ধনবাড়ী
,
সংবাদ দাতা
টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী পৌর শহর থেকে শুরু করে গ্রামাঞ্চল পর্যন্ত কিশোর গ্যাংয়ের দৌরাত্ম্য আশঙ্কাজনক হারে বেড়েই চলেছে। প্রায়ই সংঘর্ষ, মারধর, চাঁদাবাজি ও ভয়ভীতির ঘটনায় জড়িয়ে পড়ছে ১৩ থেকে ১৭ বছর বয়সী কিশোররা। আইনের যথাযথ প্রয়োগ না থাকায় দিন দিন তারা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। অপরদিকে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিদ্যমান আইন কার্যকরভাবে প্রয়োগ না করা হলে এই কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণে আনা কঠিন হয়ে পড়বে।
সম্প্রতি ধনবাড়ী পৌর শহরের পূর্ব চালাষ এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের হামলার শিকার হয় তিন শিক্ষার্থী। আহতদের মধ্যে রয়েছে ধনবাড়ী আলিম মাদ্রাসার দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী আলভি শাহরিয়ার, আলিফ ও তামজীদ। হামলার পর তাদের ধনবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।
ভুক্তভোগী আলভি শাহরিয়ার জানায়, মাদ্রাসা ছুটির পর বাড়ি ফেরার সময় উপজেলা পরিষদের পাশের মডেল মসজিদের সামনে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা তাকে ঘিরে ধরে স্টিলের পাইপ দিয়ে এলোপাতাড়ি মারধর করে। হামলাকারীদের বয়স ১৩ থেকে ১৬ বছরের মধ্যে বলে দাবি করে সে। এই ঘটনায় আহত শিক্ষার্থী ও তাদের পরিবার অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে।
এ ঘটনায় আলভি শাহরিয়ারের মা মোকছেদা পারভীন লিপি গত ১৩ ডিসেম্বর ধনবাড়ী থানায় তিনজন কিশোরের নাম উল্লেখ করে লিখিত অভিযোগ দেন। তবে অভিযোগের পরও পুলিশ কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি বলে অভিযোগ করেন তিনি।
স্থানীয়দের অভিযোগ, শুধু মারধর নয়—চুরি, ছিনতাই এমনকি শিশু শিক্ষার্থীদের ওপর নির্যাতনের মতো ঘটনাও ঘটছে। রাজনৈতিক সুবিধা ও স্থানীয় আধিপত্য বিস্তারের আড়ালে বিভিন্ন গ্রুপে বিভক্ত হয়ে কিশোররা সংঘর্ষে জড়াচ্ছে। ধনবাড়ী পৌর শহরের ঈদগাহ মাঠ, মহিলা কলেজ সড়ক, খাসপাড়া, মেলার মাঠ, পলাশতলীসহ উপজেলা সদরের অন্তত এক ডজন স্থানে প্রায়ই কিশোর গ্যাংয়ের তৎপরতা দেখা যায়।
ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করে বলেন, দেশীয় অস্ত্র দেখিয়ে দোকানপাটে চাঁদা দাবি করা হচ্ছে। প্রতিবাদ করলে হামলার হুমকি দেওয়া হয়। অথচ অধিকাংশ ঘটনায় মামলা না হওয়ায় অভিযুক্তরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে।
আইন বিশেষজ্ঞদের মতে, তদন্তের দুর্বলতা ও আইনের শিথিল প্রয়োগের সুযোগেই কিশোর গ্যাংয়ের দৌরাত্ম্য বাড়ছে। তারা মাদকের সঙ্গেও জড়িয়ে পড়ছে, যা পরিস্থিতিকে আরও ভয়াবহ করে তুলছে।
টাঙ্গাইল জেলা বার সমিতির সিনিয়র আইনজীবী ও মানবাধিকার কর্মী আতাউর রহমান খান আজাদ বলেন, কিশোর গ্যাং দমনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কঠোর ও দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে। পাশাপাশি অভিভাবক ও সমাজের সর্বস্তরের মানুষকে সচেতন ভূমিকা রাখতে হবে।
এ বিষয়ে ধনবাড়ী থানার ওসি জানান, কিশোর গ্যাংয়ের তৎপরতা পাওয়া গেলে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সহকারী পুলিশ সুপার (মধুপুর সার্কেল) আরিফুল ইসলাম বলেন, কিশোর গ্যাং দমনে পুলিশের পাশাপাশি সামাজিক আন্দোলন অত্যন্ত জরুরি। পরিবার, জনপ্রতিনিধি ও সমাজের সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।











