কার নির্দেশে করটিয়ায় সরকারি জমিতে নির্মিত হচ্ছে বহুতল ভবন? এমন প্রশ্ন তৈরি হয়েছে জনমনে। এমনকি ঐ ভবন নির্মাণে অমান্য করা হয়েছে সরকারি নিষেধাজ্ঞা।
টাঙ্গাইল সদরের করটিয়ায় সরকারি জমিতে নির্মিত হচ্ছে সেই বিতর্কিত বহুতল ভবন। এছাড়াও নেয়া হয়নি ওই বহুতল ভবন নির্মাণের অনুমতি। স্থানীয় ভূমি অফিস কর্তৃপক্ষ দফায় দফায় কাজ বন্ধ করলেও রহস্যজনক কারণে থামছেনা ভবনটি নির্মাণের কাজ। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যার আর কতিপয় ছাত্রলীগ নেতার ছত্রছায়া এবং জমিতে বসবাসের সুযোগ নিয়ে সম্পর্কে চাচাতো তিনভাই এই ভবন নির্মাণ করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
স্থানীয় ভূমি আর উপজেলা প্রশাসনের নাকের ডগায় কিভাবে নির্মিত হচ্ছে ভবনগুলো এ নিয়ে প্রশ্ন স্থানীয়দের। তবে এরপরও চলছে প্রশাসনের কাজ বন্ধ আবার চালুর নাটকীয়তা। যার ফলে হারাতে বসেছে ঐতিহ্যবাহী করটিয়া হাট সংলগ্নের শত কোটি টাকা মূল্যের সরকারি প্রায় ১৬ শতাংশ জমি। এর ফলে সরকারি জমি দখলে আগ্রহী হবেন স্থানীয়রা, দেখা দিয়েছে এমন সংশয়।
ভূমি অফিস সূত্রে জানা যায়, ইতোপূর্বে ওই জমিগুলোর মালিক ছিলেন জমিদাররা। তবে জমিদারী প্রথা শেষে জমিগুলো এখন সরকারি খাস খতিয়ান অন্তর্ভুক্ত। যার মধ্যে রয়েছে ৮৮২ দাগে গড়ে উঠেছে করটিয়ার বিখ্যাত হাট। এছাড়াও ৮৬০ দাগের ১৬৮ শতাংশ জমি রয়েছে ১/১ খতিয়ানে।
সরেজমিনে দেখা যায়, ৮৮২ দাগে করটিয়া হাট পরিচালিত হলেও ধোপাপাড়া গ্রামের ১৬৮ শতাংশ জমিগুলো সরকারি ৮৬০ দাগের ১/১ খতিয়ানে পরেছে। এ জমির প্রায় সবটাতেই গড়ে উঠেছে অসংখ্য বাসা বাড়ি। এ দাগ আর খতিয়ানের প্রায় ১৬ শতাংশ জমিতে দীর্ঘদিন যাবৎ টিনের ঘরে বসবাসরত সম্পর্কে চাচাতো তিনভাই এর পরিবার। এ জমিতে বসবাসের সুযোগ নিয়ে প্রয়াত জীতেন চন্দ্র দাসের ছেলে জীবন চন্দ্র দাস, প্রয়াত আসুতোষ দাসের ছেলে আনন্দ চন্দ্র দাস আর অজিৎ চন্দ্র দাসের ছেলে অজয় চন্দ্র দাস তিনভাগে ভাগ করে গড়ে তুলছেন তিনটি বহুতল ভবন। নবনির্মাণাধীন ভবন গুলোতে নির্মাণ শ্রমিকরা কাজ করছেন। তিনটি ভবনের নিচের বেসের কাজ প্রায় শেষ। পিলারের কাজ রয়েছে চলমান।
তবে স্থানীয়দের অভিযোগ, জমিদারদের আমলে হাটের পাশের ওই জমিতে গড়ে তোলা হয় ধোপাপাড়া। ওই পরিবার গুলোর পূর্বপুরুষেরা ধোপা থাকায় ওই জমিতে তাদের বসবাসের সুযোগ দেন জমিদাররা। যদিও জমিগুলোর মালিক ছিলেন তারা। এর ফলে জমিদারী প্রথা শেষেও উচ্ছেদ না করে লিজ বরাদ্দের মাধ্যমে পরিবার গুলোকে ওই জমিতে টিনের ঘর করে বসবাসের সুযোগ দেন স্থানীয় প্রশাসন। জমিতে বসবাসের সুযোগসহ স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আর কতিপয় ছাত্রলীগ নেতার মদদ আর উপজেলা ভূমি প্রশাসনের সহায়তায় বর্তমানে জমির সুবিধাভোগী সদস্যরাই অবৈধভাবে এখন গড়ে তুলছেন বহুতল ভবন। এছাড়াও এ বহুতল ভবন নির্মাণে নেয়া হয়নি কোন প্রাতিষ্ঠানিক অনুমতি।
