ডেস্ক নিউজ : টাঙ্গাইল শহীদ স্মৃতিস্তম্ভের পাশে স্থাপিত মুক্তিযুদ্ধের সাত বীরশ্রেষ্ঠর ভাস্কর্যের সামনে প্রায় ছয় মাস ধরে টানানো রয়েছে আওয়ামী লীগের চার নেতার ছবিসংবলিত ব্যানার।
চার নেতার এ ব্যানারে সাত বীরশ্রেষ্ঠর ভাস্কর্যের চারজনই আড়ালে পড়ে আছেন।
এলাকার কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জনের পর ১৯৭২ সালের ২৪ ডিসেম্বর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টাঙ্গাইল আসেন।
ওই দিন সকালে তিনি বিন্দুবাসিনী সরকারি বালক উচ্চবিদ্যালয় মাঠে মুক্তিযুদ্ধকালীন কাদেরিয়া বাহিনীর অস্ত্র জমা নেন।
এরপর স্কুলের পাশেই পুলিশ প্যারেড ময়দানে মুক্তিযুদ্ধের স্মরণে স্মৃতিসৌধের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।
পরে আশির দশকে পৌরসভার উদ্যোগে সেখানে ‘শহীদ স্মৃতি পৌর উদ্যান’ গড়ে তোলা হয়।
সেখানে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়। স্বাধীনতা দিবস ও বিজয় দিবসে এই স্তম্ভে সর্বস্তরের মানুষ শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
২০১২ সালে পৌরসভার উদ্যোগে স্মৃতিস্তম্ভের পাশে মুক্তিযুদ্ধে সর্বোচ্চ খেতাবপ্রাপ্ত সাত বীরশ্রেষ্ঠর আবক্ষ ভাস্কর্য নির্মাণ করা হয়।
কয়েক বছর ধরে শহীদ স্মৃতি পৌর উদ্যান সারা বছর ভরা থাকে ক্ষমতাসীন দলের মন্ত্রী, সাংসদসহ বিভিন্ন স্তরের নেতাদের ব্যানার–ফেস্টুনে।
গত অক্টোবরে টাঙ্গাইল সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনের সময় কাঠের ফ্রেমে একটি ব্যানার টানানো হয় বীরশ্রেষ্ঠদের ভাস্কর্যের সামনে।
এতে চার বীরশ্রেষ্ঠর ভাস্কর্য পুরোপুরি ঢাকা পড়ে যায়।
কবে কখন টানানো হয় এই ব্যানার –
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফজলুর রহমান খান, সাধারণ সম্পাদক ও সংসদ সদস্য জোয়াহেরুল ইসলাম, টাঙ্গাইল-৫ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য ছানোয়ার হোসেন এবং টাঙ্গাইল পৌরসভার মেয়র ও পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি এস এম সিরাজুল হকের ছবিসংবলিত ওই ব্যানার গত ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত ছিল।
গত ১১ ডিসেম্বর টাঙ্গাইল পাকিস্তানি হানাদারমুক্ত দিবস উপলক্ষে পৌর উদ্যানে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
সে সময় বীরশ্রেষ্ঠদের ভাস্কর্যের সামনে ওই ব্যানার সরিয়ে কাঠের ফ্রেমে আওয়ামী লীগের ওই চার নেতার ছবিসংবলিত নতুন ব্যানার টানানো হয়।
সর্বশেষ ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মবার্ষিকীতে একই ফ্রেমেই ওই চার নেতার ছবি দিয়ে নতুন ব্যানার টানানো হয়।
টাঙ্গাইল শহর ও সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের নামে টানানো ওই ব্যানারের এখনো আড়াল করে রেখেছে বীরশ্রেষ্ঠদের চারটি ভাস্কর্য।
স্বাধীনতা দিবসে রোববার সকালে শহীদ স্মৃতি পৌর উদ্যানে গিয়ে দেখা যায়, স্মৃতিস্তম্ভে বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়েছে।
পাশেই বীরশ্রেষ্ঠদের ভাস্কর্যের অর্ধেকের বেশি আড়াল করে রেখেছে চার আওয়ামী লীগ নেতার ওই ব্যানার।
এ ব্যানারের কারণে বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান, বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ শেখ, বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল ও বীরশ্রেষ্ঠ মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীরের ভাস্কর্য ঢাকা পড়ে রয়েছে।
এ ছাড়া মুক্তমঞ্চ এবং বঙ্গবন্ধু ও জাতীর চার নেতার প্রতিকৃতির আশপাশেও বিভিন্ন স্তরের নেতাদের ছবিসংবলিত ব্যানার, প্ল্যাকার্ডে ভরে আছে।
সাধারণ মানুষ ও সুশীল সমাজের মতামত –
সেখানে নিয়মিত আসা শামীম হাসান জানান, নেতাদের এসব ছবি দেখে মনে হয় এটা যেন তাঁদের প্রদর্শনীকেন্দ্র।
বীরশ্রেষ্ঠদের আড়াল করে কোনো নেতার ব্যানার টানানো উচিত নয়। এতে বীরশ্রেষ্ঠদের অবমাননা করা হয়।
নাট্যকর্মী সাম্য রহমান বলেন, পৌর উদ্যানে শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ রয়েছে।
শহীদদের সম্মানে ওই স্থানের ভাবগাম্ভীর্যতা বজায় রাখা প্রয়োজন। বীরশ্রেষ্ঠদের সামনের ব্যানার অপসারণ করা উচিত।
এ প্রসঙ্গে টাঙ্গাইল সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল হোসেন খান জানান, ওই ব্যানার সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে টানানো হয়নি; কে টানিয়েছে, তা–ও তাঁদের জানা নেই।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) টাঙ্গাইল জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক বাদল মাহমুদ বলেন, বীরশ্রেষ্ঠরা সবার ওপরে। তাঁদের আড়াল করে কোনো নেতাকে বড় করা যাবে না।
যাঁরা এ কাজ করেছেন, তাঁরা ঠিক করেননি। বীরশ্রেষ্ঠদের ভাস্কর্যের সামনে থেকে সব ব্যানার সরিয়ে ফেলার ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। তথ্য সূত্র – প্রথম আলো, সম্পাদনা – অলক কুমার