নিজস্ব প্রতিবেদক : সমর্থনকারী ভোটারকে আটকে রেখে মনোনয়ন বাতিলের অভিযোগ তুলেছেন টাঙ্গাইল-২ (গোপালপুর-ভূঞাপুর) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ইউনুস ইসলাম তালুকদার।
এব্যাপারে তিনি গত ১ ডিসেম্বর জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন।
তবে অভিযোগের বিষয়টি খতিয়ে না দেখে দৈবচয়ন পদ্ধতিতে তার মনোনয়ন পত্রটি বাতিল করা হয়েছে বলে অভিযোগ তার।
জানা যায়, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ১৯৭২ এর অনুচ্ছেদ ১২ (৩ ক) দফা ২ এর উপদফা (ক) অনুযায়ী স্বতন্ত্র প্রার্থীকে মনোনয়ন পত্রের সাথে সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকার ১ শতাংশ ভোটারের সমর্থন সম্বলিত স্বাক্ষর যুক্ত তালিকা সংযুক্ত করার বিধান রয়েছে।
টাঙ্গাইল-২ নির্বাচনী আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ৩,৯৫,২৪৮। যার ১ শতাংশ ভোটার ৩৯৫২ এবং তিনি উক্ত তালিকা দাখিল করেছেন।
তার মনোনয়ন পত্রের সাথে সংযুক্ত ভোটারের স্বাক্ষর যুক্ত তালিকা হতে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন সচিবালয় এর স্মারক নং ১১৭০০০০০০৩৪৩৬০১৮২৩৭৩৮, তারিখ- ২০ নভেম্বর ২০২৩ এর পত্র অনুযায়ী দৈবচয়নের ভিত্তিতে ১০ জন ভোটারের স্বাক্ষর সম্বলিত তালিকা সরেজমিনে যাচাই বাছাই করেন।
যাচাই বাছাই ও তদন্তকালে ৩৯৫২ ভোটারের মধ্যে দাখিলকৃত সমর্থনযুক্ত তালিকার ক্রমিক নং যথাক্রমে ২১১৫, ৩২২৩, ৮৭২, ২২৮৬, ১৫৭৪, ৭৫১, ৫৪৩, ২১৫৩, ২৩৮৮ মোট নয় জনের স্বাক্ষরের বিষয়টি সত্যতা পাওয়া গেলেও ৩৪২৬ ক্রমিকে অন্তর্ভূক্ত ভোটার আরফান আলী শেখ, পিতা – খোরশেদ আলী, ভোটার নম্বর- ৯৩১৩১৩৭৯০৬৯৪, গ্রাম – মাদারিয়া ভূঞাপুর টাঙ্গাইলের বাড়িতে বিগত ১ ডিসেম্বর আনুমানিক সকাল সাড়ে ১১টার সময় তদন্তকারী কর্মকর্তাগণ গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে, মো. আরফান আলী শেখ সমর্থন সম্বলিত তালিকায় প্রদত্ত টিপসহি নিজের নয় বলে উল্লেখ করেন।
এমতাবস্থায় গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ১৯৭২ এর অনুচ্ছেদ ১২ (৩ ক) দফা ২ এর উপদফা (ক) এর শর্ত লঙ্ঘিত হওয়ায় স্বতন্ত্র প্রার্থী (প্রার্থীতার পক্ষে সমর্থন যাচাই) বিধিমালা ২০১১ এর ৫ বিধির আলোকে এবং গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ১৯৭২ এর অনুচ্ছেদ ১৪ (৩) (গ) এর বিধান অনুসারে স্বতন্ত্র প্রার্থী ইউনুস ইসলাম তালুকদারের দাখিলকৃত মনোনয়ন পত্রটি বাতিল যোগ্য হওয়ায় বাতিল ঘোষনা করা হলো।
অভিযোগ –
অন্যদিকে, প্রার্থীর সমর্থনকারী ভোটার নিখোঁজের বিষয়টি উল্লেখ করে জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ করেন স্বতন্ত্র প্রার্থী।
ওই ভোটার ভূঞাপুরের মাদারিয়া গ্রামের খোরশেদ আলীর ছেলে।
তিনি সমর্থনকারী তালিকার ৩৪২৬ ক্রমিকে অন্তর্ভূক্ত ভোটার আরফান আলী শেখ।
গত ১ ডিসেম্বর স্বতন্ত্র প্রার্থী ইউনুস ইসলাম তালুকদার লিখিতভাবে এই অভিযোগ করেন।
নিখোঁজ সমর্থককে মনোনয়ন পত্র যাচাই বাছাইয়ের দিন ভূঞাপুরের ফলদা ইউপি চেয়াররম্যান মো. সাইদুল ইসলাম তালুকদার দুদুর ব্যক্তিগত গাড়িতে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে আসা যাওয়ার বিষয়টি প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।
সত্যতা যাচাই ও নির্বাচনের পরিবেশ অবাধ ও সুষ্ঠু রাখতে জেলা প্রশাসনের অধিকতর তদন্ত প্রয়োজন বলে মতামত প্রকাশ করেছেন প্রার্থী ও তার সমর্থকরা।
ভোটার আরফান আলী বক্তব্য –
তবে নিখোঁজ আরফান আলী শেখ বলেন, আমি করো পক্ষে কোথাও কোন স্বাক্ষর দেই নি। তবে নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টি তিনি এড়িয়ে যান।
দুদু চেয়ারম্যানের বক্তব্য –
ফলদা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. সাইদুল ইসলাম তালুকদার দুদু সমর্থক নিখোঁজের বিষয়টি জানেন না বলে জানান।
তিনি বলেন, আরফান আমার প্রতিবেশী ও আমার ইউনিয়নের বাসিন্দা।
সেই হিসেবে আমি তাকে সাথে নিয়ে জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে গিয়েছি।
প্রার্থীর বক্তব্য –
স্বতন্ত্র প্রার্থী ইউনুস ইসলাম তালুকদার বলেন, আমি ১ ডিসেম্বর তারিখ প্রার্থী নিখোঁজের বিষয়টি জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তাকে লিখিতভাবে জানিয়েছি।
অভিযোগের ভিত্তিকে কোন ব্যবস্থা না নিয়ে আমার মনোনয়ন পত্রটি বাতিল করা হয়েছে।
আমি নির্বাচন কমিশনে আবেদন করেছি, আমার বিশ্বাস আমি ন্যায় পাবো।
রিটার্নিং কর্মকর্তার বক্তব্য –
এবিষয়ে জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক মো. কায়ছারুল ইসলাম জানান, অভিযোগ পেয়েছি; এই বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
এসময় তিনি বলেন, যেহেতু একজন ভোটার স্বাক্ষর দেননি বলে দাবি করায় নিয়মানুযায়ী তার মনোনয়ন পত্রটি বাতিল করা হয়েছে।