বিশেষ প্রতিবেদক : টাঙ্গাইল ২৫০ শয্যা জেনারেল সিটিস্ক্যান ছাড়া খুব কম রোগীই ভর্তি হতে পারেন টাঙ্গাইল ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে।
আর প্রতি সিটিস্ক্যান থেকে চিকিৎসক পান এক থেকে দেড় হাজার টাকা কমিশন।
এতে করে জরুরী চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা চরমভাবে দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন প্রতিনিয়তই।
আর সিটিস্ক্যান না করালে ওই রোগীকে ভর্তি হতে হিমশিম খেতে হয়ে। তাই বাধ্য হয়েই ভর্তি ইচ্ছুক রোগীরা সিটিস্ক্যান করেন।
সরেজমিন হাসপাতালে গিয়ে এমন চিত্রই দেখা যায়।
প্রতি ছয় ঘন্টা পর পর (সকাল ৮টা থেকে দুপুর ২টা, দুপুর ২টা থেকে রাত ৮টা এবং রাত ৮টা থেকে পরদিন সকাল ৮টা) জরুরী বিভাগে পরিবর্তিত চিকিৎসক চিকিৎসা দেন।
আর সেখানই চলে সিটিস্ক্যান বানিজ্য।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, টাঙ্গাইল জেলায় পাঁচটি বেসরকারি ক্লিনিকে সিটিস্ক্যান করানো হয়।
এর মধ্যে জেনারেল হাসপাতাল সংলগ্ন সোনিয়া নার্সিং হোম, নিউ ঢাকা ক্লিনিক, পুরাতন বাসস্ট্যান্ডে সেবা ক্লিনিক, শান্তিকুঞ্জ মোড়ে মেডিনোভা ক্লিনিক ও আয়শা মেমোরিয়া হসপিটাল।
জেনারেল হাসপাতলে সিটিস্ক্যান মেশিন না থাকায় এসব ক্লিনিক থেকেই রোগীরা সিটিস্ক্যান করেন।
ভূক্তভোগীদের অভিযোগ –
জাহানারা বেগম (৫০) নামের এক রোগী জানান, তিনি এসেছেন মাথা ব্যথার চিকিৎসা নিতে।
কিন্তু সেখানে জরুরী বিভাগের চিকিৎসক ডা. রিফাত বলেন, আপনি সিটিস্ক্যান করিয়ে নিয়ে আসুন এরপর আপানাকে চিকিৎসা দেওয়া হবে।
এসময় তিনি ওই চিকিৎসকের কাছে জানতে চান সিটিস্ক্যান করতে কত টাকা লাগে।
উত্তরে চিকিৎসক বলেন সাড়ে চার হাজার টাকা হলে সিটিস্ক্যান করতে পারবেন।
আমি আপনার জন্য এক হাজার টাকা ডিসকাউন্ট করে দিলাম।
পরে তিনি হাসপাতাল সংলগ্ন সোনিয়া ক্লিনিকে গিয়ে সাড়ে তিন হাজার টাকায় সিটিস্ক্যান করে নিয়ে এসে হাসপাতালে ভর্তি হন।
কালিহাতী উপজেলার সল্লা এলাকা থেকে আসা জয়তন বেগম নামের আরেক রোগী জানান, তিনি এসেছেন চিকিৎসকদের পরামর্শ নিতে।
এর আগে তিনি এই হাসপাতালেই ভর্তি হয়েছিলেন।
ওইসময় তিনি এসেছিলেন প্যাটের ব্যথার চিকিৎসা করাতে।
কিন্তু ওই সময় জরুরী বিভাগের চিকিৎসক ডা. কামরুজ্জামান তাকে সিটিস্ক্যান ছাড়া ভর্তি করবেন না বলে পরিস্কার জানিয়ে দেন।
পরে তিনি বাধ্য হয়েই সেবা ক্লিনিক থেকে সিটিস্ক্যান করে হাসপাতালে ভর্তি হন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ক্লিনিকের মালিক জানান, টাঙ্গাইলে পাঁচটি ক্লিনিকে সিটিস্ক্যান করানো হয়।
আর প্রতিটি সিটিস্ক্যান করতে রোগীদের কাছ থেকে নেয়া হয় সাড়ে চার হাজার টাকা।
যে চিকিৎসক যে রোগী পাঠাবেন ওই চিকিৎসককে দেড় হাজার টাকা কমিশন দিতে হয় বাধ্যতামূলকভাবে।
আর যদি কোন চিকিৎসক রোগীদের চিকিৎসাপত্রে লিখে দেন এক হাজার টাকা ডিসকাউন্ট।
তাহলে ওই চিকিৎসককে এক হাজার টাকা কমিশন দিতে হয়।
এমনকি মাঝে মাঝে চিকিৎসক ফোন করে বলেন, ‘রোগী পাঠালাম কমিশনের টাকাটা বিকাশে পাঠিয়ে দিয়েন।’
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের ব্যাখ্যা –
টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক (আরএমও) ডা. শরিফুল ইসলাম সজিব জানান, ক্লিনিক মালিকরা সিটিস্ক্যান প্রতিটি সাড়ে চার হাজার টাকা করে নিয়ে থাকেন।
এজন্য তিনি প্রতি চিকিৎসককে নির্দেশ দিয়েছেন যাতে ব্যবস্থাপত্রে সিটিস্ক্যান করানোর জন্য এক হাজার টাকা ডিসকাউন্ট লিখে দেন।
এজন্য চিকিৎসকরা ডিসকাউন্ট লিখে দেন।
তবে হাসপাতালের কোন চিকিৎসক ক্লিনিকে সিটিস্ক্যান করাতে ডিসকাউন্ট দেওয়ার ক্ষমতা রাখেন কিনা জানতে চাইলে, কোন সদুত্তর দিতে পারেননি এই আরএমও। সম্পাদনা – অলক কুমার