টাঙ্গাইলে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) আওতাধীন সড়ক উন্নয়নের কাজ না করেই বিল তুলে নেয়ার অভিযোগে এলজিইডি’র ১ পিডি, ৩ প্রকৌশলী ও দুই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের মালিকের বিরুদ্ধে রোববার দুইটি মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুদক টাঙ্গাইল জেলা কার্যালয়ের উপ-সহকারী পরিচালক বাছেদ আলী বাদি হয়ে এই মামলা দুইটি করেন। এই দুইটি মামলায় একজন পিডি, তিনজন প্রকৌশলী ও দুইজন ঠিকাদারকে আসামী করা হয়েছে। যারা পরষ্পরের যোগসাজশে কাজ না করেই বিল নিয়েছেন ও দিয়েছেন।
প্রথম মামলাটির আসামীরা হলেন- টাঙ্গাইলের ফ্রেন্ডস কন্সট্রাকশনের স্বত্বাধিকারী মো. শহীদুর রহমান খান, টাঙ্গাইল স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রফিকুল ইসলাম (বর্তমানে প্রধান কার্যালয়ে মনিটরিং ও মূল্যায়ন শাখায় কর্মরত), অধিদপ্তরের সাবেক নাগরপুর উপজেলা প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান (বর্তমানে বিদেশে শিক্ষা ছুটি ভোগরত), উপ-সহকারী প্রকৌশলী শহিদুল ইসলাম খান, সাবেক উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোহাম্মদ মাইনুল হক (বর্তমানে ঘাটাইল উপজেলায় কর্মরত)।
দ্বিতীয় মামলার আসামীরা হলেন- ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স সৈয়দ মজিবর রহমানের স্বত্বাধিকারী সৈয়দ মজিবর রহমান। এ মামলায় উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. মাইনুল হক ছাড়া আগের মামলার তিন প্রকৌশলীকে আসামী করা হয়েছে।
মামলার বিবরণীতে যা পাওয়া যায় –
মামলার নথি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ভিন্ন হলেও অভিযুক্ত চার প্রকৌশলীর মধ্যে তিনজন প্রকৌশলী দুইটি দুর্নীতির সাথে যুক্ত ছিলেন। তারা হলেন- সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রফিকুল ইসলাম (বর্তমানে প্রধান কার্যালয়ে মনিটরিং ও মূল্যায়ন শাখায় কর্মরত), অধিদপ্তরের সাবেক নাগরপুর উপজেলা প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান (বর্তমানে বিদেশে শিক্ষা ছুটি ভোগরত) ও উপ-সহকারী প্রকৌশলী শহিদুল ইসলাম খান।
উভয় মামলায় আসামীদের বিরুদ্ধে রাস্তায় কোন নির্মাণ কাজ না করে পরষ্পরের যোগসাজশে ক্ষমতার অপব্যবহার করে সরকারি অর্থ লোপাটের অভিযোগ আনা হয়েছে।মামলার বিবরণে জানা যায়, এলজিইডির “ময়মনসিংহ অঞ্চলের গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের (এমআরআরআইডিপি) আওতায় নাগরপুরের তেবাড়িয়া-দপ্তিয়র সড়ক উন্নয়ন কাজ” পায় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ফ্রেন্ডস কন্সট্রকশন। কিন্তু তারা সড়কটির সাব-বেইজের কাজ কম করে এবং ৭৫ মিটার সড়কের কোন কাজই করেনি। এর মধ্যদিয়ে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ও প্রকৌশলীরা পরষ্পরের যোগসাজশে ৩১ লাখ এক হাজার ৫৯১ টাকার বিল উত্তোলন করে নেয়।
অপর মামলায় একই প্রকল্পের আওতায় নাগরপুরে সিংজোড়া-গয়হাটা সড়ক উন্নয়নের কাজ পায় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স সৈয়দ মজিবর রহমান এন্ড অবনী এন্টারপ্রাইজ (জেভি)। প্রকল্পের আওতায় ১১০০ মিটার দৈর্ঘের সড়কটিতে কার্পেটিং এর কোন কাজ না করেই ২১ লাখ ৫৭ হাজার ৫১০ টাকার বিল উত্তোলন করে নেয়।
উভয় মামমলায় অভিযোগ আনা হয়েছে, আসামীরা প্রতারণামূলকভাবে সড়কের কাজ বাস্তবায়ন দেখিয়ে বিল অনুমোদন করে পরষ্পর যোগসাজশে তুলে নিয়ে আত্মসাৎ করেছেন বলে প্রাথমিক তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে।
দুদকের বক্তব্য –
দুদক কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. নূর আলম জানান, গত ২০ এপ্রিল তার নেতৃত্বে দুই সদস্যের টিম নাগরপুরে এনফোর্সমেন্ট অভিযান পরিচালনা করেন। এসময় প্রকল্পের বাস্তবায়ন দেখানে সড়ক সরেজমিন পরিদর্শন করা হয় এবং নিরপেক্ষ প্রকৌশলী দ্বারা পরিমাপ করে এই দুর্নীতির চিত্র পাওয়া যায়।