তথ্য নিয়ে কাজ করাই সাংবাদিকদের কাজ। সংগৃহীত তথ্য সংবাদ আকারে জনগণের কাছে পৌঁছে দিবে এটাই সাংবাদিকদের দায়িত্ব। যখন সেই তথ্য চাওয়ার ফলে প্রজাতন্ত্রের কোন কর্মচারী সাংবাদিকদের হুমকি দেন, গালি দেন এমনকি মামলা করেন, তখন ধারণা করা যায়, ওই কর্মচারী দুর্নীতির সাথে যুক্ত হয়েছেন। আর এরকমটিই ঘটছে টাঙ্গাইল জেলার ভূঞাপুর উপজেলার উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি)র ক্ষেত্রেও। সরকারি প্রকল্পের তথ্য চাইলেই সাংবাদিকের উপর ক্ষিপ্ত হয়ে গালিগালাজ করার অভিযোগ উঠেছে এই কর্মচারীর বিরুদ্ধে। তিনি হলে ভূঞাপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. তারিকুল ইসলাম। পৌর এলাকার ভূমি অফিস সংলগ্ন পুকুর সংস্কার ও গাছ কাটা প্রকল্পের বিষয়ে এখন টিভির টাঙ্গাইল প্রতিনিধি কাউসার আহমেদ তাকে ফোন করে ভিডিও বক্তব্য চাইলে এসময় দালালের বাচ্চা বলে গালি দেন সহকারী কমিশনার ভূমি। ইতিপূর্বেও বেশ কয়েকটি ঘটনা ঘটে।
গতকাল দুপুরের দিকে এ ঘটনা ঘটে। তবে এ বিষয়ে সহকারি কমিশনারের বক্তব্য নেয়া সম্ভব না হলেও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক বলছেন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী কেউই সাধারণ জনগণকে গালি দিতে পারেন না। আর সাংবাদিক কাউসার ওই সরকারি কর্মচারীর মানসিক সুস্থতা নিয়ে সন্দেহ পোষণ করেছেন।
তাকে নিয়ে যত অভিযোগ –
অভিযোগ উঠেছে, নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসকের বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা চাঁন মিয়াকে সভাপতি করে নিজেই পুকুর সংস্কার ও গাছ কাটার এই কাজ বাস্তবায়ন করছেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) তারিকুল ইসলাম। প্রায় ৩ লাখ ২০ হাজার টাকার টিআর প্রকল্পের মধ্যে দৈনিক হাজিরা শ্রমিকদের মজুরি প্রদান করা হয়েছে ৩০ হাজার টাকা।
এ লক্ষ্যে সম্প্রতি ভূঞাপুর ভূমি কার্যালয়ের সামনের পুকুর পাড়ের কয়েকটি অর্ধশত বয়সী গাছ কাটা হয়। একই সাথে সরকারি পুকুরের সংস্কার কাজ শুরু হলেও কোন দরপত্র বা ঠিকাদার নিয়োগ দেয়া হয়নি।হাসপাতালের কর্মচারী দিয়ে কাজ বাস্তবায়ন করায় প্রকল্প নিয়ে জনমনে এর স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দেয় এবং গাছ কাটলেও এ বিষয়ে বন বিভাগের কাছে কোন লিখিত বা অনুমোদনও নেয়া হয়নি বলে বিভাগীয় বন কর্মকর্তা।নিশ্চিত করায় এখন টেলিভিশনের টাঙ্গাইল প্রতিনিধি তার বক্তব্য ও তথ্য চাইতে এসিল্যান্ড মো. তারিকুল ইসলামের সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করেন। এসময় এসিল্যান্ড ফোন রিসিভ করে বলেন, “আপনার যা মনে হয় লিখেন, আর কোন নিউজ নাই আপনাদের, সব দালালের বাচ্চা” গালি দিয়েই ফোনের সংযোগ কেটে দেন।
সরকারি কর্মচারীর এমন অশোভন আচরণের বিষয়টি জানাজানি হলে ক্ষুব্ধ সাংবাদিক সমাজ। খোঁজ নিলে বিগত কর্মস্থলের অন্য সংবাদকর্মীরা নিশ্চিত করেন, তারিকুল ইসলাম এ্যাসিল্যান্ডের ফেসবুক পেইজে মামলার হুমকি, অসৌজন্য ও অশোভনমূলক বক্তব্য পোষ্ট দিয়ে ভয়ভীতি দেখাতে নিয়মিত পোষ্ট দিতেন। পাশাপাশি তার কর্মকাণ্ডের বিষয়ে জানতে চাইলেই সাংবাদিকদের মা বাবা তুলে গালিগালাজ করতেন। সেইসব পোষ্ট এখনও এ্যাসিল্যান্ড ফেসবুক পেইজে রয়েছে জানান তারা।
বালূ মহল থেকে বিশেষ সুবিধা নেয়ার অভিযোগ –
জানা গেছে, ২০২৪ সালের ২৯ ডিসেম্বরে তিনি ভূঞাপুরে সহকারী কমিশনার (ভূমি) হিসেবে যোগদান করেন। দায়িত্ব গ্রহণের এক সপ্তাহের মাথায় এক বালুর ঘাটে অভিযান পরিচালনা করেন এসিল্যান্ড তারিকুল ইসলাম।
