়ে পরীক্ষিত, ত্যাগি ও আদর্শ নেতাদের নেতৃত্বে এনে এবং দলের সংগঠকদের নিয়ে একটি গ্রহণযোগ্য উপজেলা কমিটি গঠন করা হবে বলে প্রত্যাশা তৃণমূলের নেতাকর্মীদের।
জানা যায়, উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে প্রতি ইউনিয়নে ৩১ জন করে মোট ২১৭, উপজেলা কমিটির ৭১ জন এবং ১৫ জন কো-অপট সদস্যসহ মোট ৩০৩ জন কাউন্সিলরের তালিকা রয়েছে।
যারা প্রয়োজনে ভোট প্রয়োগ করে নেতা নির্বাচন করবেন।
প্রসঙ্গত উল্লেখ –
সর্বশেষ ২০১৫ সালের ১৯ এপ্রিল বাসাইল উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
ওই সময় সভাপতির পদ পান কাজী অলিদ ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদকের পদ পান হাজী মতিয়ার রহমান গাউজ।
গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে কাজ না করে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ায় কাজী অলিদ ইসলামকে সভাপতির পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়।
এরপর ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পান উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি শামছুল আলম মাষ্টার। সম্পাদনা – অলক কুমার