টাঙ্গাইলের ঘাটাইল, মধুপুর ও সখীপুর উপজেলায় মশলা জাতীয় ফসল হলুদের চাষ করে কৃষকরা আশাবাদী। অল্প জমিতে কম খরচে বেশি লাভের কারণে হলুদ চাষ দিন দিন বাড়ছে। পাহাড়ি এলাকায় অন্য ফসলের সঙ্গে সাথী ফসল হিসেবে হলুদের চাষ করা হয়। পরিচর্যার প্রয়োজন কম, গরু-ছাগল বা পোকামাকড়ের ক্ষতি নেই এবং বাজারে চাহিদাও বেশি।
হলুদের আবাদের পরিসংখ্যান: টাঙ্গাইল জেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, জেলার ১২টি উপজেলায় মোট ৩,২০৮ হেক্টর জমিতে হলুদ চাষ হয়েছে। এর মধ্যে ঘাটাইলে ১,৪৫৬ হেক্টর, মধুপুরে ৯৮০ হেক্টর, সখীপুরে ৩৫০ হেক্টর, সদর, বাসাইল, কালিহাতী, নাগরপুর, মির্জাপুর, ভূঞাপুর, গোপালপুর, দেলদুয়ার ও ধনবকাড়ী উপজেলায় পৃথকভাবে আবাদ হয়েছে।
হলুদের চাষ ও জাত: হলুদ উষ্ণ ও আর্দ্র জলবায়ুর ফসল। পাহাড়ি অঞ্চলে ছায়া ও বৃষ্টিপাত সমৃদ্ধ জায়গায় ভালো হয়, আর প্রখর রোদে কন্দ উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। স্থানীয় জাতের মধ্যে হরিণপালি, আদাগতি, মহিষবাট, পাটনাই ও আড়ানী উল্লেখযোগ্য। উচ্চফলনশীল জাত ডিমলা ও সিন্দুরী স্থানীয় জাতের তুলনায় বেশি উৎপাদন দেয়। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের বারি হলুদ-৩, ৪, ৫ জাতের চাষে কৃষকরা ভালো ফলন পাচ্ছেন।
লাভজনকতা ও উৎপাদন: মধুপুরে ৯৮০ হেক্টর জমিতে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা প্রায় ১২,০০০ মেট্রিক টন। প্রতি বিঘায় খরচ ৩৫–৪০ হাজার টাকা, উৎপাদন ভালো হলে প্রতি বিঘা ৭০–৮০ হাজার টাকার লাভের সম্ভাবনা। চাষি রেজাউল করিম ও অন্যান্যরা জানান, প্রাকৃতিক দুর্যোগ না ঘটলে বাজার মূল্য অনুযায়ী আয়ের সম্ভাবনা বাড়বে।
কৃষি বিভাগের পরামর্শ: মধুপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রকিব আল রানা বলেন, হলুদে রোগবালাই খুব কম। কৃষি অফিস থেকে নিয়মিত পরামর্শ ও মাঠ পর্যায়ে তদারকি করা হচ্ছে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা মোহাম্মদ দুলাল উদ্দিন জানিয়েছেন, জেলায় এবার হলুদের বাম্পার ফলনের আশা করা হচ্ছে।
হলুদ শুধু রান্নায় নয়, প্রসাধনী, রং শিল্প এবং স্বাস্থ্যকর খাদ্য হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ। পুষ্টিগুণে ভরা এই মশলা জাতীয় ফসল কৃষক ও বাজার দু’পক্ষেই সার্থক।