সে সময় অভিযোগ উঠে, ব্যক্তিগত সুবিধা নিয়ে ১০ কোটি টাকার বালু মাত্র ৪৮ লাখ ৩৩ হাজার ৬৮০ (ভ্যাট ব্যাতিত) টাকায় গোপন নিলামে বিক্রি করেন। ওই খবর প্রকাশের পর থেকেই সাংবাদিকদের প্রতি তার আচরণ আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে। তার এমন অবৈধ নিলামের প্রক্রিয়ার তথ্য জানতে যায় স্থানীয় কালবেলার প্রতিনিধিসহ কয়েকজন তার পৌরসভার কার্যালয়ে গেলে এই সরকারি কর্মচারী তাদেরকেও অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে তার কক্ষ থেকে বের করে দেয়।
সম্প্রতি ভূঞাপুরে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (টিএইচও) ডা. আব্দুস সোবাহান অফিস টাইমে ক্লিনিকে রোগী দেখছেন এমন দৃশ্যের ভিডিও করায় নিজ উদ্যোগে থানায় তিনজন সাংবাদিকের নামে অভিযোগ নিতে বাধ্য করছে এসিল্যান্ড তারিকুল ইসলাম। এমন অডিও ছড়িয়ে পড়লে নিন্দা ঝড় উঠে তার বিরুদ্ধে। পরে উর্ধ্বতন কর্মকর্তার নির্দেশে সেটা পরে প্রত্যাহার করে নেয় তারা।
সাংবাদিকদের সাথে যে আচরণ করেছেন তিনি –
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী সাংবাদিক হাদী চকদার বলেন, দৈনিক কালবেলার ভূঞাপুর প্রতিনিধি মিজানুর রহমানসহ কয়েকজন বালু নিলামের তথ্য জানতে তার কার্যালয়ে গিয়েছিলাম। একপর্যায়ে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে অকথ্যভাষায় গালাগালিসহ দেখে নেয়ার হুমকি দেয়। পরে তার কক্ষ থেকে বের করে দেয়া হয়। এর প্রতিশোধ হিসাবে তিনি আমাকে মিথ্যা মামলা দিয়ে ফাঁসানোর চেষ্টা করে। পরে জেলা সাংবাদিক নেতাদের কঠোর অবস্থানে তারা অভিযোগ তুলে নিতে বাধ্য হয়।
দৈনিক কালবেলার ভূঞাপুর প্রতিনিধি মিজানুর রহমান বলেন, তার অবৈধ বালু নিলাম প্রক্রিয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন। মামলার ভয় দেখান। মিডিয়াকে গুনার টাইম তার নেই এমন মন্তব্য করেন। এসব এসিল্যান্ড বলেন, “মিডিয়াতে লিখে যা…. ছিঁড়তে পারেন, করেন গা যান।”
এখন টেলিভিশনের টাঙ্গাইল প্রতিনিধি কাওছার আহম্মেদ বলেন, অতীত অভিজ্ঞতা বলে তথ্য চাওয়া তখনই কর্তৃপক্ষ ক্ষিপ্ত হোন যখন ওইসব প্রকল্পে অনিয়ম থাকে। এর আগেও তার বিরুদ্ধে আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে কেনা বালুকে অবৈধ করার নজির আছে। সেইসাথে এই প্রকল্প নিয়েও সাধারণ মানুষের প্রশ্ন আছে। প্রশ্ন থাকায় তার কাছে জানতে চাওয়া। আর এতেই তিনি গালি দিতে পারেন না। গালি দেয় নোংরা লোক, সন্ত্রাসী, চোর-বাটপারা। সরকারি কর্মচারীর গালি দেয়ার নজির কম। তার অতীত কর্মস্থলে যোগযোগ করে একই চিত্র পেয়েছি। এজন্য মনে হচ্ছে তিনি যথাযথ প্রশিক্ষণ পাননি অথবা তিনি মানসিক ভাবে সুস্থ নন। মানসিকভাবে অসুস্থ লোক কোন ভাবেই মাঠ প্রশাসনের কাজ করার যোগ্যতা রাখে না। এতে সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়। সংক্ষুব্ধ হলে তিনি আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারতেন।
ঊর্ধ্বতনের বক্তব্য –
এবিষয়ে উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) মো. তারিকুল ইসলামের বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয় নি। তবে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, সরকারের কোন কর্মচারী সাধারণ জনগণকে গালি দিতে পারেন না, অসৌজন্যমূলক আচরণ করতে পারেন না। তার এধরনের কথা বলা উচিত হয়নি।