নিজস্ব প্রতিবেদক : মহান মে দিবস পালনে বুধবার (১ মে) টাঙ্গাইলে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি দিয়েছে আওয়ামী লীগের দুইটি পক্ষ।
উভয়পক্ষ টাঙ্গাইল পৌর শহরের শহীদ স্মৃতি পৌর উদ্যানে কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছিলেন।
কিন্তু জেলা প্রশাসন কোনপক্ষকেই পৌর উদ্যানে সমাবেশ করার জন্য অনুমতি দেননি।
পরে এক পক্ষ শিবনাথ উচ্চ বিদ্যালয় এবং অপরপক্ষকে ঈদগাঁ ময়দানে সমাবেশ করার অনুমতি দেয় পুলিশ।
আরো পড়ুন – নিজ আসনের দলীয় অখন্ডতা ধরে রাখতে পারেন নি কৃষিমন্ত্রী
একটি সূত্র জানায়, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও আওয়ামী লীগ নেতা ফারুক আহমেদ হত্যার পর হঠাৎ করে উত্থান ঘটে।
পরবর্তীতে ধীরে ধীরে তৃণমূল আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতাকর্মীদের কাছ থেকে দুরে সরে যেতে থাকে সেই বিশেষ শক্তিটি।
আর নিজেদের বাহামভূক্ত সন্ত্রাসী দ্বারা রাজনীতি নিয়ন্ত্রন করতে থাকে। এর ফলে আওয়ামী লীগের মধ্যে তৈরি হয় দুটি পক্ষ।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচনের সময় আওয়ামী লীগের এই বিভক্তি আরো দৃশ্যমান হয়েছে বলে মন্তব্য করছেন সাধারণ ত্যাগী নেতাকর্মীরা।
তাদের ধারণা সেই বিভক্তির জের ধরেই আওয়ামী লীগের দুই পক্ষ ‘পৃথক দুটি ব্যানারে’ বুধবার (১ মে) মে দিবস পালনের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে।
এক পক্ষ রয়েছে বিগত জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচনে ‘নৌকা’ প্রতীকের সমর্থকরা জেলা শ্রমিক ফেডারেশনের ব্যানারে।
আওয়ামী লীগের অপরপক্ষ টাঙ্গাইল পৌর শ্রমিক ঐক্য পরিষদের ব্যানারে শ্রমিক সমাবেশের ডাক দিয়েছে।
এ নিয়ে উভয়পক্ষের মধ্যে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। আর এ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের আশঙ্কা করা হচ্ছে।
সংঘর্ষ বা যে কোন প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে পুলিশ বটতলা থেকে নিরালা মোড় পর্যন্ত সড়কে যান চলাচল সীমিত করে দিয়েছে পুলিশ।
কে কার পক্ষে থাকছে –
জানা যায়, টাঙ্গাইল জেলা শ্রমিক ফেডারেশনের উদ্যোগে পৌর শহরের শিবনাথ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে সকাল ১০টায় মে দিবস উপলক্ষে শ্রমিক সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছে।
এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক এমপি।
উদ্বোধক হিসেবে উপস্থিত থাকবেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা ফজলুর রহমান খান ফারুক।
আরো পড়ুন – ভূঞাপুরে স্কুলে শিক্ষার্থী অসুস্থ, হাসপাতালে ভর্তি
আরও উপস্থিত থাকবেন জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খান আহমেদ শুভ এমপি, সখীপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অনুপম শাহজাহান জয় এমপি, বিগত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের পরাজিত তিন প্রার্থী ডা. কামরুল ইসলাম খান, এডভোকেট মামুনুর রশীদ মামুন ও মোজহারুল ইসলাম তালুকদার ঠান্ডু।
এছাড়াও জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতৃবৃন্দরা উপস্থিত থাকবেন।
এ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন জেলা শ্রমিক ফেডারেশনের (ভারপ্রাপ্ত) সভাপতি বালা মিয়া।
সঞ্চালনায় থাকবেন জেলা শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান ছোট মনির এমপি।
