জাতীয় নাগরিক পার্টিতে (এনসিপি) গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি ও ঢাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুরের যোগদানের ইচ্ছাপ্রকাশ নিয়ে মন্তব্য করেছেন এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসউদ। গতকাল রোববার (২ মার্চ) একটি বেসরকারি টেলিভিশনের টকশোতে তিনি এ ধরনের তথ্য জানান।
আব্দুল হান্নান মাসউদ বলেছেন, ‘নুরুল হক নুরু ভাই নিজেই তার দল বিলুপ্ত করে আমাদের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার আশা ব্যক্ত করেছেন।’ তিনি আরো বলেন, পাশাপাশি যাদের নিয়ে নুরুল হক সংবাদ সম্মেলন করেছেন, তাদের অধিকাংশই আমাদের দলের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন এবং পার্টিতে যোগ দেয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন।
এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়কের এই বক্তব্য কেন্দ্র করে কয়েকটি সংবাদমাধ্যম খবর প্রকাশ করে। তবে গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর নতুন এ রাজনৈতিক দলটিতে যোগ দিচ্ছেন না বলে নিশ্চিত করেছেন তার দলের নেতারা। একইসঙ্গে এমন বক্তব্যের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে গণঅধিকার পরিষদ।
সোমবার (৩ মার্চ) রাতে ফেসবুক স্ট্যাটাসে গণঅধিকার পরিষদের মুখপাত্র ফারুক হাসান বলেন, ‘গণঅধিকার পরিষদকে নিয়ে দুয়েকটি গণমাধ্যমের তথ্য-উপাত্তবিহীন খবর প্রচারের তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। গণঅধিকার পরিষদ দীর্ঘ লড়াই সংগ্রামের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত ও নিবন্ধিত একটি রাজনৈতিক দল। আজকে দলের কার্যক্রম জেলা থেকে উপজেলা ও ইউনিয়ন থেকে ওয়ার্ড পর্যন্ত বিস্তৃত। এই মুহূর্তে তারুণ্যের এক নম্বর রাজনৈতিক দল গণঅধিকার পরিষদ।
সুতরাং গণঅধিকার পরিষদকে নিয়ে বিভ্রান্তিকর সংবাদ প্রচার থেকে বিরত থাকুন। সংবাদ প্রচারের আগে অবশ্যই গণঅধিকার পরিষদের দায়িত্বশীল নেতৃবৃন্দের সাথে কথা বলে নিউজ করার আহ্বান জানাচ্ছি।’
আব্দুল হান্নান মাসউদের এই বক্তব্যের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে গণঅধিকার পরিষদের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুরকে অসত্য তথ্য ও বিভ্রান্তিমূলক অপপ্রচারের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন গণঅধিকার পরিষদ ও এর নেতৃবৃন্দ।
গণঅধিকার পরিষদের নেতৃবৃন্দ বলেন,
গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর এই মুহূর্তে সাংগঠনিক সফরে ইউরোপ অবস্থান করছেন। আর গণঅধিকার পরিষদ ট্রাক প্রতীকে নিবন্ধিত একটি রাজনৈতিক দল। গণঅধিকার পরিষদ শেখ হাসিনার কর্তৃত্ববাদী স্বৈরশাসনের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে গণতন্ত্র ও গণমানুষের অধিকার আদায়ে রাজপথের ধারাবাহিক আন্দোলন সংগ্রাম মধ্য দিয়ে জনআকাঙ্ক্ষা থেকে গড়ে উঠা বাংলাদেশের একমাত্র অর্গানিক দল। শেখ হাসিনার স্বৈরশাসনের বুলেটের সামনে দাঁড়িয়ে দেশে গণতন্ত্র, ভোটাধিকার ও নাগরিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় গণঅধিকার পরিষদ এদেশের মানুষের নিপীড়িত-শোষিত, বঞ্চিত মানুষের অধিকার নিয়ে কাজ করে গেছে। গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর শেখ হাসিনার শত কোটি টাকা ও এমপি-মন্ত্রী হওয়ার সুযোগ প্রত্যাখান করে মানুষের মুক্তির লড়াইয়ে রাজপথকে বেছে নিয়েছে। যে নুরুল হক নুর ও দেশে-বিদেশে গণঅধিকার পরিষদের অসংখ্য নেতাকর্মীকে হয়রানি, লাঞ্চিত ও নির্যাতিত, এমনকি কারাবরণ করতে হয়েছে।
এ দেশের মানুষ জানে শেখ হাসিনার ভয়ঙ্কর ফ্যাসিবাদ মোকাবেলায় প্রচলিত রাজনৈতিক দলগুলোর ক্রমাগত ব্যর্থতার প্রেক্ষাপটে কোটা সংস্কার আন্দোলন, নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের মাধ্যমে উত্থিত বিপ্লবী তরুণ শক্তির আকাঙ্ক্ষা ধারণ করেই গণঅধিকার পরিষদের জন্ম এবং কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সংগঠিত জুলাই গণঅভ্যুত্থানের রুপকার নুরুল হক নুর এই তরুণ শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ রেখে জনআকাঙ্ক্ষার নতুন বাংলাদেশ বির্নিমানে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তার অর্থ এই নয় যে, তিনি তার দল বিলুপ্ত করে অন্য পার্টিতে যোগদান করবেন। আমরা আশ্চর্যজনকভাবে লক্ষ্য করেছি, জনমনে বিভ্রান্তি ছড়াতে ও গণঅধিকার পরিষদের ইমেজ ক্ষুন্নকরণে কেউ কেউ তার এই মহৎ আকাঙ্ক্ষাকে বিকৃত ও অসৎ উদ্দেশ্যে প্রচারের চেষ্টা করছেন। গণঅধিকার পরিষদের নেতৃবৃন্দ, সকলকে এ ধরনের মিথ্যা অপপ্রচার ও প্রোপাগাণ্ডা ছড়ানো থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানায়।