একই পরিবারে ৪ প্রতিবন্ধী, গৃহকর্তাও বৃদ্ধ, তবুও ভাগ্যে জোটেনি

ডেস্ক নিউজ : টাঙ্গাইলে কালিহাতি উপজেলার কস্তুরী পাড়া এলাকায় মা’সহ একই পরিবারে ৪ জন বুদ্ধি প্রতিবন্ধী। পরিবারের কর্তা দীনেশ সূত্রধরের বয়স ৭৬ বছর।

এই পরিবারটি অর্ধাহারে অনাহারে মানবেতর জীবন যাপন করলেও তাদের কপালে জোটেনি প্রতিবন্ধী বা বয়স্ক ভাতার কার্ড।

সহায় সম্বলহীন দীনেশ সূত্রধর স্ত্রীসহ তার ৩ সন্তান অপ্রকৃতিস্থ হয়ে যাওয়ার বর্ণনা দিতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন।

ঘটনার বিবরণ –

তার পৈতৃক বাড়ি কালিহাতি উপজেলার কস্তুরী পাড়া গ্রামে। ১৯৭৪ সালে তিনি টাঙ্গাইল সদর উপজেলার করটিয়া এলাকায় বিয়ে করেন।

বিয়ের কিছুদিন যেতেই নিজের পৈর্তৃক বাড়ি বিক্রি করে শশুর বাড়ি করটিয়াতে চলে যান।

কাঠ মিস্ত্রীর কাজ করে দুই ছেলে এক মেয়ে নিয়ে সংসার বেশ ভালো চলছিল। প্রায় ২০ বছর আগে হঠাৎ তার স্ত্রীর টাইফয়েড জ্বর দেখা দেয়।

সাধ্যমতো চিকিৎসা করার পরেও স্ত্রীকে ভালো করতে পারেনি দীনেশ। মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন তার স্ত্রী।

কখনও কখনও স্বাভাবিক থাকলেও বছরের বেশিরভাগ সময়ই অস্বাভাবিক হয়ে থাকেন।

এর ৭/৮ বছর আগে বড় ছেলে দীজেন মাদকে আসক্ত হয়ে পড়েন। এক পর্যায়ে সেই ছেলেও মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন।

পরে ৫ বছর পায়ে শিকল পড়িয়ে রাখার পর শিকল কেটে হঠাৎ হারিয়ে যান দীজেন। এখনও তাকে খুঁজে পাওয়া যায়নি।

এদিকে সেই শোক কাটিয়ে উঠার আগেই আদরের মেয়ে দিপার হঠাৎ টাইফয়েড দেখা দেয়। ঘরবাড়ি বিক্রি করে চিকিৎসা করালেও শেষ রক্ষা হয়নি।

দিপা টাইফয়েড থেকে বেঁচে গেলেও মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন। তার পায়েও বড় ছেলের মতো শিকল পড়িয়ে রাখতে হয়। না হলে উঠতি বয়সী মেয়ে যদি হারিয়ে যায়!

সবশেষে ছোট ছেলে গত এক বছর আগে সড়ক দুর্ঘটনায় পা দুটি ভেঙে যায়। পায়ের চিকিৎসা করতে করতেই সেও ভাই বোন ও মায়ের মতো মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন।

এ অবস্থায় কাঠমিশ্রী দীনেশ সূত্রধর সকলের একই সাথে চিকিৎসা করাতে গিয়ে সর্বশান্ত হয়েছেন।

নিজস্ব সম্পদ বলতে আর কিছুই নেই; এখন অন্যের পরিত্যক্ত ঘরে নামেমাত্র ভাড়ায় প্রতিবন্ধী স্ত্রী ও দুই ছেলেমেয়েসহ বাস করছেন।

এতকিছুর পরেও ৭৬ বছর বয়সী দীনেশের কপালে জোটেনি বয়স্ক ভাতার কার্ড; স্ত্রী, সন্তানরাও পাননি প্রতিবন্ধী ভাতা। কপালে জেটেনি প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর।

এলাকাবাসীর মতামত –

স্থানীয়রা জানান, দীনেশের মতো এমন অভাগা আর মনে হয় কোথাও পাওয়া যাবে না। আল্লাহ তার কপালে মনে হয় সুখ কি জিনিস সেটা লেখেনি।

সারা দেশে প্রধানমন্ত্রী আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরসহ বয়স্কভাতা এবং প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড দিচ্ছে অথচ দীনেশ এতো অসহায় তবুও তার কপালে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর বয়স্ক ভাতা বৃদ্ধ ভাতা কিছুই জোটেনি।

কর্তৃপক্ষের কাছে এই পরিবারের জন্য দ্রুত সকল সরকারি সুযোগ সুবিধার দাবি করেন তারা।

কর্তৃপক্ষের বক্তব্য –

উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা জসিম উদ্দিন জানান, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা এই পরিবারের তালিকা না দেয়নি; যার ফলে তাদের ভাতার আওতায় আনা সম্ভব হয়নি।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধি তালিকা দিলে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।

টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক ড. আতাউল গনি জানিয়েছেন, পরিবারটি এতোটা অসহায় এটি কেউ কখনও জানায়নি।

তবে এই পরিবারের কথা শুনে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরসহ দ্রুত পরিবারটিকে সরকারি সকল প্রকার সুযোগ-সুবিধার আওতায় আনা হবে।

৭৬ বছর বয়সী দীনেশ সূত্রধর গত ৪ বছর ধরে বাড়ি ঘর বিক্রি করে স্ত্রী সন্তানদের চিকিৎসা করিয়ে এখন নিঃস্ব।

সে বুদ্ধি প্রতিবন্ধী স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে কালিহাতি উপজেলার বীর বাসিন্দা ইউনিয়নের কস্তুরী পাড়া এলাকায় বসবাস করছেন।

সূত্র – সময় টিভি; সম্পাদনা – অলক কুমার