অপরপক্ষ টাঙ্গাইল পৌর শ্রমিক ঐক্য পরিষদের উদ্যোগে পৌর শহরের কেন্দ্রীয় ঈদগাহ্ মাঠে সকাল ১০টায় শ্রমিক মে দিবস উপলক্ষে সমাবেশের আয়োজন করেছে।
এখানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক এমপি এডভোকেট জোয়াহেরুল ইসলাম জোয়াহের।
উদ্বোধক হিসেবে উপস্থিত থাকবেন জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও স্থানীয় সংসদ সদস্য (স্বতন্ত্র) ছানোয়ার হোসেন।
প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত থাকবেন ঘাটাইল-৩ আসনের এমপি (স্বতন্ত্র) আমানুর রহমান খান রানা।
পৌর শ্রমিক ঐক্য পরিষদের সভাপতি ও টাঙ্গাইল পৌরসভার মেয়র এস এম সিরাজুল হক আলমগীরের সভাপতিত্বে এতে উপস্থিত থাকবেন সাবেক এমপি হাছান ইমাম খান হোসেন হাজারী, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও টাঙ্গাইল সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাহজাহান আনছারী, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মির্জা মঈনুল হোসেন লিন্টু, সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুজ্জামান খান সোহেল, বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক বদিউজ্জামান ফারুক, শ্রম বিষয়ক সম্পাদক ওয়াজির হাসান খান শরীফ হাজারী, পৌর শ্রমিক ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক উদয়লাল গৌড়সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দরা।
সাধারণ নেতাকর্মী ও শ্রমিকদের কথা –
দলীয় এই বিভাজনে বিপাকে পড়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন সাধারণ নেতাকর্মীরা। তারা আরো বলেন, আওয়ামী লীগের এমন বিভক্তি বা কোন গ্রুপ চাই না। আমরা সুষ্ঠু রাজনীতি চাই।
লাভলু মিয়া সহ বেশ কয়েকজন অটোচালক বলেন, মে দিবস উপলক্ষে দুই গ্রুপের পক্ষ থেকে সমাবেশে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে।
কোন পক্ষে যাবো সে নিয়ে চিন্তায় আছি। আমরা গরীব মানুষ কোন ঝামেলা চাই না।
বেশ কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, এর আগে পৌর উদ্যানে দুই গ্রুপের নেতারা সমাবেশ করতে চেয়েছিল।
সমাবেশের আগের রাতে পৌর উদ্যানে ও পৌরসভার সামনে বেশ কয়েকটি ককটেল ফুটেছে।
সেই ভয়ই কাটে নাই, আবার মে দিবসে দুইপক্ষ সমাবেশ ডেকেছে। আমরা শহরবাসী খুবই ভয়ে আছি।
নেতৃবৃন্দের বক্তব্য –
টাঙ্গাইল পৌর শ্রমিক ঐক্য পরিষদের সভাপতি ও পৌরসভার মেয়র এসএম সিরাজুল হক আলমগীর বলেন, সংসদ নির্বাচনের জের ধরে দলের বিভক্তি হয়েছে।
আমাদের সমাবেশে জেলা আওয়ামী লীগের অনেক নেতৃবৃন্দ থাকবেন।
আরো পড়ুন – অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে কোন পক্ষকেই সমাবেশ করতে দেয়নি পুলিশ
জেলা আওয়ামী অনেক নেতৃবৃন্দকে দাওয়াত দেওয়া হয়েছে। কে আসবে কে আসবে না সেটা তাদের ব্যক্তিগত বিষয়।
জেলা শ্রমিক ফেডারেশনের (ভারপ্রাপ্ত) সভাপতি বালা মিয়া বলেন, আমরা শ্রমিক ফেডারেশনের পক্ষে থেকে জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দদের আমাদের অনুষ্ঠানে দাওয়াত দেয়া হয়েছে।
এখানে আওয়ামী লীগের বিভক্তি আছে কি নেই সেটা আমার জানার বিষয় না।
পুলিশের বক্তব্য –
এই বিষয়ে টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার বলেন, জেলা সদর সড়কে কোন গ্রুপের মিছিল প্রবেশ করতে পারবে না।
তিনি বলেন, যারা ঈদগাঁ ময়দানের সমাবেশে যাবেন, তারা বটতলা বাজারের ভিতরের রাস্তা দিয়ে যাবেন।
টাঙ্গাইলবাসীর সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে শহরে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরাও মাঠে থাকবে।