আমি গরীবের ডাক্তার হতে চাই – সাগর

ডাক্তার সাগর

নিজস্ব প্রতিবেদক : আমার পরিবার হতদরিদ্র, পড়াশোনা খরচ চালাতে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে পরিবারকে।

আমার পরিবারের দূরাবস্থা দেখে স্কুলের শিক্ষকরা আমার বেতন কম নিতেন।

মেডিকেলে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাওয়ার ক্ষেত্রে আমার মা ও বাবার অবদান সবচেয়ে বেশি।

আমার বাবা সিএনজি চালিয়ে আমার পড়াশোনার জোগান দিয়েছেন। সাথে আমার মা রাতদিন পরিশ্রম করেছেন।

গরুর ঘাস কেটেছেন, গরু পালন করেছেন। সেই গরুর দুধ বিক্রি করে, হাঁস-মুরগির ডিম বিক্রি করে আমার পড়াশোনার খরচ চালাতেন।

নবম ও দশম শ্রেনিতে পড়ার সময় আমার মা একটা নতুন কাপড়ও কিনতে পারেনি আমার পড়াশোনার খরচ চালানোর জন্য।

মা ও বাবা আমার জন্য যে পরিশ্রম করেছে সে কথা মনে হলে চোখের পানি ধরে রাখতে পারি না। গরীবের যে কত কষ্ট তা আমি বুঝি, এজন্যই আমি গরীবের ডাক্তার হতে চাই।

কথাগুলো বলেন, সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পাওয়া সাগর মিয়া (১৯)।

খবরবাংলা

সাগর টাঙ্গাইলের বাসাইল উপজেলার কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের আদাজান পশ্চিম পাড়া গ্রামের হতদরিদ্র সিএনজি চালক আব্দুল আউয়াল মিয়া ও গৃহিনী হেনা আক্তারের ছেলে।

সে এবার এমবিবিএস প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় মেধাক্রমে ১৫৮৯ তম হয়ে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে।

সাগর মিয়া শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্র থেকে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করে। এ ভর্তি পরীক্ষার ১০০ নম্বরের মধ্যে সে ৭৭.৫ নম্বর পেয়েছে।

পরিবার, শিক্ষক ও প্রতিবেশীদের কথা –

এ বিষয়ে সাগরের বাব আব্দুল আউয়াল মিয়া ও মা হেনা আক্তার জানান, তাদের ৪ সন্তানের মধ্যে সাগর মিয়া সবার বড়।

ভাঙ্গা টিনের ঘর ছাড়া আর কিছু নেই। এ ঘরেই পরিবারের সবাই থাকি। আমরা দিন আনি দিন খাই।

খবর বাংলা

সাগর আর তিন মেয়ের খরচ জোগাতে হিমশিম খেতে হয়।সিএনজি চালিয়ে ও গরু পালন করে আমাদের সংসার চলতে চায় না; এর মাঝেও কষ্ট করে না খেয়ে সন্তানের পড়ার খরচ চালিয়েছি।

কোনো সময় ভাল একটা পোশাক কিনে দিতে পারিনা। যা দিয়েছি তাতেই সে সন্তুষ্ট থেকেছে; ওহ যেনো পড়াশোনা শেষ করে ডাক্তার হয়ে গরীব ও অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে।

প্রতিবেশী শিপন মিয়া বলেন, তার অদম্য ইচ্ছা শক্তিই তাকে এ সফলতা এনে দিয়েছে। শিক্ষাজীবন জুড়েই সে আর্থিক অভাব অনটনের মধ্যে দিয়ে লেখাপড়া চালিয়ে গেছে। মেধার জোরেই সে তার সব বাঁধা জয় করে মেডিকেলে পড়ার সুযোগ পেয়েছে।

প্রতিবেশী শিক্ষক জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ছোটবেলা থেকেই অত্যন্ত মেধাবী; সে পিএসসি পরীক্ষায় জিপিএ ৫, বাসাইল গোবিন্দ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে জেএসসি পরীক্ষায় জিপিএ ৫ ও ট্যানেলপুলে বৃত্তি এবং এসএসসিতে জিপিএ ৫ ও নলুয়া বিএফ শাহীন কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ ৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়।

মেডিকেলে ভর্তি ও পড়াশোনা চালিয়ে যেতে যে খরচ তা তার পরিবারের পক্ষে বহন করা খুবই কষ্টকর।

কেউ যদি তাকে সহায়তা করে তাহলে তার পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া সহজ হবে; মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পাওয়ায় আমরা এলাকাবাসী গর্বিত। সম্পাদনা – অলক কুমার