জনপ্রশাসনে বড় ধরনের পরিবর্তনের আভাস পাওয়া গেছে। যেসব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিব পদ খালি রয়েছে, প্রশাসনের নিয়মিত কর্মকর্তাদের দিয়ে তা পূরণ করা হবে দু-এক দিনের মধ্যে। আগের সরকারের আমলে গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরে দায়িত্ব পালনকারী কর্মকর্তাদের পর্যায়ক্রমে ওএসডি ও গুরুত্বহীন দপ্তরে পাঠানো হবে। শিগগিরই জেলা প্রশাসক (ডিসি) পদেও বড় ধরনের পরিবর্তন আনা হবে।
বিশেষ করে বিসিএস ২৪তম ব্যাচের কর্মকর্তা ও যারা বিতর্কিত তাদের তুলে এনে নতুন ফিটলিস্ট থেকে ডিসি নিয়োগ দেওয়া হবে। এ ছাড়া প্রজ্ঞাপন জারির ১৫ দিন পার হলেও কোথাও নিয়োগ না পাওয়ায় আওয়ামী আমলে বঞ্চিত কর্মকর্তাদের মধ্যে এক ধরনের হতাশার সৃষ্টি হয়েছে। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের ছয় মাস পূর্ণ হলেও কাঙ্ক্ষিত গতি ফেরেনি প্রশাসনে।
সমন্বয়হীনতার কারণে সচিব, পিএসসির সদস্য, ডিসিসহ প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ দিয়েও বাতিল করা হচ্ছে। বদলি-পদায়নে পরামর্শ দিতে অর্থ উপদেষ্টার নেতৃত্বে গঠন করা হয়েছে উপদেষ্টা কমিটি। যোগ্যতা অর্জনের পরও পদোন্নতি না পাওয়ায় হতাশায় ভুগছেন বিসিএস ২৪ ব্যাচ ও ৩০তম ব্যাচের হাজারো কর্মকর্তা।
দপ্তরবিহীন হাজারো কর্মকর্তা থাকলেও দীর্ঘদিন ধরে এই মুহূর্তে অন্তত ১০টি সচিবের পদ খালি রয়েছে।
প্রশাসনের ‘চেইন অব কমান্ড’ ভেঙে পড়েছে। মাঠ প্রশাসনেও চলছে অস্থিরতা। এতে সেবাবঞ্চিত হচ্ছে সাধারণ মানুষ। জনপ্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে ১০টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ সচিবহীন।
সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়, সেতু বিভাগ, পরিকল্পনা কমিশন, জাতীয় সংসদ সচিবালয়, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, পরিকল্পনা কমিশন, বাস্তবায়ন প্রশিক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে সচিব নেই।
এসব মন্ত্রণালয়ে ভারপ্রাপ্তদের দিয়ে কাজ চালানো হচ্ছে। সচিবের পদ হলো সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সর্বোচ্চ নির্বাহী পদ। তাকে আর্থিক ও শৃঙ্খলাজনিত নানা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত দিতে হয়। কোনো ধরনের ভুলত্রুটি হলে দায় নিতে হয় সচিবকেই। রুটিন-কাজ চালানো গেলেও নীতিনির্ধারণী ও গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত দিতে পারছেন না চলতি দায়িত্বে থাকা সচিবরা। এতে কাজকর্মে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে।
এমন পরিস্থিতিতে আগামী দু-এক দিনের মধ্যে আরো ৯ জন কর্মকর্তাকে সচিব পদে পদোন্নতি দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোখলেস উর রহমান। গতকাল রবিবার সচিবালয়ে তিনি আরো বলেন, ‘আমরা চারটি এসএসবি মিটিংয়ে ১২ জন সচিবকে সিলেক্ট করতে পেরেছি। যারা সচিব হচ্ছেন তারা বেশির ভাগই বঞ্চিত ও যোগ্য। কেউই চুক্তিভিত্তিক না, সবাই চাকরির ভেতর থেকেই সচিব হচ্ছেন।’
কয়েক দিন ধরে আওয়ামী লীগের আমলের বিতর্কিত তিনটি নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করা ডিসিদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার। এরই মধ্যে ৬৫ কর্মকর্তাকে বাধ্যতামূলক অবসর দেওয়া এবং ওএসডি (বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) করা হয়েছে। এ ছাড়া আওয়ামী আমলে মন্ত্রীর পিএসসহ প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরে দায়িত্ব পালন করেছেন এমন কর্মকর্তাদের বাধ্যতামূলক অবসর, ওএসডি বা কম গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরে বদলি করা হবে। দ্রুত গতিতে নতুন ডিসি ফিটলিস্টও তৈরি করার কাজ এগিয়ে চলছে। ডিসি ফিটলিস্ট চূড়ান্ত হলে বিসিএস ২৪তম ব্যাচের ডিসিদের তুলে আনা হতে পারে। সেখানে নতুন কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়া হবে।
সাবেক ডিসি বা অন্য কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে জনপ্রশাসন সচিব মোখলেস উর রহমান বলেন, ‘যাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তাদের কাউকে ওএসডি, কাউকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে। আরেকটি বিষয় হলো, যারা অর্থনৈতিক অপরাধ করেছেন বলে অভিযোগ আছে, সে ব্যাপারে বিভিন্ন সংস্থা এবং নিজস্ব ব্যবস্থায় যদি দেখা যায় ঘটনা সত্যি সত্যি ঘটেছে, শুধু সেই অভিযোগগুলো দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) পাঠানো হবে। এটা সাধারণীকরণ করা হবে না। যাদের নামে অপপ্রচার আছে বা অপরাধের সঙ্গে জড়িত নন বা এ ধরনের কিছুই করেননি, সাময়িকভাবে ওএসডি হয়েছেন, তারা খুব সাধারণ জীবন যাপন করবেন, এতে কোনো সমস্যা নেই। এখানে সরকারের পক্ষপাত নেই। সরকার অত্যন্ত সচেতনভাবে কাজটি করবে, যাতে একজন নিরীহ কর্মকর্তারও যেন কোনো অসম্মান না হয়।’