তবে সরকারি জমিতে ভবন নির্মাণের বিষয়টি অস্বীকার করে অভিযুক্ত ভবন নির্মাণকারী অজয় চন্দ্র দাস, আনন্দ চন্দ্র দাস ও জীবন চন্দ্র দাস বলেন, জমির বৈধ কোন কাগজপত্র দেখাতে ব্যর্থ হয়ে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আর স্থানীয় এক ছাত্রলীগ নেতার দোহাই দেন। তারা এ জমির বিষয়টি দেখভাল করছেন বলেও জানান তারা।
করটিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মাজেদুল আলম নবী বলেন, সরকারি জমিতে বহুতল ভবন করার অভিযোগে প্রায় দেড় মাস আগে সদর উপজেলা ইউএনও নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দিয়েছিলেন। ইউএনও এসে বলেছিলেন, সরকারি জমিতে টিনসেড ভবন করার অনুমতি আছে। কিন্তু বহুতল ভবন করার কোন অনুমতি নেই। কাজটি কয়েক সপ্তাহ বন্ধ ছিলো। এর কিছুদিন যেতে না যেতেই রহস্যজনকভাবে আবার ওই ভবনের নির্মাণ কাজটি শুরু হয়েছে। তবে এভাবে হাটের পাশের সরকারি জমি দখল হতে থাকলে, ভবিষ্যতে হাটের জমিও দখলের সুযোগ নেবেন দখলকারীরা।
করটিয়া ভূমি অফিসের নায়েব তৌহিদুল ইসলাম জানান, করটিয়া ধোপাপাড়ার ৮৬০ দাগের সরকারের ১/১ খতিয়ানে অন্তর্ভুক্ত ১৬ শতাংশ সরকারি লিজকৃত জতিতে বহুতল ভবন নির্মাণের অভিযোগ পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে কাজটি বন্ধ করে দেই। ধোপাপাড়ার এ জমিতে প্রতিবছর নবায়নের অনুমতি নিয়ে সরকারি লিজ গ্রহণ করেন আনন্দ চন্দ্র দাস, জীবন চন্দ্র দাস আর অজয় চন্দ্র দাস এর পরিবারগণ। তবে এরপরও অভিযোগ আসছে বন্ধ কাজটি সরকারি ছুটির দিনগুলোতে আবার করা হচ্ছে। লিজকৃত ওই জমির কাগজ কিভাবে তারা দেখাতে পারবেন বলে জানান তিনি। এছাড়াও সরকারি জমি দখল নেয়ার কোন সুযোগ নেই। এভাবে অভিযোগ আসতে থাকলে নির্মাণাধীন ভবনগুলো এক সময় ভেঙে ফেলার অনুমতি দেবেন উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ বলেও জানান তিনি।
এ জমি দখলে সহযোগিতার বিষয়টি অস্বীকার করে করটিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান খালেকুজ্জামান চৌধুরী মজনু বলেন, আমি যতটুকু জানি তারা তাদের পৈত্রিক সম্পত্তিতে ভবণ নির্মাণ করছেন। আমি তাদের ভবণ নির্মাণের জন্য কোন অনুমতি দেইনি। তাদের জমির পর্যাপ্ত কাগজপত্র রয়েছে।
টাঙ্গাইল সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আতিকুল ইসলাম বলেন, ওই জায়গা বহুতল ভবণ নির্মাণে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। তার পরে যদি কাজ করে তাহলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ প্রসঙ্গে সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান আনছারী বলেন, করটিয়া হাটের জমি হচ্ছে ৮৮২ দাগের। আর তারা ৮৬০ দাগের ১/১ খতিয়ানের জমিতে বহুতল ভবণ নির্মাণ করছেন। তাদের বৈধ কাগজপত্র আছে কিনা আমি সঠিক বলতে পারবো না। তবে তারা দীর্ঘদিন যাবত ওই জমিতে বসবাস করে আসছেন বলেও জানান তিনি।